“আসিতেছেন” ✒️✒️ শান্তালতা বিশই সাহা
“আসিতেছেন”
শান্তালতা বিশই সাহা
ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই বছর পাঁচেকের শিবু মাকে জড়িয়ে ধরে বললে, মা, আবার দূগ্গাপূজা হবে বল? খুব মজা হবে তাই না মা? মা আর কদ্দিন আছে দূগ্গাপূজার? মা, বল না মা, আর কদ্দিন আছে? বল না মা?
শিবাণী ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল, ক্যান? এতো খোঁজ ক্যান তোর? জানিনি, দুখনা ছ্যেইলার আবার পূজা! জ্বালাসনি তো, কাজে যাওনের সময় হয়ে গেল। শিবু রে বাপ্ আমার, আজ একখ্যান নতুন ঘরে কাম ধরছি, বলেই ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল শিবানী। শিবু তৎক্ষণাৎ খুশীতে গদগদ হয়ে বলে উঠল, মা উয়ারা ইবার আমাকে পূজায় জামা দিবে? শিবু বলতেই থাকে, জানিস মা, ইউথ ক্লাবে’ উয়ারা পূজার সময় খাওন দিবে, মাছ মিষ্টি আরও কত্ত কি.. ছু…, নুতন জামাও দিবে। তুই যাবি মা? বল না মা? এ মা বল না???
শিবাণী বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে উঠে, কামে গেল্যম শিবু, ঘরে কপাট দে, কুত্থাও যাসনি বাপ।
শিবু জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে। প্যাণ্ডেলের সামনে কত্ত বাঁশ নামানো আছে। সবাই ছুটাছুটি করে কাজ করছে, শাবল দিয়ে মাটি কুপোচ্ছে, খুঁটি পুতছে। মনে মনে ভাবে ক্যাইল বুঝি খাওনের দিনটা আগাইয়া আসলো।
শিবাণী স্বামীর চিকিৎসায় সর্বশান্ত হয়েছে, অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি। একমাত্র ছেলে শিবুকে নিয়ে তার অভাবের সংসার। শিবু ছোট হলেও বুঝতে পারে মায়ের কষ্ট। ওর খুব ইচ্ছে করে মা’র কষ্ট দূর করতে, কিন্তু সে তো এখন খুব ছোট। অবস্থাপন্নরা যখন পরিকল্পনা করে কয়েক হাজার টাকা খরচ করে দূরে বেড়াতে যাওয়ার কথা, ভাবছেন দামী পোষাক আর বিলাসিতার কথা। ছোট্ট শিবু তখন ভাবছে পেট ভরে একদিন একটু ভালো খাওয়ার কথা। তাই সে অধীর আগ্রহে দিন গুনছে, কবে দুগ্গা মা আসবেন।