পোকা। ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।
পোকা।
ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।
-” আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
মানুষ আমার পাশে আছে,–
তারা সব না-মানুষ,যারা পাশে নাই।”-
গর্জে উঠলেন জননেতা। অনুগামীরা স্লোগান তুললো-” দাদা,দাদা,দাদা,দাদা,
আমার দাদা,তোমার দাদা,
সবার দাদা সবার দাদা”-
মিছিল চলেছে— নেতা দাঁড়িয়ে হুডখোলা গাড়িতে,স্মিত হাস্যে,
গাড়ির চাকা তৈরী কিসে?
যে চাকা দিতে পারে প্রতিবাদী মুখেদের পিষে!!
মিছিলের দুপাশে দর্শন-প্রার্থী জনতা ছুঁড়ছে ফুল,
যুক্ত করে অভিবাদন জানাচ্ছে প্রসাদ-ভিখারি
ভক্তকুল। তারপর–
নেতার রথ নামল গ্রামের লালমাটির পথে।
পথের দুপাশ থেকে মিছিলের দিকে ঘুমভাঙা নিস্পৃহ চোখে চেয়ে থাকলো–সালকু সোরেন,বিলাস মুর্মূ আসাদুল মোল্লা স্বর্ণ বুরু বেসরা,ধনীরাম মাণ্ডি,খগেন মাহাতে
আরও জনজাতি যত কোল, ভীল,হো,- যাদের প্রাণ গিয়েছে নৃশংস ঘাতকের হাতে।
অভিজাত পদাঘাতে ভেঙে যাওয়া সেই বেদীর তলা থেকে বেরিয়ে এলো সেই শহীদ।
সকলে মিলে তাকিয়ে থাকল মিছিলের দিকে।
অপলকে,নির্নিমিখে।
হঠাৎ সালকুর পচে যাওয়া দেহ থেকে নির্গত পোকারা এগিয়ে গেল মিছিলের দিকে,
অনেকে পদপিষ্ট হলো–হোক,
পোকামাকড়ের জীবনের দাম তো ফিকে!
কিছুক্ষণের মধ্যেই পোকারা ঢুকে গেল সব অনুগামীর মনের মধ্যে ভাইরাসের মতো।মিছিল এগোচ্ছে–
নেতা তাঁর কাঙ্ক্ষিত স্লোগান শুনতে না পেয়ে দেখলেন ঘুরে–একী,
অনুগামী ভক্তবৃন্দের বদলে এ কাদের দেখি!!
খগেন মাহাতো,আসাদুল মোল্লা,সালকু সোরেন, যত দলিত জনজাতি–কোল,ভীল হো,নাগা,মুণ্ডা স্লোগান দিল
–“আমরা তোমার অনুগামী নই,তুমি আমাদের নেতা নও,
—– তফাৎ যাও, তফাৎ যাও।”-
শাল মহুয়ার পাতারা টুপটাপ ঝরে পড়ছে।
দীর্ঘ অনিদ্রার পরে শান্তির ঘুম নামছে
সালকু সোরেনদের চোখে।
রক্তবর্ণ শিমূল পলাশেরা পথ থেকে পথে উড়ে এসে ঢেকে দিতে লাগল,ক্লান্ত আত্মাগুলিকে।
মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে যেন বলতে চাইল– ছিতামনির মতো—-
-“ঘুমারে বাছা শান্তিতে।
চাকাটো ঘুর্যাইন গেইছে বাপ”—
******************************************