কবিতা :- সহযাত্রী কলমে:- আবু ওবাইদুল্লা আনসারী
কবিতা :- সহযাত্রী
কলমে:- আবু ওবাইদুল্লা আনসারী
একাকি পথ হেঁটে যাচ্ছি,
আকাশে উড়তে থাকা ফানুস কিংবা ঘুড়ির মতো নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে,
ভূপতিত হওয়ার আগে উল্কার মতো উদ্দেশ্যহীন ভাবেই আমি ছুটছি,
ক্ষিপ্ত হরিণ যেমন হায়নার দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ছুটে,
অর্কটিক টন পাখি যেমন উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু ছুটতে থাকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে,
সারাজীবন সুমুদ্রের লবণাক্ত জলে থাকা ইলিশ যেমন মিষ্টি জলের আশায় মোহনায় আসে,
নিজের বংশ বৃদ্ধি করার আশায়,
ঠিক তেমনি আমিও ছুটছি,
ক্লান্ত এই একাকী পথে কেউ একবারও থামতে বলেনি ।
না কেউ করেছে অপেক্ষা।
আমার প্রেমিকা,আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে,একবার আমতা আমতা করে বলেছিল,
নদীর মোহনায় অনেক নীলপদ্ম ফুটেছে,
আমার জন্য একটি নিয়ে এসো,
আমি সাঁতার জানিনা, তাই হেঁটেই কয়েকশো মাইল ছুটেছি, সেই নীল পদ্মের খোঁজে,
আমি আমার প্রেমিকার জন্য ছুটছি,
আমার বাবা একদিন ভরা সন্ধেয় আমাকে কাছে ডেকে বলল,
কবিরাজ বলেছে, পাহাড়ের ওপর নাকি কালো ব্যাঙের ছাতা পাওয়া যায়,
বাতের ব্যথায় দুদণ্ড বসতে পারি না, কত ডাক্তার দেখালাম,একবার দেখি সেই কালো ব্যাঙের ছাতা খেয়ে…,
আমি বাবার সেই মহা ওষুধের খোঁজে ছুটছি,
আমার ভাই,আমার বোন,আমার পরিবার সবার জন্য ছিঁড়ে যাওয়া সুতোর ঘুড়ির মতো ছুটছি,
কেউ আমাকে থামায়নি,
কেউ আমাকে কোনোদিন জিজ্ঞেস করেনি আমি ছুটতে পারব কি না?
যখন যার ইচ্ছা সুতো গুটিয়েছে,যখন ইচ্ছা ছেড়েছে।
খ্যাপাটে অন্ধকারে কত রাত কত পথ ছুটে চলেছি,
নির্জন রাস্তায় গার্বেজ ক্যানে ফেলা দেওয়া আবর্জনার মতো একাকী ছুটেছি,
ছুটতে ছুটতে আমি ক্লান্ত, ভীষণ ক্লান্ত ,
ক্লান্ত এই একাকী পথে কেউ একবার থামতে বলেনি,
কেউ করুণ চোখে একবারও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেনি,একটু বিশ্রাম নাও!
বুড়ো ষাঁড়ের মতো লেলিয়ে দিয়েছে সবাই,
শুধু একজন ছাড়া,
একজন আমার পায়ে তেল মালিশ করতে করতে একটু বিশ্রাম নিতে বলেছিল,
একজন আমার পায়ে থাকা ছোটো বড়ো ফস্কা দেখে,নিভৃতে নির্জনে বসে কেঁদেছিল,
একজন আমার ব্যাগে কিছুটা জল এবং শুকনো খাবার রেখে বলেছিল,
দুপুরের রৌদ্রে গাছের তলায় বসে জিরিয়ে নিতে,
বিশ্বাস করো মা,আমি তোমার জন্যই ছুটতে পারছি, অথচ তোমার জন্যই কোনদিন ছুটা হয়ে ওঠেনি,
এই ক্লান্ত পথে তুমি ছাড়া কেউ সহযাত্রী হতে পারল না।