রঙ নিয়ে দু-চার কথা,,,,(অন্তিম পর্ব) কলমে-নিতু চৌধুরী,,
রঙ নিয়ে দু-চার কথা,,,,(অন্তিম পর্ব)
কলমে-নিতু চৌধুরী,,
আসন্ন দোল উৎসবের পরি প্রেক্ষিতে রঙ নিয়ে আমার ভাবনার কেন্দ্র বিন্দুতে রঙ মাখামাখি। গত পর্বে শেষ করেছিলাম সবুজ রঙের ব্যবহার করতে গিয়ে আমাদের মন অবুঝ হবে না সবুজ সেই চিন্তা নিয়ে। সেটা অবশ্যই ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতির কথা বলেছিলাম। আমরা জানি গেরুয়া রঙ ত্যাগের প্রতীক কিন্ত আমরা ঠিক কতোটা স্বার্থ ত্যাগ করতে পারি নিজের মনের ঊর্ধ্বে গিয়ে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে তাহলে পরকীয়ায় মেতে উঠতো?এতো এতো ডিভোর্স আর সংসার ভাঙ্গার গল্প শোনা যেতো।সেই সমস্ত ডিভোর্সী মা বা বাবার কি একবারও সন্তানের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার কথা মনে হয়?ত্যাগ স্বীকার যদি সত্যিই করতে শিখতাম আমরা ,তাহলে বৃদ্ধ বাবা মাকে একাকীত্বে ভুগতে হতো নাকি বৃদ্ধাশ্রম তাদের বাসস্থান হতো? গেরুয়া রঙধারী সন্ন্যাসী নষ্টামি করতে পারতো তার শিষ্যা টির সঙ্গে নাকি জাতপাত কে হাতিয়ার করে নেতা নেত্রীরা তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করে, দেশের পতাকার গেরুয়া রঙটির অবমাননা করতে পারতো।
আসি নীল রঙের কথায়। এখানে আমার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছি পাঠক গন। নীল রঙের আকাশ, নীল সমুদ্রের জল নীল রঙের কৃষ্ণ আমার বড়ো প্রিয় জানেন। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই মানে যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করি তখন থেকেই কারণ স্কুল ড্রেস টা ছিল আকাশী নীল ,পরলাম নীলের প্রেমে। ঠাম্মার মুখে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন শুনে শুনে আর কৃষ্ণের গায়ের ওই নীল রঙ দেখে প্রেমে পরলাম তার।এখন লেখালেখির দৌলতে কিছু সুনাম বা দুর্নাম অর্জন করেছি যেমন ধরুন আমি প্রেমে পরেছি তাই কৃষ্ণ আমার প্রিয় ,প্রিয় হয়েছে নীল রঙ।আর আজকাল তাই প্রেমে ধাক্কা টাক্কা খেয়ে বিরহে এসব সাহিত্য টাহিত্য চর্চা করছি।আচ্ছা পাঠক গন বলুন তো দেখি প্রেমে ধাক্কা খেলেই সাহিত্য সৃষ্টি করা যায়?তাহলে তো দেশে লেখক লেখিকা ঘরে ঘরে জন্ম নিতো। পছন্দ তো নিজের নিজের তা সে রঙ হোক বা জীবনের চলার রাস্তা। তা নিয়ে কথা বলে তো কেবল নিজেদের অক্ষমতাই প্রকাশ করা হয়। প্রেমে পরলে বা কবিতা লিখতে গেলে নীল রঙ কে ই বেছে নিতে হবে?
আসলে রামধনুর যে সাতটি রঙ তা কম বেশি সবারই বোধ হয় প্রিয় কিন্ত কেন জানিনা মানুষ আজকাল সব ছেড়ে কালো রঙের প্রেমে মশগুল। তাই বোধ হয় আমরা নিজের অজান্তে নিজেরাই কালো রঙের প্রেমে পরে মনটাকে কালো করছি।নিজেরাই নিজেদের কে নিকষ কালো অন্ধকারে ডুবিয়ে দিচ্ছি। যেখানে কেবল একাই নিজের সঙ্গী হয়ে নিজের ভালো মন্দের কথা ভাবছি।কখনও সংসার জীবন কখনও সন্তান আবার কখনও আত্মীয় পরিজনদের,বন্ধু বান্ধব দের দূরে সরিয়ে আগুন রঙা পাখি হতে চাইছি। হলুদ, কমলা গোলাপী সব রঙ ভুলে কেবল নিজের চাওয়া -পাওয়ার রঙেই নিজেকে রাঙাতে চাইছি।আর ঠিক সে কারণেই রামধনুর সাত রঙের মাহাত্ম্য হারিয়ে ফেলছি নিজেদের জীবন তদুপরি সমাজ জীবন থেকে।নিজেকে ভালো বাসতে গিয়ে ভালোবাসার রঙ টাই পাল্টে দিচ্ছি হলুদ, লাল, বা অনান্য রঙের পরিবর্তে কালো রঙে।নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বন্ধুত্বের রঙ কে কালিমা লিপ্ত করছি পরকীয়ার রঙে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে ছেয়ে যাচ্ছে বিশ্বাস ঘাতকতার রঙ। সন্তান বাবা মায়ের ভালোবাসার রঙ ভুলে গিয়ে তাদের জীবন রাঙিয়ে দিচ্ছে দুঃখের রঙে। নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মানুষের মনের সঙ্গে খেলে কার্য সিদ্ধি করে তাকে মজা বলে ব্যাখ্যা করে নিজের চরিত্র কালো রঙে রাঙিয়ে তোলার বোকামো করছে কিছু মানুষ যারা ভুলে যাচ্ছে ,উল্টোদিকের মানুষটি যদি ক্ষমার রঙ ভুলে যায় তাহলে উপরওয়ালার বিচারের রঙটাও বেদনা দায়ক কালো হতে পারে।।আজকাল আর দোল উৎসবের আনন্দ সেভাবে মনে দাগ কাটে না। কবির কলম শুধু যে তার ব্যক্তিগত আনন্দের চাওয়া-পাওয়া তা তো নয়।কোথাও না কোথাও তার কলমের দায় বদ্ধতা সমাজের মানুষের সামাজিক দায়িত্ব বোধ জাগানোর কাজেও ব্যবহৃত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তাই পাঠক গণের কাছে একটাই অনুরোধ রাখলাম, জীবনে রামধনুর সাত রঙের ব্যবহার অবশ্যই করুন কিন্ত সে ব্যবহার যেন আর পাঁচ জনের কষ্টের কারণ না হয়।
তাই এখন বসন্ত এলেই মন বলে ওঠে,,,,,,,,,,,,,,,
বসন্ত এসে গেলো
মনে আনন্দের ঢেউ উঠলো,
তবু ও সব কিছু কে ছাপিয়ে
কান্না কেন দুচোখ ভরালো।
জীবন চাইলো অনেক কিছু
তাকালাম ফিরে যখন পিছু।
মনে হলো বসন্ত আসে আসুক
যতোই সে আবার পিছু ডাকুক,
ফুলে ভরা মৌবনে মৌমাছি
থাকে তো থাকুক।
চাই না আমি যেতে সে বনে
বসন্তের আগমন যতোই হোক মনে।
ভুলে যা মন সবকিছু
তাকাস নারে ফিরে পিছু,
এ বসন্ত বড়ো নিষ্ঠুর, অশান্ত
চাই না জানতে তার আদ্যন্ত।
মন তুই তোর মতো ই থাক,
সবকিছু ভুলে নিজেকে আগলে রাখ।
যাস না অন্য কোথাও ভেসে ভেসে
সেকথা মনকে বোঝালাম হেসে হেসে।
মন বলছে তবু ও কেন?আরে শোনো,
বসন্ত এসে গেলো
বঁধুয়া নয়ন মেলো,
ভুলে থাকার সময় যে গেলো
বৃথাই চোখের জল ফেলো,
মিলনের সময় যে হলো
সব ভুলে আঁখি মেলো।
সমাপ্ত