বৌদি….. ✍️তাপস

বৌদি…..

✍️তাপস

রবীন্দ্রনাথের বৌদি। এই শব্দটা উচ্চারণ মাত্র আশি ভাগ বাঙালি একটু মুখ টিপে হাসেন, বলেন জানি তো… পৃথিবীর প্রতিটি জাতের মত বাঙালি কেচ্ছা ভালোবাসে, সে কেচ্ছা সত্যি হোক, ছাই না হোক। অথচ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের নয় ছেলে। যথাক্রমে :-
1) দ্বিজেন্দ্রনাথ
2) সত্যেন্দ্রনাথ
3) হেমেন্দ্রনাথ
4) বীরেন্দ্রনাথ
5) জ্যোতিরিন্দ্রনাথ
6) পূর্ণেন্দ্রনাথ
7) সৌমেন্দ্রনাথ
8) রবীন্দ্রনাথ
9) বুধেন্দ্রনাথ

সুতরাং রবীন্দ্রনাথের জীবনে বৌদির অভাব ছিল না, তাই কাদম্বরী দেবী বা নতুন বৌঠান বাদ দিয়েও রবি ঠাকুরের অনেক বৌদি ছিল। আজকে যে বৌদি নিয়ে আলোচনা তিনি জ্ঞানদানন্দিনী দেবী।
কিন্তু জ্ঞানদানন্দিনী দেবী সম্বন্ধে বলার আগে একটু সেই সময়টাকে ফিরে দেখি নইলে স্বচ্ছ হবে না বিষয়টা । মনুর বিধান আর মুসলিম আব্রু পদ্ধতির সংমিশ্রণে এক অদ্ভুত ঘেরাটোপে মেয়েরা আটকে পড়েছিল। ব্যতিক্রম ছিল না ঠাকুরবাড়িও। অন্দরমহলে কোন নিসম্পর্কিত পুরুষ প্রবেশ করতে পারতেন না। ঘেরাটোপে ঢাকা পালকি করে মেয়েরা বেরতেন বাইরে। ঘেরাটোপের রং দেখে বোঝা যেত কোন বাড়ির পালকি যাচ্ছে। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পালকির ঘেরাটোপের রং ছিল টকটকে লাল আর পাড়টা গাঢ় হলুদ। কিন্তু কোথায় যেতেন মেয়েরা?? কালেভদ্রে পুরুষের অনুমতি পেলে গঙ্গা স্নানে যেতেন আর বেহারারা পালকি শুদ্ধ গঙ্গায় চুবিয়ে নিয়ে আসতো। আর মাঝে মাঝে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যদি কোন উৎসব থাকে তো তখন অনুমতি মিলতো ঘেরা পালকিতে বাইরে যাবার, কিন্তু অধিকাংশ সময়ই রাঁধার পরে খাওয়া ,খাওয়ার পরে রাঁধা – এক নিস্তরঙ্গ,অলস, দিন গত পাপক্ষয় জীবনযাত্রা । মেয়েরা অভ্যস্তও হয়ে পড়েছিলেন সেই কর্মহীন কর্মজগতে।
অপরদিকে মূল কুশারি বা ঠাকুর পরিবার আস্তে আস্তে নানা শরিকে ভাগ হয়ে যেতে শুরু করেছিল। এর মূল প্রতিফলন দেখা যায় সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত একটি মামলায়। মামলাটা হয়েছিল নীলমণি এবং দর্পনারায়ণের সঙ্গে গোবিন্দরামের স্ত্রী রামপ্রিয়ার। ঠাকুর পরিবারের এটাই প্রথম মামলা। সতেরোশো চুরাশি সালের জুন মাস নাগাদ নীলমণি চলে আসেন জোড়াসাঁকোতে, তখন অবশ্য মেছুয়া বাজার বলেই এই অঞ্চল পরিচিত ছিল। দর্পনারায়ণ থেকে গেলেন পাথুরিয়াঘাটার সাবেক বাড়িতেই। আর সম্পত্তির ভাগ নিয়ে রাম প্রিয়া চলে যান
শিবতলার স্বতন্ত্র বাড়িতে। এই নীলমণি ঠাকুর ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সময় থেকেই ঠাকুরবাড়ির উত্থান শুরু হয়।
আমরা আবার ফিরে যাই ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে। মাত্র 13 বয়সের পিতৃহীন হন দ্বারকানাথ ঠাকুর। মা অলকা সুন্দরী শক্ত হতে সংসারের হাল চেপে ধরলেন। উইলে নির্দেশ ছিল- যতদিন না দ্বারকানাথ ঠাকুর বয়স প্রাপ্ত হন, ততদিন মায়ের কাছে তাকে তার ব্যবসার হিসাব দিতে হবে। বোঝা যায়, কত ব্যক্তিত্বময়ী ছিলেন অলকা সুন্দরী। মৃত্যুর সময়ও তিনি তার স্বাধীন চিন্তা ব্যক্ত করেছিলেন – অন্তর্জলী যাত্রাতেও সম্মতি দেননি তিনি। দ্বারকানাথ ঠাকুর তখন বাড়িতে অনুপস্থিত, 18 বছরের পৌত্র দেবেন্দ্রনাথের পক্ষে অন্তর্জলী যাত্রা থামানো সম্ভব হয়নি।…..

(চলবে )
✍️তাপস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *