কাটাপুলের ভূত ✍️ প্রিয়া গাঙ্গুলি __

কাটাপুলের ভূত

✍️ প্রিয়া গাঙ্গুলি
__________________

না , আমি কিন্তু মোটেও বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখছি না। সে বিশ্বাস করা বা না করা সম্পূর্ণআপনাদের ব্যপার। সে সব দায়িত্ব কিন্তু আমার না এই আমি আগে থেকেই বলে দিলাম। যাই হোক এতো কথা না বাড়িয়ে ঘটনা টা  শুরু করি।

আমদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রেল স্টেশন। তার ঠিক নীচ দিয়ে চলে গেছে একটা রাস্তা যেটার তলা দিয়ে রেল লাইনের ও পাড়ের পাড়া  গুলিতে যাওয়া  যায়। সোজা কথায় যাকে বলে  গলাপুল। কিন্তু আমদের এখানে এটির নাম  কাটাপুল। তার ও একটি ব্যখ্যা আছে। ছোট থেকে শুনে আসছি যে ঠিক ঐ জায়গাটা নাকি সুইসাইড পয়েন্ট । তাই বেশি রাত করে কেউ ঐ জায়গা দিয়ে ভুলেও পথ মারায় না ।  ইদানিং নাকি ভূতের উৎপাত বেশি মাত্রায় বেড়ে গেছে। রাত 12 টার  পর যদি ভুল বশত কেউ ঐ রাস্তা  দিয়ে আসে আর তার হাতে যদি কোন খাবার থাকে তবে নাকি তা আকাশে উড়তে থাকে।  লোক মুখে একটা কথা খুব শুনছি যবে থেকে পটলার মা মারা গেছে তার পর থেকে এই উৎপাত নাকি আরও বেড়ে গেছে। পটলাকে জিগেস করলে ও বলেওর মা নাকি মরার আগে ওর থেকে  গলদা চিংড়ি খেতে চেয়েছিল কিন্ত হতদরিদ্র পটলা তা পারেনি খাওয়াতে । ঠিক তার দুই মাস পর থেকেই শুরু হয় এই ভুতুড়ে উৎপাত। শুধু তাই না, তার সাথে  অনেকে শুনেছে আবার ক্ষনা গলায় কে যেন বলে __ ” শিগগিরি সঁব দেঁ নোঁইলে ঘাঁড় মঁটকে তোঁর রঁক্ত খাঁবো”। তো এই অদ্ভুতুড়ে কান্ড কীর্তির জন্য রাত এগারোটার পর আর এই তল্লাটে কেও ঐ দিকে পা বাড়ানোর চেষ্টা মনের ভুলেও করে না। এই ঘটনা শুধু আমদের এলাকা না, বহু দূর অবধি ছড়াতে লাগল।
আমার মনে কিন্তু বরাবর একটা খটকা লেগে থাকতো ,যে ভূতের উদ্দে উদ্দেশ্য যদি খাবার খাওয়াই হয় তবে ঠিক কাটাপোলেই বা লোকজন কে ভয় দেখায় কেন? ! ভূত তো সর্বত্র বিরাজমান হতে পারে। তাহলে শুধু ওখানেই বা বসে থাকে কেন! হয় বাবাজির উদ্দেশ্য ভাইরাল হওয়া আর না হয় এ কোন বদ ছিচকে লোকের কাজ। এই ভেবে ঠিক করে ফেললাম আজ রাত এই এই রহস্যের উদ্দ্ধার করবোই।
রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে ঠিক রাত এগারোটা কুড়ি নাগাদ পোঁটলা করে 2 টো রুটি আর একটু আলুভজা বেঁধে কাটাপোলের দিকে এগোলাম। চারিদিক শুনশান। যেন এই পৃথিবী তে মনুষ্য জাতি বলতে আমি কেবল একা। কুকুর গুলোই বা গেলো কই? তারাও কি….!

কাটাপোলের ভিতর দিয়ে একপাক হেটে গেলাম , কই কিছু তো হলো না। ভূতেরা ঘুমিয়ে পরলো নাকি? না আজ পেটের সমস্যাতে উপোস ডেকেছেন তারা। বেশ জোরে জোরে গান গাইতে গাইতে আর একবার কাটা পোলের তলা দিয়ে যেতেই হাতে ঝোলানো খাবারের ব্যাগটা তে টান পরলো। কেও ওপরের দিকে টানছে সেটাকে প্রাণপনে । সে যেন যমে মানুষের টানাটানি শুরু হলো। একটা সময় পলিথিনের ব্যাগ ছিড়ে গিয়ে রুটি পরে গেল মাটিতে। আর তার সাথে জড়িয়ে একটা সরু সাদা লাইলনের সুতো। কি ব্যাপার হল।! আমি রেগে গিয়ে জোড় গলায় বললাম।
“নাম শিগগিরি নেবে আয় না হলে আমি কিন্তু চিতকার করে লোক জড়ো করবো, পুলিশ ডাকব। বেশ বুঝে গেছি তুই বেটা কোনো ছিচকে চোর।”
যেই না বলা ওমনি সে খনা গলায় কেঁদে উঠে বলল __” দাদা বাবু গো, আমকে পুলিশের হাতে দিও না গো, ক্ষমা করি দাও, আর কক্ষনো করবো না।” গলাটা ভারি চেনা লাগল।
আমি বললাম__”এই তুই কে রে? সামনে আয় , তবে ছেড়ে দেবো।”
ঝুপ করে ওপর থেকে নেবে এলো। রোগা শীর্ণকায় চেহারার একটা মানুষ, চোখ গুলো গর্তে ঢোকা, অবিকল কঙ্কাল।
” একি পটলা তুই! তবে তুই ই হলি কাটাপোলের ভূত”? কিন্তু কেন?

পটলা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল__” দাদা বাবু মা বেঁচে থাকতে পাঁচ বাড়ি কাজ করতো আর আমি রিক্সা চালাতাম। কিন্তু এই মহামারি তে আমার মা টা কে টেনে নিল। সর্বশান্ত করে চিকিৎসা করেও মা টা রে বাঁচতে পারলাম না গো দাদা বাবু। রিক্সা টা ও বেচে দিলুম কম দামে। পেটের জ্বালা যে বড় জ্বালা গো দাদাবাবু। কে দেবে এই মূর্খকে কাজ। তাই পেট চালাতে রাতের ট্রেন যখন দু ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তখন আমি রেল লাইনের ওপর বসে বঁড়শি দিয়ে চুরি করি। আসতে আসতে দেখলাম লোকে ভয় পাচ্ছে, তো আমি আমার মরা মা এর ভূতের গল্প বানিয়ে নিলাম গো “।
শুনে ভীষণ খারাপ লাগল। আবার রাগ ও ধরল। তবে পটলা
এখন আর চুরি করে না। ওকে আমি আমার ছাপাখানায় ঝাঁট মোছার কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছি। মাসে হাজার টাকা বেতন সঙ্গে দুপুরের খাওয়া। আমি অবশ্য পটলা ভূতের রহস্য কাউ কে ফাঁস করি নি। এই যা আপনাদের বললাম। তবে কাটাপোলের তলা দিয়ে গেলে একটু সাবধানেই যাবেন। বলা যায় না পটলার রূপ ধরে ব্রম্ভদত্যি ও আসতে পারে। পাশে একটা আশি বছর পুরনো বেল গাছ আছে কিনা।

✍️ প্রিয়া গাঙ্গুলি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *