সম্পর্কের নিলাম —– প্রিয়া গাঙ্গুলি
সম্পর্কের নিলাম
✍️ প্রিয়া গাঙ্গুলি
_______
এক এক করে নিলাম হচ্ছে পড়ন্ত জমিদার বাড়ির আসবাব । একমাত্র ছেলে জয় বিদেশে কর্মরত। তাই এ বাড়ির পাঠ চুকিয়ে মা কে নিয়ে বিদেশ পড়ি দেবে সে।
গ্রামোফোন খানা চালিয়ে চল্লিশ বছর আগে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো মনে করে মুখার্জি গিন্নির দু চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। কত ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে সে এ বাড়িতে এসেছিলো। এই বাড়ির প্রতিটা ইটের গাঁথনি, প্রতিটা থাম, চিলেকোঠার ওই ছাদ যেনো তার আত্মস্বজন। স্বামী মারা গেছেন আজ প্রায় বছর দশেক হলো। এই বাড়িটাই যেনো তার একাকীত্বের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যে দুগ্গা দালান এক সময়ে সেজে উঠতো শঙ্খ ধ্বনি আর ঢাকের আওয়াজে , সেই দুগ্গা দালানে আজ নিলামের স্বর ঊর্ধ্ব মুখী। ২০ হাজার , ২০ হাজার ৩০০টাকা, ৩০ হাজার , ৩০হাজার ৫০০ টাকা। পড়ন্ত রোদে উড়ে আসা কিছু শুকনো পাতা তাকে যেনো বার্ধক্যের বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। খড়খড়ি জানলাটার পাশে রাখা তার স্বামীর এই ইজি চেয়ারটাও আজ যেন তাকে বেশি জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বুকের পাঁজরে দমিয়ে রাখা চাপা কান্নাটা আজ যেনো প্লাবিত হতে চাইছে। মাতৃত্বে তবে কি কোথাও ফাঁকি রয়ে গিয়েছিল? নাকি জমিদারিয়ানার ঔদ্ধত্যের গন্ডিটা ছাড়িয়ে ফেলেছিল সে? পাশে তেপায়া টুল টার ওপর করুন সুরে বেজে চলেছে গ্রামোফোন টা।
পিছন থেকে “ঠাম্মা ” ডাকে চমকে দেখল তার তেরো বছরের নাতি, হাতে একটা কাঠের বাক্স নিয়ে দাড়িয়ে । “আরে এটা তো বিবাহ বার্ষিকীতে আমাকে তোর দাদুর দেওয়া শেষ উপহার _সেই “সেগুন কাঠের বাক্সটা”। তুই কথা থেকে পেলি বাবা! ”
“এটাও নিলাম হচ্ছিল ঠাম্মা, আমি ওপরে তোমার নাম খোদাই করা দেখে লুকিয়ে নিয়ে এলাম তোমার জন্য। এটা তুমি লুকিয়ে রেখে দাও ঠাম্মা, না হলে এটাও নিয়ে নেবে ওরা” ।
আর থাকতে না পেরে নাতিকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো বৃদ্ধা মুখার্জি গিন্নি।
কথিত আছে _ আসলের থেকে সুদ অনেক বেশি মিষ্টি হয় , আজ বুঝি সত্যি সেটা প্রমাণ হলো।
✍️ প্রিয়া গাঙ্গুলি