চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জ্জন – বাবিয়া নন্দী

উপন্যাসের নাম – চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জ্জন
লেখিকার নাম – বাবিয়া নন্দী
পর্ব-৪(চতুর্থ)

পিতার নিকট সম্মতি পেয়ে সত্য ভীষণ আনন্দিত হয়ে তার পিতাকে আস্বস্ত করলো এবং ঠিক তার পরের দিনই বাড়ির বড়দের আশীর্বাদ নিয়ে বেনারসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।সাথে নিল তার সেই ছোট্ট বেলা থেকে সত্যর সব বিষয়ে যে উৎসাহ প্রদান করে এসেছে,সেই প্রিয় বন্ধু রন্জ্ঞন বোস কে।যখন দুজনে মিলে বেনারস পৌঁছালো তখন বেলা এগারোটা হবে প্রায়।সারাদিনের পরিশ্রমে দুজনেই পরিশ্রান্ত অবসন্ন।তাই তারা মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে স্নান করে খানিক ঘুমিয়ে নিলো।আর দুজনেই ঠিক করলো আজ রাতেই ওই বাঈজি পল্লী তে গিয়ে সব দেখে শুনে এসে অতি সন্তর্পণে কাজ সারবে।মাটি নেওয়ার কাজ।কিন্তু আমরা যা ভাবি তা সব সময় হয় না।কিছু ঘটনা নিয়তির উপরেই ছেড়ে দিতে হয়।বিকেলে যখন সত্য নিদ্রা থেকে উঠলো তখন রন্জ্ঞন কে টেনে তুলতে গিয়ে দ্যাখে বেচারার খুব জ্বর।তাই তারা যার বাড়িতে উঠেছিলো,সেই আরেক বন্ধু নীতেশ কে সব বুঝিয়ে বললো যে ওর একটু কাজ আছে।ওকে যেতেই হবে।নীতেশ যেন রন্জ্ঞন কে একটু সামলে রাখে।আর বাড়িতে যদি ডক্টরের দেওয়া কোনো জ্বরের বড়ি থাকে,তাহলে তাকে যেন সময় মতোন খাইয়ে দেয়।সত্য মনে মনে ভাবলো এ তো আরেক জ্বালা এসে উপস্থিত হল।একবার ভাবলো সে,তার বন্ধু রন্জ্ঞন কে ছেড়ে একা যাওয়াটা কি ঠিক হবে?ওদিকে আবার সত্যর ও তো বাড়ি ফেরার তাড়া আছে,আর নীতেশ নিপাট ভদ্র মানুষ তাই বলে বন্ধুর বাড়িতেই বা ক’দিন থাকা যায়?সত্যর সম্মুখে তখন উভয় শঙ্কট দ্যাখা দিলো।কিন্তু এতো কিছু ভেবে চিন্তে কোনো কুলকিনারা না পেয়ে সে ঠিক করলো,এতো ভেবে লাভ নেই,কাজটা যখন করতেই হবে তখন আজই হোক।সে একাই গেল পথচারীদের জিজ্ঞেস করে করে সঠিক স্থানে অর্থাৎ সেই মহল্লায়।কিছু মানুষ অবাক বিস্ময়ে এমন ভাবে তার প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ করছিলো যেন সে কোনো জেল ফেরত আসামী।সত্যর অস্বস্তি ও লজ্জা দুটোই লাগছিলো।তবুও সে সব কে পাত্তা না দিয়েই এগিয়ে চললো তার উদ্দেশ্যের পথে।পাড়ার কাছে আসতেই বুঝতে বাকি রইলো না অন্য সব স্থানের চেয়ে এই স্থানের আকাশপাতাল বিভেদ।রাত্রিকালে এসব স্থান এতোই কৃত্রিমতার সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে,যেন নববধূর বাসর রাত উদযাপিত হবে।তাই না বুঝে,না চিনে কোনোই উপায় থাকে না।যে সময়ে সত্য সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে বোধ করি,সেখানে সবেমাত্র “ম্যাহেফিল” শেষ হয়েছে।পান ওয়ালা রা দোকান খুলে বসে বাবুদের জন্য পান সাজছে।কতোকগুলি মেয়েমানুষ তাদের নাচ দেখবার জন্য রঙ্গ করছে ও টাকা পয়সা নিয়ে নিদারুন দরাদরি চলছে।কিংবা কোনো কোনো বাবু এতোই মদ্য পান করেছে যে তাদের নেশা একেবারেই কাটেনি।সত্য ঢুকেছে তাদের এলাকায়,চুপি চুপি,অনেক টা চোরের মতোন যেন।হঠাৎ কিছু নারীকণ্ঠের খিল খিল হাসি বাতাসে ভেসে ভেসে আসছে।কি উগ্রতা আর মত্ততা সেই হাসির মধ্যে। যেন হাসির ইচ্ছে না থাকলেও তারা জোর করে অট্টহাস্যে ফেটে পড়ছে।হয়তো বা ঈশ্বরকে জানান দিচ্ছে তাদের জীবনের পরিস্থিতি।

ক্রমশ (চলবে)। বাবিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *