ফেরা —- মধুমিতা রায়
#ষষ্ঠী
পুজোর গল্প (২)
ফেরা
মধুমিতা রায়
পুজো মানেই ফেরা নিজের ঘরে,নিজের মানুষের কাছে।আজ জয়ন্ত ফিরছে বাড়ি।বারাসাত থেকে ট্রেনে হাসনাবাদ।হাসনাবাদ থেকে বাসে লেবুখালি।আগে নদী পার হয়ে বাসে উঠতে হত।এখন ব্রীজ হয়েছে তাই বাসে উঠে একবারে পৌঁছয় লেবুখালি।
তারপর পার হতে হয় নদী।নদী পেরিয়ে আবার বাস।জয়ন্তর গ্রামের নাম পারঘুমটি।দক্ষিন ২৪ পরগণার প্রত্যন্ত গ্রাম। নদী আর জঙ্গলের গন্ধমাখা। বাস থেকে নেমেও হাঁটতে হয় কিছুক্ষণ।তারপর বাড়ির উঠোন।মায়ের উজ্জ্বল মুখ।
মাঠ ভরা ধান,পুকুর ভরা মাছ,নোনা বাতাস… শৈশব কৈশোর যৌবনের প্রথম দিনগুলো, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া সব স্মৃতিরা একত্রিত হয় বারোয়ারী মন্ডপে।
সেই পুজোয় আলোর জৌলুস নেই,থিম নেই,সেলিব্রিটির উদ্বোধন নেই,চোখ ধাঁধানো সাজের বাহারও নেই।আছে এক ভরাট মুখের টানা চোখের মাতৃমূর্তি,ঢাকির নেচে নেচে ঢাক বাজানো,আলতাপরা পায়ের পুজোর জোগাড়ের ছোটাছুটি আর…
আর ঘরে ফেরা ছেলের দলের আড্ডা।কত কত জমানো কথা ভাগ করে নেওয়া। কাপ কাপ চা আর সিগারেটে টান।
কোন এক শহরে একচিলতে ঘরে রোজ নিজের হাতে রান্না করা জীবন পালায় আলপথ ধরে, জাল ফেলে নদীতে…
মায়ের বেড়ে দেওয়া থালার সামনে বসে কেন জানি চোখে জল আসে।রাতে মাটির দাওয়ায় জ্যোৎস্না আসে।স্বপ্নে কত নদী!
জয়ন্তকে আমি ভাই ডাকি।কেউ ছিলনা ফোঁটা দেওয়ার, রাখি পরানোর।ও আমার সেই অপূর্ণতা দূর করেছে।আজ ও বাড়ি ফিরল।নিজের গাঁয়ে, মায়ের কাছে।
মধুমিতা রায়