বিষয় – দুর্গাপূজার সেকাল একাল কলমে – মৌমিতা পাল
বিষয় – দুর্গাপূজার সেকাল একাল
কলমে – মৌমিতা পাল
মহালয়া এসে গেছে মানেই দুর্গাপূজা শুরু।এটাই মনে হয় আমাদের মানে বাঙালিদের।বাঙালি মননে দুর্গাপূজা মানে বড়ো এক উৎসব।অনেক দিন আগে থেকেই যার সূচনা হয় এবং অনেক দিন পর পর্যন্ত যার রেশ থাকে।
আমাদের সময় মানে আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে এবং বর্তমান সময় দুর্গাপূজা বহিরঙ্গে বেশ কিছু বদল হলেও মননে কিন্তু এক আছে।আজো এই উৎসব ঘিরে আমাদের আয়োজনের সমারোহ।
এখন অনেক কিছু বিশাল আকারে হয়েছে।কিন্তু আগের দিন গুলোও কিছু কম ভালো ছিলনা। তখন এক অন্য রকম ভাললাগা বোধ ছিল।
ভোর চারটে বাজলেই রেডিওতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কন্ঠ।স্তোত্রপাঠ ।এক অন্য রকম ভালো লাগায় মন আচ্ছন্ন করে রাখতো।আগের দিন রাতে পিকনিক করে ঘুমাতে যেতে বেশ রাত হতো।অত সকালে ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা হতোনা প্রথম দিকে।তারপর রেডিওতে সেই স্তোত্রপাঠ আর বাজির আওয়াজ। ঘুম ঠিক ভেঙে যেত।
আমাদের তখন থেকেই পূজা শুরু।শিউলির ভোরে একটু শীতের আমেজ।অন্য রকম সুর আকাশে বাতাসে।ভালো লাগা বোধে তখন আমরা হারিয়ে যেতাম।
আমাদের সময় এত জৌলুশ ছিল না পূজার।জামাকাপড়ের এত বাহার ছিল না।সবার অবস্থা সমান ছিলনা।হয়তো অনেকের একটা জামা হতো।কিন্তু তাতেই খুশির রেশ।একটা পূজা মন্ডপে সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ।একসাথে সবাই অঞ্জলী।গোটা পাড়ার মানুষ একসাথে।বাইরে যারা থাকে বা যে দিদিদের বিয়ে হয়ে গেছে তাদের দেখা মিলতো পূজা মন্ডপে।সবাই মিলে হৈ হৈ করে দিন কেটে যেত।
আজকের দিন গুলো অনেক কিছু পরিবর্তন দেখি।এখন পূজা মন্ডপ অনেক।তাই সবাই একসাথে হয়না।মানুষের হাতে এখন পয়সা আছে।কেনাকাটার বাহার আছে।শুধু মন নেই।বর্তমান প্রজন্ম অল্পে সন্তুষ্ট নয়।প্রথম থেকেই বেশি পেয়ে গেছে। তাই কোন কিছুর মূল্য দিতে শেখেনি।
হাতে মোবাইল ফোন।তারা এখন সোস্যাল মিডিয়ার জগতে বিরাজ করে।নিজেদের সেলফি নিয়ে ব্যস্ত।অল্প কিছু বন্ধু আর নিজের জগত এই তাদের পৃথিবী।তারা আশেপাশের লোকজনকে চেনেনা।চিনলেও কথাবার্তায় অতটা সময় দিতে নারাজ।
তারা এখন নিজেদের মতো আনন্দ করে।তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।তারা এভাবেই মানুষ।তাদের এটাই জগত।পরিবর্তন তাদের জন্য উপযোগী।আমাদের সময় আমরা আমাদের মতো ছিলাম।এখনকার প্রজন্ম তাদের মতো।
মোবাইল কালচার সোসাল মিডিয়া সবকিছু খারাপনা।তবে আন্তরিকতা কম।আমরা তাই সেকাল একাল মেলাতে পারিনা।ব্যবধান কিছু এসে যায়।
তবুও মনন সবক্ষেত্রেই এক।আনন্দ উপভোগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।সবসময় একথা প্রযোজ্য।তাই একাল সেকাল সবক্ষেত্রেই উৎসব প্রাধান্য।ভাললাগার বোধের প্রাধান্য।বাকীসব বহিঃপ্রকাশ।
অন্তরে সবাই শুধু ভালো থাকতে চায়।ভালো থাকুন সবাই।দুর্গাপূজা ভালো কাটুক সবার।আগের বছর করোনা কালের জন্য অনেক অসুবিধা হয়েছে আমাদের।আমরা আশা করবো খুব তাড়াতাড়ি এই করোনাকাল কেটে যাবে।আমরা সবাই নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে উৎসবে যোগ দেবো।আমরা আশা রাখতেই পারি।শুভ হোক সবার।