কাঁচের চুড়ি —- সুপর্ণা হোড়।
একটি ছোট গল্প।
কাঁচের চুড়ি।
সুপর্ণা হোড়।
31/5/21
নিঝুম রাতে টুক করে একটি ম্যাসেজ,
নেটটা অন ছিল।
অচেনা নম্বরে কি রে কেমন আছিস?
উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করলাম না।
হামেশাই কিছু বেনামী ম্যাসেজ ঢুকে যায়।
কিছুক্ষণ পর চিনতে পারলি না?
ফোন টা রেখে পাশ ফিরে শুয়ে রইলাম।
টুকটুক করে ম্যাসেজের ওপর ম্যাসেজ।
একটু রেগে গিয়েই লিখলাম কে?
ওপাশ থেকে ফের বলতো কে আমি?
ভনিতা না করে নামটা বলো?
আমি সত্যজিৎ।
থরথর করে কেঁপে উঠলাম আমি।
এতো বছর পর তুমি?
হ্যাঁ আমি।
তুমি বেঁচে আছো!
এখনো আছিরে।
তবে আমি যে শুনেছি তুমি —–
মরে গেছি? হাহাহাহাহা,
আমি স্তব্ধ তারপর বললাম তবে
এতদিনে আমায় মনে পড়লো?
ওপাশ থেকে অনেক বড় ম্যাসেজ -,
কি করে ভুলি বলতো তোকে,
তুই আমার কিশোর বেলার প্রেম।
একবেলা তোকে না দেখে থাকতে পারতাম কি?
অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেম তোকে নিয়ে।
তুইও মন থেকে চেয়ছিলি আমায়।
হঠাৎ একটি ঝড় সব শেষ করে চলে গেল।
এপাশ থেকে আমি,
তুমি তো নিজেই সেই ঝড়ে ঢুকেছিলে।
একটি বার ভাবো নি আমার কথা।
ওপাশ থেকে, নারে সব মিথ্যে,
যা শুনেছিস সব মিথ্যে ছিল।
একটি পরিকল্পনা।
আমি রেগে গিয়ে থাক__,
আমি শুনবো না,
অনেক সুখী আমি আমার স্বামী সন্তান নিয়ে।
না না তোকে শুনতেই হবে। আমার শেষ যাত্রায় যাবার আগে তোকে সব শুনতে হবে।
নাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না।
অনেক কষ্টে তোর নাম্বারটা জোগাড় করেছি।
ফোন করতে সাহস পেলাম না তাই ম্যাসেজ।
আমি শেষ যাত্রা মানে?
Now I am last stage of cancer.
বিছানায় বসে পড়লাম, বললাম what?
হাহাহাহাহা তুইতো জানতিস আমি মরে গেছি তবে?
না সত্যজিৎদা তুমি বলো, আমি সব শুনবো।
শোন তাহলে;
আমি যখন হন্যে হয়ে একটি চাকরি খুঁজছি,
ঠিক তখন পরিচয় এক মস্ত বড় নামকরা দাদার সাথে। খুব কৌশলে উনি আমাকে ওনার চক্করে একেবারে অনুগত করে ফেললো। আমি বুঝতেও পারলাম না, আমি গভীর জলের মাছের কাছে ধরা পড়েছি। সে আমাকে রাতারাতি পাঠিয়ে দিল পাঞ্জাবের এক দুষ্টু চক্রে। যেখানে তার ছিল মস্ত দু নাম্বারি ব্যবসা। বেকার ছেলে রোজগারের আশায় ডুবে গেলাম তার ফাঁদে। যেখানে খুন করাটাও ছিল বাঁহাতের খেল। তুই বিশ্বাস কর আমি অনেক চেষ্টা করেছি ঐ ফাঁদ থেকে বেরোতে। পারি নি একদম পারি নি। তুই তো জানিস আমি একটি পোকা মারতেও পারি না। কি করে মারবো মানুষ?
তবে আমরা যে শুনেছি —?
হ্যাঁ যা শুনেছিস সব মিথ্যে। কিন্তু ঐ মিথ্যে অপবাদেই আমার সারাটা জীবন কেটে গেল লোহার গারদে।
মন আর মানলো না, মধ্যরাতেই ফোনে কল দিয়ে ফেললাম।
ত্রিশ বছর বাদে গলা দিয়ে হ্যালোটাও বলতে পারছি না।
অঝোরে দুজনে শুধু কেঁদেই গেলাম।
কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে বললো;
ভেবেছিলাম তোর সাথে যে অন্যায় করেছি আমি,
তোর সামনে গিয়ে ক্ষমা চাইবো।
কথাটি আমি রাখতে পারি নি। তাই ওপারে যাবার আগে তোর সেই ইচ্ছে টা রাখতে চাই।
আমি সেই ইচ্ছে টা মানে?
তুই একদিন আবদার করে আমার কাছে কাঁচের চুড়ি পড়তে চেয়েছিলি। আমি বলেছিলাম তোকে কিছুদিন পরে কিনে দেব।
কিন্তু তারপর সব কেমন তছনছ হয়ে গেল।
আমি কাঁদতে কাঁদতে তোমার মনে আছে সত্যজিৎদা?
হ্যাঁরে আমার সব মনে আছে। তোর সাথে কাটানো সময়, সব সব।ঐটুকু সুখের স্মৃতি নিয়ে আমি আমার জীবনের এত বছরের জীবন টা কাটিয়ে দিলাম অন্ধকার চিলে কোঠায়।
সত্যজিৎদা আমাকে মাফ করো তুমি। আমি তো তোমার সব স্মৃতি ভুলে সুন্দর সংসার করছি।
আরে পাগলি, তোর কোনো দোষ নেই রে। আমি খুব খুশীরে আজ তোর সুখের কথা শুনে। তুই যে আমার বড় প্রিয়। তুই আরো সুখী হ। তোর আগামী দিন রঙে রঙে ভরে উঠুক। তোর ঠিকানায় শুধু এক বাক্স কাঁচের চুড়ি যাবে তুই পড়িস। ভালো থাকিস বলে ফোন টা কেটে দিল।
রাতে আর ঘুমোতে পারলাম না।
পরদিন ভোরে উঠে সংসারের সব কাজ করতে লাগলাম আর কানে সত্যজিৎদার কথাগুলো বাজতে লাগলো।
হঠাৎ কলিং বেল বাজলো। বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম কুরিয়ার ম্যান।
চুড়ির বাক্স।
ঘরে এলাম চুড়ির বাক্স নিয়ে। খুলে দেখলাম এক বাক্স লাল চুড়ি। লাল আমার খুব প্রিয় সেটি জানতো সত্যজিৎদা। এখন আমার অনেক সোনার চুড়ি। সব খুলে সেই কাঁচের চুড়িগুলো একটি একটি করে পড়লাম।মন ভরে দুহাত সামনে নিয়ে দেখতে লাগলাম।
তারপর ভাবলাম তবে এবার জানিয়ে দি সত্যজিৎদাকে তোমার চুড়ি আমার কাছে চলে এসেছে।
ফোনটা তুলে ফোনে রিঙ দিলাম।
ফোনটা বেজেই গেল একবার, দুবার, অনেক বার____
আওয়াজ এলো না কোনো
একদিন, দুদিন, অনেক দিন ___
তবে কি সত্যজিৎদা____!!!