“মা ও মেয়ের ” কথোপকথন —মৌসুমী মিত্র
(( বাঙালি ঘরে দুর্গাকে ঘরের মেয়ে বলে অনেক কবিতা গান রচনা করা হয়েছে ।
আমি ও একটু চেষ্টা করলাম “মা ও মেয়ের ” কথোপকথন (অতি কথ্য ভাষায় ) লিখতে ।।))
//মৌসুমী মিত্র//
জয় মা ,ক্ষমা করে দিও ।।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং
মেনকা :— হ্যালো ,কে ? দুগ্গি না কি রে ?
দূর্গা:— হ , তুমি ফোন দিছিলা । আমি শুইনতে পাই নাই ।কও কি কইবা ।
মেনকা:— তোমাগো ঐ এক হইছে ,ফোন আছে তোমরা নাই ।ফোনটা নিছ ক্যান !
দূর্গা:— আর কইয়ো না মা , তোমার জামাই আমারে ফোন দিয়া একখান বড়সড় বাঁশ দিছে ।দিন নাই ,রাত নাই খালি ফোন বাজে। এক এক জনের এক এক রকম বায়না বুঝলা মা ।কেউ কয় মা আমারে বড় লোক বানাইয়া দ্যাও ,কেউ কয় আমারে ভোটে জিতাইয়া দ্যাও ।এক একজনে তো আবার আমার লগে ‘ডিল’ ও করে ।তারা কয় ,মা আমারে ঐ নির্বাচন কেন্দ্র জিতাইয়া দ্যাও আমি তোমারে মন্দির বানাইয়া দিমু ।এইসব নিয়াই আমারে চলতে হয় বুঝলা । আমি ওগরে সামলামু না আমার সংসার সামলামু ! তোমার জামাই তো জানো কোনো কম্মের না । চারদিকে আমারেই দ্যাখতে হয় ।হেয়া তো দিন রাত চোখ উল্টাইয়া পইড়া থাকে ।ফোনটা যে কখন কোন হাতে থাহে ঠাওর করতে পারি না। এই হাত ওই হাত দ্যাখতে দ্যাখতে কাইট্যা যায় ।
মেনকা:— বাপরে বাপ ! ঘাট হইছে মা আমার তোমারে ওই কতাখান জিগাইয়া।
এহন কও তো দেহি তোমরা কবে আইবা ?
দূর্গা:— হ, আমরা কাল বাদ পরশু মহালয়ার দিন যাত্রা শুরু করুম ।কবে যে পৌছাইতে পারুম কে জানে ।তোমাগো ওইখানে রাস্তা ঘাটের যা ছিরি ! তার মইধ্যে আবার করোনার জন্য কত যে ঘুইরা যাইতে হইবো ।কুনো দ্যাশেই তো পা ফ্যালার যো নাই ।তাই মনে লয় যাইতে যাইতে হেই ষষ্ঠী হইয়া যাইব । তুমি চিন্তা কইরো না । আমি লক্ষী-কেত-সরো-আর গনশা রে লইয়া ঠিক সময় মতো চইল্যা যামু ।
মেনকা:— হ , তুমি তো নাতিপুতিরে লইয়া আইবা।কিন্তু জামাই বাবাজী তো হেই যে বিয়া কইরা গেল ,আর এমুখো হইলো না । আমাগো ত ইচ্ছা করে তোমাগো দুইটারে এক লগে দেহি ।হেয়ার তো আবার মা বাপ নাই ; সামনে বহাইয়া একটু ভালো মন্দ খাওয়ামু ,তা তিনি তো সময় করতেই পারেন না ।তুমি মা তাঁরে কইয়ো এক লগে আসনের কতা ।
দূর্গা:—- মা , তুমি কি ভাবতাছ ? আমি কই নাই হ্যারে যাওনের কতা ? কত বার কইছি একবার তুমি আমাগো লগে চলো ।এত দূরের পথ ,বাচ্চা কাচ্চা লইয়া আমার ডর লাগে ।একজন সমথ্থ পুরুষ থাইলে সুবিধা হয় ।হেয়া কি কয় জানো ? কয় তোমার আবার ডর কিসের ? তোমার দশখান হাত আছে , আমার তো মোটে দুইটা ।এই সব কইয়া চইল্যা যায় ।
ও যাইব না আমার লগে ।ও কালীর লগে
যাইবো । যাক গা কালীর লগে । আমি মাথায় কইরা রাহি তো ,তাই আমার দর নাই ।কালী পায়ের নীচে রাহে ঐটাই ওর ভালো লাগে ।
দুইটাই সমান — একটাও কেউ জামা কাপড় পরে না ,ভদ্র হইয়া লোক সমাজে চলে না ।
মেনকা:—- থাক মা ,চুপ যাও ।পতি নিন্দা কইরো না ।ও মহা পাপ ।
দূর্গা :—- না গ মা, পতি নিন্দা লয় । তুমি তো জানো পতি নিন্দা শুইন্যা আমার কি দশা হইছিল । পতি নিন্দা করি না ।
তুমি তো মা , তোমার কাছে দুইটা মনের কতা কই।
ঠিক আছে মা
আমি ছেলেপুলেরে নিয়া চইল্যা যামু ঠিক , চিন্তা কইরো না ।
ভাবতাছি অসুরটারে এহানে পাহারায় রাইখ্যা যামু।ওইখানে তো একখান করোনা অসুর পাইয়া যামু ।এমনিতেই তোমাগো ওখানে করোনার জন্যে সব কাজকম্ম বন্ধ ।লোকে নিজেরাই খাইতে পারতাছে না ।তার উপর একটা অসুরের খাওনদাওনের ব্যবস্থা করা কম কতা লয় ত ।
কেতোদের বলতাছি তগরে এইবার বাহনগুলানরে নিয়া যাইবার দরকার নাই ,ওহানে বেশী লোক একলগে থাহার অনুমতি দেয় নাই সরকারে ।কেউ একটা কতা শুইনতে চায় না গ । বারবার বলতাছি ওলা না উবের কি য্যান একটা বাহন আছে ওটারে নিয়া ঘুরবি ।প্যান্ডালে প্যান্ডালে যা প্রনামি পাইবি হেটা দিয়া ঘোরোনের ব্যবস্থা হইয়া যাইব । তা ক্যাডা শুনতাছে কার কতা ।
মেনকা:— হইছে হইছে, তুমি বড় ঘরনী হইছো হ্যাডা আমি বুজছি । তুমি বাপের ঘর আইবা এটা জানো তো ? দাদু আর দিদিভাইরা অগরের সবাই সবার বাহন লইয়া আইবো ।থাকবা তো মোটে চারটা দিন ।ঐ কটা দিন তোমাগো খাওয়াইতে পারুম না ? আর শুনো , তোমার অসুরটারে লইয়া আইবা ।হে তো আবার তোমার পায়ের তল ছাড়া কুথাও থাকতে চায় না ।
সবাইরে লইয়া চইলা আহ দেহি তড়াতড়ি ।
//মৌসুমী মিত্র//