শিরোনাম : সুখের খোঁজে —- শান্তনু
শিরোনাম : সুখের খোঁজে
✍🏼 শান্তনু
কোন কোন মানুষের ভাগ্য লেখার সময় বিধাতা বোধহয় একটু অবহেলা করেন। সমীরনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম।
সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর মন না চাইলেও শরীরটাকে নিয়ে কোনমতে বাড়ি ফেরে সমীরন । একটা মানুষের জীবনে আর কি কি খারাপ হতে পারে মাঝে মাঝে ভাবে সে। কলেজে পড়তে পড়তেই পিতৃহারা। পড়াশুনায় মোটের উপর খারাপ ছিল না তাই সরকারি না হলেও, একটা ভালো বেসরকারি চাকরি জুটে গেছিলো। মা শখ করে বৌমা নিয়ে এলেন, কিন্তু বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একলা মাকে ফেলে রেখে বউ নিয়ে নতুন ফ্ল্যাট, ক্লাস ফাইভের তরতাজা মেয়ে কুসুমকলির স্কুল ফেরত এক্সিডেন্টে মৃত্যু, ছয় মাসের মধ্যে মাতৃহারা ,পরের বছর “এমন লোকের সঙ্গে থাকা যায় না” অজুহাতে বউয়ের তারই রিজিওনাল ম্যানেজারের নিশ্চিত আশ্রয়ে বাড়িছাড়া। এতকিছুর পরেও সে বেঁচে আছে এটাও কি আশ্চর্য নয়!
সেদিন অফিস ফেরার পথে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। একটা পান দোকান থেকে সিগারেট ধরাচ্ছে, হঠাৎ একটা কাঁপা কাঁপা হাত পেছন থেকে জামা টেনে বলে উঠলো ” আমায় বাড়ি নিয়ে যাবি খোকন?” এক নিমেষে চমকে উঠলো সমীরন। অবিকল মায়ের মত গলা! দ্বিতীয়বার ভাবলো না, বৃদ্ধাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেল নিজের বাড়ি। বৃদ্ধার মাথাটা ঠিক কাজ করে না, বৃদ্ধাশ্রম থেকে পালিয়ে এসেছেন। সে যাই হোক পরে না হয় সেখানে খবর দেওয়া যাবে।
পরেরদিন খবর নিয়ে জেনেছিল বৃদ্ধার এক ছেলে এবং মেয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিন্তু তারা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দায়িত্বভার সেরেছেন। ইদানিং দেখা করতে আসার সময় পান না তারা এমনকি শেষ কয়েক মাসের মাসিক চুক্তির টাকাটাও বাকি আছে। সমীরন ওই দুর্ভাগা বৃদ্ধাকে নিজের কাছে রাখতে চায় সমীরনের নাম, ঠিকানা ,ফোন নাম্বার নিয়ে রাজি হয়ে গেলেন বৃদ্ধাশ্রম এর কর্তৃপক্ষ। সমীরনের পুরনো পাপবোধ মাঝেমাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো, আজ ঈশ্বর বোধহয় পাপস্খলনের একটা সুযোগ করে দিল তাকে।
আপাতত সমীরনের বাড়িতে সন্তানসুখ,মায়ের সুখ আর ঘরভরা মানুষের সুখ।