স্বাধীনতা তোমায় ছুঁয়ে দেখতে চাই একটিবার কলমেঃ সঞ্জয় বিশ্বাস

স্বাধীনতা তোমায় ছুঁয়ে দেখতে চাই একটিবার
কলমেঃ সঞ্জয় বিশ্বাস
————————————————-
যখন কোটি কোটি টাকার তেরঙ্গা বস্ত্রে ঢেকে যাবে আজ স্বাধীন ভারতবর্ষের মানচিত্র।
উৎসবের মেজাজে মেতে উঠবে গোটা দেশ।
বাতাসে বইবে দেশাত্মবোধক গানের সুরেলা সুর।
সমস্বরে গোটা দেশ গেয়ে উঠবে– “সারে যাহাসে আচ্ছা হিন্দুস্থান হামারা”
অথবা — এ মেরি বতন কী লোগো..যারা আঁখমে ভর লো পানি….

আর ঠিক তক্ষুণি,
তেরঙ্গায় মুড়ে দেওয়া সুহাসিনী ভারতলক্ষ্মী শুনতে পাবে–
“বিবস্ত্র কোন ধর্ষিতা নারীর করুন আর্তনাদ”
এ ভারতবর্ষ চেয়ে দেখবে–
“তিন বছরের শিশুকন্যার রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত যোনিদ্বার”
এ ভারতবর্ষ শুনতে পাবে–
“বৃদ্ধাশ্রমের অন্ধকার কুঠুরী হতে ভেসে আসছে বৃদ্ধ পিতা মাতার করুন আর্তনাদ”

দিকে দিকে অভিশপ্ত জাতপাতের অমানবিকতা, আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে গোটা দেশ।

খিদের লড়াই আর বেঁচে থাকার ম্যারাথনে হাঁটা নিঃস্ব শরীরগুলি বয়ে নিয়ে বেড়াবে মৃত্যু যন্ত্রণা।

——“হে আমার স্বাধীন ভারতবর্ষ, ”
…….”হে আমার গৌরবান্বিত তীর্থের বেলাভূম”
তোমায় একটিবার ছু্ঁয়ে দেখতে চাই আমি;
তোমায় একটিবার জড়িয়ে ধরতে চাই আমি।

তোমার দেশাত্মবোধের অগ্নি স্ফুরনে আজও সহাস্যে হেসে ওঠে যে—- ভারতলক্ষ্মী;
তোমার স্বদেশ প্রীতির বাহ্যিক উন্মাদনায় প্রশান্তির শ্বাস ফেলে যায় যে স্বদেশ…
আমার প্রশ্ন তার কাছে–

স্বাধীনতার সংজ্ঞায়— স্কুলের মাস্টার মশাই তাহলে কি সেদিন ভুল লিখেছিলেন??
তা আজও আমি বুঝে উঠতে পারনি।

তিনি বলেছিলেন— স্বাধীনতা মানে শুধু বিদেশী শত্রুকে পরাজিত করা নয়।
স্বাাধীনতা মানে– জাতীয় পতাকা,জাতীয় সংগীত কিংবা রাজকীয় আড়ম্বরে সংসদ ভবনকে পুষ্পমাল্যে সাজিয়ে তোলা নয়….
স্বাধীনতা মানে– কার্পেট মোড়া ঝা চকচকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কোন গিরগিটি নেতার সুমিষ্ট বক্তৃতা নয়।
স্বাধীনতা মানে– গাড়িতে বাড়িতে তেরঙ্গা লাগিয়ে উচ্চস্বরে দেশাত্মবোধক গান বাজানোও নয়।
স্বাধীনতা মানে — স্বাধীনতার সাতদশক পরেও অনাহারে লক্ষ মানুষের মৃত্যুমিছিল নয়।

আমি সত্যি জানি না আজও স্বাধীনতার মানে….
আমি সত্যি বুঝি না– আজও স্বাধীনতা কাকে বলে!

শুধু এইটুকু বুঝি….
স্বাধীনতা মানে— দেশ জাতি,ধর্ম বর্ণ ,সম্প্রদায়কে সম্প্রীতির বন্ধনে একাত্ম করা।
স্বাধীনতা মানে—ক্ষুধা তৃষ্ণা, বস্ত্র বাসস্থান সহ অার্থিক সাম্যের বন্ধনে জাতিকে মুক্তির আলোয় নিয়ে আসা….

স্বাধীনতা মানে–বৈচিত্রময় ভারতবর্ষের “-ইউনিটি এন্ড ডাইভার্সিটিকে” সুনিশ্চিত করা।
স্বাধীনতা মানে— রাজাদেশকে জনতার ওপর চাপিয়ে দেওয়া নয়।

হে আমার স্বাধীন ভারতবর্ষ;
হে আমার সহস্র জ্ঞানের পদস্পর্শিত পূণ্য তীর্থপীঠ।
তোমার রাজপথে আজও হেঁটে যায়
অর্ধনগ্ন কোন এক ভিক্ষারিণী মা
কিংবা ছেঁড়া সালোয়ারের মাঝে যৌবন লুকানো কোন এক আদিবাসী কন্যা।

কখনো একমুঠো অন্নের খোঁজে মাইলের পর মাইল হেঁটে যান কোন এক বৃদ্ধ পিতা; কিংবা কোন এক অসহায় মাতা।

কখনো ছোট্ট ছেলেটি মায়ের হাতে মার খেয়ে পেট ভরায় — জলন্ত ভরা দুপুরে।
কখনো সস্তাশ্রমের কালিমাখা শিশুমুখগুলি হাত পাতে একবেলা ভাত খাবে বলে।

চারদিকে নিরন্ন মানুষের হাহাকার, মাথার ওপর ছাদ নেই;
চালচুলোহীন নিঃস্ব মানুষগুলো রাজপথের দুধারে পড়ে আছে খোলা আকাশ মাথায় নিয়ে।

সংবিধানের পাতায় মুখ লুকিয়ে কেঁদে যায় সত্যানুশাসনের মুক ও বধির ধারা উপধারাগুলি…

মন্দির হতে–মসজিদ; গীর্জা হতে গুরুদুয়ার–
দিনপঞ্জির আহ্নিক আঁচলে মৃত্যু সংখ্যা লিখে যায়— জাত ধর্ম আর সম্প্রদায়ের জ্বলন্ত দাঙ্গা।।

মুক্তির শপথে শহীদের বুক হতে ঝরেছিল যে রক্তগঙ্গা…..
যে শপথের বাণী ধ্বনিত হয়েছিল এই স্বদেশের বুক হতে

আমি তাকে একটিবার ছুয়ে দেখতে চাই।
আমি একটিবার তাকে জড়িয়ে ধরতে চাই।
আমি একটি বার তাকে ফিরে পেতে চাই।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *