শ্রীময়ী আর রোহিত সেনের প্রেম — #ব্রতশ্রী_বসু
#হাস্যরস_কাল্পনিক
#ব্রতশ্রী_বসু
কিছুদিন ধরে শ্রীময়ী আর রোহিত সেনের প্রেম দেখে আমার মনটা কেমন যেন উথালপাথাল হচ্ছে। আমি ওই সময়টা সংসারের সব কাজ ফেলে টিভির সামনে বসে পড়ছি। ছোটটা কাঁদলে ঘ্যানঘ্যান করলে ওর মুখে কোনওমতে দুধের বোতল গুঁজে দিয়ে ওকে চুপ করাচ্ছি।🍼 ….. শ্রীময়ী আর রোহিত সেনের প্রেম। উফঃ কি আঠা !! এই বয়সেও আমার বুকের ভেতর কেমন ধুকুনপুকুন করে !! 💓 বরকে কিছুদিন হলো আর ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে আমার জীবনে যদি এরকম একটা রোহিত সেন আসতো তবে আমিও বরকে ডিভোর্স করে দিতাম। জানি ও এত সহজে আমাকে ডিভোর্স দেবে না। সাংঘাতিক ত্যাঁদোড়। ঠিক আছে , ও যদি আমাকে ডিভোর্স না দেয় তবে আমাকেই লড়তে হবে ডিভোর্স পাওয়ার জন্য। সে লড়াই যতই কঠিন হোক না কেন। 💪💪 আফটার অল রোহিত সেন আসবে বলে কথা !! 💋
একদিন বরকে বললাম , আমার নাইটিতে হলুদ-মশলার গন্ধ পাওনা তুমি ? মাছের গন্ধ ?? বর বলল , পাবো না কেন , তুমি যখন রান্নাঘর থেকে বেরোও তখন তো এসব গন্ধ পাই। এ তো আর আজকে নতুন নয় , ষোলো-সতেরো বছর ধরে দেখছি। আমি বললাম , এসব গন্ধে ঘেন্না করে না তোমার ? যেমন শ্রীময়ীর বর অনিন্দ্য সেনগুপ্তের করত ?? অনিন্দ্য আবার সেসব কথা চীৎকার করে বলত আর শ্রীময়ীকে অপমান করত। তুমি আমাকে ওরকম করে অপমান করতে পারো না ?? বর প্রচন্ড অবাক হয়ে বলল , যাব্বাবা !! অপমান করবো কেন !! রান্না করতে গেলে তো নাইটিতে পেঁয়াজ রসুনের গন্ধ হবেই। আবার স্নান করতে গিয়ে ওই নাইটি সাবান দিয়ে কাচবে। এটাই তো এতবছর ধরে দেখছি। আমি বললাম , আচ্ছা আমাকে তোমার একঘেয়ে লাগে না ? অফিসের কোনো স্মার্ট সুন্দরী কটাস কটাস ইংরাজী বুলি ঝাড়া ফিমেল কোলিগকে তোমার মনে মনে পছন্দ হয় না ?? তুমি শুধু মুখ ফুটে একটিবার বলো। আমি কথা দিচ্ছি , কোনও অশান্তি করব না। ☺️
বর তো অবাক হয়ে আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। এবার আমার অসহ্য লাগছে !! ওর এই টিপিক্যাল হাবভাব দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেলো। আমি বললাম , জানি তো তুমি পারবে না। তোমার সেই এলেম নেই !! কোনও জুন আন্টি তুমি জোটাতে পারবে না নিজের জীবনে। আর আমার হাড় ভাজা ভাজা করবে সারাজীবন ধরে !! 🥵 আমি চাইলেও আমার জীবনে কোনওদিন কোনও রোহিত সেন আসবেনা। কত শখ ছিলো আমার , কত ফ্যান্টাসি ছিল রোহিত সেনকে নিয়ে মনে মনে !! এখন দেখছি সেসব কিছুই হওয়ার নয় !! 😭😭😭😭
আমি কি পাবো না রোহিত সেনকে ?? পাবো না আমি ?? তবে আর এ জীবন রাখার মানে কি !! এই ব্যর্থতায় ভরা জীবন নিয়ে আমি কি করবো !! এসব ভাবতে ভাবতেই ডিপ্রেশনে আমার কটাদিন কেটে গেলো। বর দেখেশুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো , বলো তুমি কি চাও। আমি বললাম , তুমি আমাকে ডিভোর্স দাও। আমি রোহিতকে নিয়ে বাকি জীবন একটু ভালো ভাবে বাঁচাতে চাই। শুনে বর আঁতকে উঠে বললো , এই রোহিত টা কে ? নতুন প্রেমিক জুটিয়েছ ? ও , বুঝলাম , তাই আমাকে আর সহ্য হচ্ছে না!! ডিভোর্সের জন্য অশান্তি করছ। এটা কিন্তু তুমি একদম ঠিক করলে না আমার সঙ্গে। একদিন এর ফল তুমি পাবে। যাইহোক এখন আমি মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স ফাইল করছি। আপাতত আমাদের সেপারেশনে থাকতে হবে। আমি বললাম , তুমি ও ঘরে তোমার মায়ের সঙ্গে ঘুমোবে। আর আমি এই ঘরে দুই ছেলের সঙ্গে ঘুমোবো। এটাই হবে আমাদের সেপারেশন। ও বলল, কিন্তু তাহলে আমি এসি পাবো না তো !! আমি বললাম , আর এসি পেতে হবে না। ও বললো , সত্যি তুমি ভীষণই সেলফিশ!! আমি কিছু না বলে মুখ বেঁকিয়ে চলে গেলাম। 😏😏
কিন্তু রোহিত ? কোথায় পাবো তারে!! 🤔🤔 অনেক খোঁজার পর ফেসবুকে একজন কবিকে ভালো করে দেখার পর নিশ্চিত হলাম যে এটাই আমার রোহিত। 🤩🤩🤩 ওর আসল নামটা অন্য কি যেন একটা। কিন্তু ওকে আমি রোহিত বলেই ডাকব। আমার রোহিত। রোহিত ভালো কবিতা লেখে। এক একটা কবিতায় সাড়ে ছশো-সাতশো লাইক পড়ে। রোহিতের বয়স প্রায় পঁয়তাল্লিশ-ছেচল্লিশ। মাথার সামনের চুলগুলো সাদা। টোটা রায়চৌধুরীর চেহারার সঙ্গে মিল আছে। এটা একটা দারুণ ব্যাপার। রোহিত পাঞ্জাবি আর পাজামা পরে। ওপরে জহরকোট। কি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লাগে রোহিতকে!! বিশেষ করে যখন ও কবিতায় ডুবে থাকে। কত বড় বাড়ির ছেলে !! বাঁকুড়ার জমিদার বাড়ির ছেলে রোহিত। আর কি চাই !!
আমি ওকে ফোন করে বললাম , রোহিত তুমি এখানে এসে সব দেখে-শুনে যাও। যতই হোক আমাদের সারা জীবনের ব্যাপার। রোহিত কলকাতায় আসতে রাজী হলো। আমার বাড়িতে গেস্টরুমে ওর সব ব্যাবস্থা করে দিলাম। বর সকাল সাড়ে পাঁচটায় উঠে অফিস চলে যায়। আজকাল খুব ভালো ভালো রান্না হচ্ছে বাড়িতে। শিবুদাকে বলে দিয়েছি যে কদিন রোহিত থাকবে , সেই কদিন যেন বাজারের সেরা জিনিসটা নিয়ে আসে। আর মামনিদিকে বলেছি , বেশ তরিবত করে যেন রান্না করে এই কদিন। রোহিতের ব্যাপারে কোনও ফাঁকিবাজি আমি মেনে নেব না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ছোটছেলে হওয়ার আগে আমি নিজেই সব রান্না করতাম। এখন অত সময় পাই না। মামনিদি রান্না করে , আমি মাঝে মধ্যে শখে একটা-দুটো পদ রাঁধি।
রোহিত গেস্টরুমে থাকতে লাগল। রোজ কলকাতা ঘুরে দেখতে লাগল। রোজ সকালে লুচি আলুরদম , গাজরের হালুয়া , পরোটা , কুমড়োর ছেঁচকি , ছানার পায়েস এসব রান্না হতে লাগল। দুপুরে দেরাদুন চালের ভাত , শুক্তো , নবরত্ন ডাল , ভাজাভুজি , তোপসে ফ্রাই , কাতলা মাছের কালিয়া , পুরভরা পটলের দোলমা , ডিমের ডেভিল , নারকোল দিয়ে মোচার ঘন্ট , পনীর ডালনা , ভেটকি পাতুরী , পাবদার ঝাল , তেলকই , দেশি মুরগীর কষা , কচিপাঁঠার ঝোল , চিংড়ির মালাইকারি , ইলিশ ভাপে , দই , মোহনভোগ , কালাকাঁদ , চাঁপ সন্দেশ , রসমাধুরী কিছুই বাদ রইল না। দিন পনেরো এরকম চলল। 😋😋😋😋রোহিত খেয়ে খেয়ে মোটা হয়ে গেলো। ওদিকে বর না খেয়ে রোগা হয়ে গেলো। দিন পনেরো পর রোহিত কিছু বলছে না দেখে আমি নিজেই ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে , আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে ও কতটা সিরিয়াস আর ডিভোর্স পাওয়ার কতদিন পর রোহিত আমাকে বিয়ে করবে ? রোহিত আকাশ থেকে পড়ল। বলল , আমার তো বউ অলরেডি আছে আর দুটো ছেলেমেয়ে। আমি প্রচন্ড রেগে বললাম , আমাকে এতদিন এই কথা বলোনি কেনো ? 😠😠😡 সে বললো , আপনি তো জানতে চান নি ! এখন জানতে চাইলেন তাই জানালাম। আসলে আমার কলকাতা ঘুরে দেখার খুব শখ ছিলো আর আপনি আমন্ত্রণ জানালেন। তাই এলাম। এর বেশি কিছু নয়। আমি লোকটাকে বললাম , আচ্ছা কলকাতা দেখা হয়ে গেছে তো ? তাহলে এবার আসুন। 🙏🙏 পরদিন সে চলে গেলো।
বরের সঙ্গে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছি নিজের ভুল বুঝতে পেরে। অনেক কষ্ট দিয়েছি ওকে। সব ভুল স্বীকার করে নিলাম। ওর জীবনে কোনও জুন আন্টি নেই আর জানি কোনওদিন আসবেও না। ও-ই আমার জীবনের রোহিত সেন। সব স্বামী অনিন্দ্য সেনগুপ্ত হয় না। রোহিত সেন ঘরেই আছে। বাইরে কোথাও খোঁজবার দরকার নেই। ❤
#হাস্যরস_কাল্পনিক
#ব্রতশ্রী_বসু