নিপ্পনের দেশে.. (৩য় কিস্তি) কলমে — #শ্বেতা_ব্যানার্জী
নিপ্পনের দেশে.. (৩য় কিস্তি)
কলমে — #শ্বেতা_ব্যানার্জী
#অলিম্পিকঅনির্বাণ। ৭৭৬খ্রিস্টপূর্বাব্দে যার সূচনা হয়েছিল প্রাচীন গ্রিসে। পরবর্তী তে নানান ঘটনায় ১৫০২ বছর অবধি স্থগিত থাকার পর ফিরে আসে
১৮৯৬ –এ এথেন্সে।
যুদ্ধের দরুন আধুনিক অলিম্পিকও তিনবার বন্ধ হয়
১৯৯৬,১৯৪০ ও ১৯৪৪— আসলে আয়োজন করা সম্ভবই হয়নি।
এ বছর জাপান সরকার আয়োজন করেও #অলিম্পিক সম্ভব হলোনা এক #জৈবিকযুদ্ধের কারণে।
তখনও আমরা জানতাম না কি অতিমারি আসতে চলেছে —-
আমরা চলেছি #Tokeyo Dome যেখানে এ বছর অলিম্পিকের বেশ কিছু ইনডোর গেমস্ হবার কথা ছিল।
জাপান জুড়ে তাজ্জবের বাহার।
আমার কয়েকটি তাজ্জবের প্রতি আকর্ষণ ছিল তার মধ্যে চালক বিহীন #মনরেল যা অলরেডি চড়ে নিয়েছি।
টোকিওর ভূ-গর্ভস্থ মেট্রোট্রেন বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন কোম্পানি চালিয়ে থাকে, এখানে এক একটা তলায় এক এক জায়গায় ট্রেন, এইভাবে ছয়তলা অবধি আছে। ট্রেন ভাড়াও এখানে খুব বেশি। সবচেয়ে দামি আন্ডার গ্রাউন্ড মেট্রোর ভাড়া, তারপর যত উপরের দিকে ওঠা তত ভাড়া কমতে থাকে।
টোকিওর ভূ-গর্ভস্থ ট্রেন বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন কোম্পানি চালিয়ে থাকে তাই এদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে উন্নত পরিসেবা, উন্নত উন্নয়ন, আর সময়, জাপানিদের সময় জ্ঞান একদম কাঁটায় কাঁটায়, দিন হেলান দেয় ওরা দেয়না। এখানে আর
আর একটা ব্যাপারও লক্ষণীয় ট্রেনের যাত্রীরা কেউ কথা বলেনা,ভীড় ট্রেন গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগছে –
তবুও চুপ,কেউ কী হলো দাদা! সামলে দাঁড়ান, না কোনদিন শুনলাম না।
কেউ বই পড়ছে, কেউ মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করছে,
কিন্তু চুপচাপ। এমন কি যারা দাঁড়িয়ে আছে তারাও।
নির্দিষ্ট স্টেশন আসলে যখন কেউ উঠছে বা নামছে
যাত্রীরা তাদের সূযোগ করে দিচ্ছে, বলতে হচ্ছে না।
আমি মনে মনে ভাবছি ঈশ্বর একবার সূযোগ করে দাও বনগাঁ বা ক্যানিং, নিদেনপক্ষে বসিরহাটের ট্রেন যাত্রীদের একবার দেখাই সংযমী ও সভ্যতার নিদর্শন কাকে বলে।
এখানকার প্যারাম্বুলেটরও দেখার মতন ১,২,৩ তলা অবধি , এরা চলমান সিঁড়িতে প্য্যারাম্বুলেটরে বাচ্চা নিয়ে দিব্বি ঊঠে যাচ্ছে ট্রেনে। আর বাচ্চা গুলো যেন গোলাপের পাপড়ি —
দেখলেই মনে হয় গাল দুটো ধরে আদর করি।
কিন্তু না, ওরা আড় চোখে দেখাও পছন্দ করেনা।
আর একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম এরা অনেকেই
মুখে মাস্ক বেঁধে রয়েছে, বৌমা কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এরা এতটাই সচেতন অল্প হাঁচি-কাশি বা অল্প জ্বরেও মুখে মাস্ক বাঁধে যাতে ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, তার ছোঁয়াচ যেন পাবলিকের মধ্যে ছড়িয়ে না যায়। এমনকি বাচ্চাদের সর্দি-জ্বর, কাশি হলেও স্কুলে পাঠায়না।
আমরা এসে পৌঁছলাম #Tokyo Dome city তখন শীতকালীন মেলাও বসেছিল ওখানে, সুউচ্চ #রোলারকোস্টার দেখে আমার প্রাণ ঢিপঢিপ, চোখের আন্দাজে মনে হচ্ছিল ৮/৯ তলা বাড়ির থেকে ঝপাংক করে একতলায় নেমে এলো..
আমার বুকের ঢিপঢিপ জানান দিলো যদি R I P
R I P না শুনতে চাস তাহলে আমার বিপ বিপ চালু রেখে এখান থেকে সরে যা।
আরও অনেক মজার Raide কিন্তু চড়তে সাহস পাইনি, শুধুই দেখেছি।
#টোকিও ডোম হোটেলও দেখার মতন, হ্যাঁ ধরতে গেলে প্রায় সব হোটেলই।
জাপানিরা পরিশ্রমী, সংযমী, অতিথি পরায়ণ, হলেও জুয়াখেলাতে এরা খুব উৎসাহী, প্রায় প্রতিটি মোড়েই জুয়ার খেলার বড়ো বড়ো হলঘর আছে
সেই গুলো চার পাঁচতলা বিশিষ্ট, এখানে জুয়া আইনসম্মত, এরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে বলেই এদের কাছে জুয়াখেলাটা রিলক্সেশন।
তবে কোনদিন দেখিনি রাস্তায় ধারে কোন অসভ্যতামি কিম্বা কোন কাউকে টোন টিটকারি করা।এখানে কাজের সূত্রে সারারাত ধরে ভদ্রঘরের মহিলারা যদি যাতায়াতও করেন তা করবেন নিরাপদে। নেই চুরি ছিনতাই, ধরতে গেলে নেইই খুন খারাপি। কোনদিন রাস্তায় কাউকে মাতলামি করতে দেখিনি। কোনদিন রাস্তায় গাড়ির হর্ণ শুনিনি। আর সিগনালিং ব্যবস্থা এত উন্নত যে রাস্তা পারাপারের জন্য কোন ঝুঁকিই নেই।
ফেরার পথে একটা কথাই মনে হচ্ছিল
হে ভালোবাসা তোমাকে দিয়েছি প্রাণ
এই জাপান সুন্দরীর বুকে
বিনিময়ে দিও একফোঁটা সুগন্ধি
ধারক হয়ে অন্তরে বয়ে নিয়ে যেতে