নারী স্বাধীনতা মীনা দে
নারী স্বাধীনতা
মীনা দে
বর্তমান যুগে যে প্রশ্নটা বিশেষভাবে সকলের মনকে নাড়া দিচ্ছে তা হলো ,
এখনকার সমাজে নারীরা কতখানি স্বাধীন এবং সুরক্ষিত। নারীরা কতখানি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে যত্র তত্র ঘোরাফেরা করার। তথাকথিত নির্ভিকতার বাতাবরণ কি সত্যিই তৈরী হয়েছে। নারী স্বাধীনতাকে কেন্দ্র
করে নারী শিক্ষা, নারী প্রগতি, নারী জাগরণ ইত্যাদির ব্যাপক প্রচার এবং
প্রসার হচ্ছে। তা কার্যকরীও হচ্ছে বেশ ব্যাপক ভাবেই। কিন্তু তবুও বহু নারীর লাঞ্ছিত হবার ঘটনাও ঘটে চলেছে অহরহ।
সমাজের অগ্রগতির জন্য দরকার সুসংগঠিত পরিবার। সেই সুসংগঠন নির্ভর করে নারী এবং পুরুষের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা
এবং কর্তব্য বোধের প্রতি সচেতনতার ওপর। সমাজে একটা সময় ছিল যখন নারীকে অবলা আখ্যা দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হতো । ধর্মীয় অনুশাসন এবং বিধিনিষেধের বেড়াজাল নারীকে এমন ভাবে আবদ্ধ করে রেখেছিল যে তাদের ব্যাক্তিত্ব বিকাশের কোনও সুযোগই ছিলনা।
স্ত্রীশিক্ষার অভাবে নারীরা এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির কথা ভাবতেও পারত না । যাইহোক নারীদের ঐ শৃঙ্খল মোচনের পিছনে রয়েছে বহু জ্ঞানী গুণী মানুষের শুভ প্রচেষ্টা আন্তরিকতা ও সহৃদয়তা। যার ফলে নারীদের সামনে এক নূতন দিগন্ত উন্মোচিত হয়ছে। নারী প্রগতি নারী
স্বাধীনতা নারী সচেতনতা ইত্যাদি ব্যাপারে নারীরা নিজেরাই সক্রিয় অংশগ্রহণ করে এবং পরুষদের সমকক্ষ হয়ে সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। নারী স্বাধীনতা নারী
সমাজের মুখ থেকে মুছে দিয়েছে অশিক্ষা অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারের কালো ছায়া।
তার বদলে উন্মোচিত হয়েছে প্রগতির আলোকময় সম্ভাবনা। কিন্তু এত সবের পরেও মন অনেক প্রশ্নের উত্তর খোঁজে। অনেক কিন্তু এবং কেনর বোঝা মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। নারী সমাজ সত্যিই কি পেয়েছে সম্মান রক্ষার নিশ্চিত আশ্বাস? নির্ভিক ভাবে চলাফেরা করার স্বাচ্ছন্দ্য?
পেরেছে কি সমাজের কলঙ্ক স্বরূপ সেই সব পৈশাচিক প্রবৃত্তির মানুষদের
সনাক্ত করতে এবং তাদের শাস্তিবিধানের ব্যাবস্থা করতে? কেন আজও সংবাদ পত্রের প্রথম পাতাতেই চোখে পড়ে সাত আট বছর বালিকার উপর পৈশাচিক নির্যাতনের খবর? আর প্রমাণ লোপের জন্য নির্মম ভাবে হত্যা? কেন আজও মা বাবা পণের টাকা যোগাড় করতে না পারলে মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যায়? কেন আজও এত বধূহত্যা হয়? কেন আজও কোনো দূর্বৃত্তের হাত থেকে কোনো মেয়েকে উদ্ধার করতে গেলে তার ভাইকে বা কোনো সৎ পুলিশ অফিসার কে দূর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়? তা কি কেবল নারীরা নারী বলেই?
আজকাল মেয়েরা উচ্চশিক্ষত হচ্ছে, পুরূষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
অফিস কাছারি থেকে শুরু করে শিক্ষা, ব্যাবসা ,পরিবহন পরিচালন এমনকি রাজনীতির রঙ্গমঞ্চেও আলোড়ন তুলছে। কিন্তু তবুও পুরুষের
লালসার হাত থেকে নিজেদের কিছুতেই রক্ষা করতে পারছে না। তাই তো
আজও নির্ভয়ার মতো মেয়েদের অকারণে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়? অতি
মাত্রায় অশ্লীলতার প্রচার করার কারনে নানা প্রচার মাধ্যমই কি এর জন্য দায়ী?নারীরা নিজেরাই যদি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেদেরকে বোধ
বুদ্ধি হীন বিচার বিবেচনা হীন কেবল মাত্র এক দেহ সর্বস্য জীব বলে
মনে করতে থাকে তবে বিধাতারও অসাধ্য তাদের রক্ষাকরা
আরও একটা বিষয়কে এখানে তুলে না ধরে পারছি না , তাহলো কুরুচির
পরিচায়ক পণ প্রথা। আমাদের দেশে এখনও বিবাহকে একটা পবিত্র বন্ধন
বলে মনে করা হয়। বিবাহ নামক এই সামাজিক প্রথায় তো নারী এবং
পুরুষ উভয়েরই সমান সমান ভূমিকা থাকে, তবে কেন কেবল মাত্র
নারীরাই পণ প্রথার শিকার হবে? পুরুষরা কেন নয়? আইন করেও আজও এই কুপ্রথা বন্ধ করা যাচ্ছে না কারণ আজও নারীদের পুরুষদের তুলনায় ছোট করে দেখার মানসিকতা। নারীকে দয়া করে নিজের বাড়িতে ঠাঁই দেওয়ার মতো হীণ এবং নীচ মনোবৃত্তি। বিবাহের প্রয়োজন যখন দুই তরফেরই সমান সমান তখন কেন কেবল মাত্র কন্যার পিতা
মাতার ওপর পণ দেওয়ার দায়বদ্ধতা বর্তাবে? বিবাহে প্রাধান্য দিতে হবে সেই বর এবং বধূকে। বধূর সাথে আসা বিলাস সামগ্রী গুলিকে নয়।
নারীকে কেবল মাত্র ভোগ্য সামগ্রী রূপে না দেখে তার মাতৃত্বকে তার
সামাজিক মর্যাদাকে তার স্বকীয়তাকে যথাযথ সম্মান দিতে হবে এই
ব্যাপারে পুরুষটিকেও তা মনে রাখতে হবে তবেই নারীর স্বাধিকার রক্ষা
সম্ভব। তার জন্য চাই প্রকৃত রুচিবোধ সঠিক আদর্শ আর সঠিক মূল্যবোধের জ্ঞান। তবেই বিবাহ হবে সর্বাঙ্গ সুন্দর আর নব দম্পতী পাবে এক সুখী জীবন।