“শোষণ” কলমে –নীরা মিত্র)
“শোষণ”
কলমে –নীরা মিত্র)
একটুও দম ফেলার সময় নেই ঋতুর, সারাদিন কাজের বড্ড চাপ। সংসারের কাজ তো চিরকাল সামলে এসেছে এখনও সামলাচ্ছে, কিন্তু তার সাথে এখন এই কোভিড, নতুন উৎপাত… এখন আবার দ্বিতীয় দফার লক ডাউন চলছে।
যাই হোক সে সব সামলে দিন চলছিল ঠিকই, হঠাৎ কাজের লোকটি একটি কোভিড আক্রান্ত বাড়িতে কাজ করতে শুরু করেছে জেনে ঋতুর তো মাথায় হাত… শোনা মাত্রই সে আর ওকে দিয়ে কাজ করানো বন্ধ করলো,নিজের বাড়ির নিরাপত্তা তো হলো কিন্তু লোকটিতো সারাদিন কাজ করে এদিক ওদিক ঘুরে বাড়ি যায়, তাতে রোগ ছড়াবার সম্ভাবনা প্রবল তার ওপর ওর বাড়িতে বাচ্চা আছে…. এই সব ভেবে ভয়ানক দুঃশ্চিন্তা য় পড়লো ঋতু।
আসলে কাজের লোকটি খুব ভাল আর সৎ ও চট্ করে কাউকে না বলতে পারে না আর ওর এই ভালো মনের সুযোগ নিয়ে লোকে ওকে শোষন করে।
সামন্য কিছু অর্থের বিনিময়ে ওযে কতো বড় ঝুঁকির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলো ও সেটা বুঝলোই না।
ভাবলে সত্যিই ভীষণ অবাক লাগে আমরা সব জেনে বুঝে শুধু নিজেদের সুবিধার জন্য এই গরীব মানুষ গুলোকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পিছপা হই না…কিন্তু এই গরীব মানুষটা যদি কোন ভাবে কোভিড আক্রান্ত হয় তখন আর তার পাশে এই সব মানুষদের দেখা যাবে না, এই আমাদের শিক্ষা, এই আমাদের মানবিকতা…
ঋতু এই সব অন্যায় একদম সহ্য করতে পারেনা।আশপাশের কয়েকজন কে বলেও কিছু লাভ হলো না… ও আর একা কি করবে আজকাল সবাই খুব আত্মকেন্দ্রিক,…
ওযেখানে ছোটথেকে বড় হয়েছে সেখানের পরিবেশ ছিল আলাদা, পাড়া ছিল এক পরিবারের মতো, আর আজ??
যাই হোক সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে , আর ভাবে কি করে এই সব মানুষ গুলোকে একটু সচেতন করবে। ছেলেটির জন্য চিন্তাও থাকে, ওর যেন কিছু না হয়।
এদিকে ওর ভ্যাকসিন ও হয়নি,ঋতু অনেকদিন থেকেই ভেবে রেখেছে কোন সুযোগে ওর আশপাশের এই ধরনের কিছু মানুষকে ও নিজে উদ্যোগী হয়ে ভ্যাকসিন দেওয়াবে।
হঠাৎ ই সুযোগ এলো, একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কাছাকাছি এক জায়গায় কিছু অর্থের বিনিময়ে ভ্যাকসিন দেবে জানতে পেরে ঋতু ওর পরিচিত কয়েকজনকে কিছু অর্থ সাহায্য করে ভ্যাকসিন নিতে পাঠালো, তার মধ্যে ঐ ছেলেটি আছে, ও ছেলেটিকে ওখানে যেতে বলাতে সে বললো ও কোথাও থেকে জেনেছে কোভিড আক্রান্ত বাড়িতে কাজ করার ফলে ওর এন্টিবডি তৈরি হয়ে গেলে ভ্যাকসিন নিলে ওর ক্ষতি হবে… কি অবাক করা যুক্তি, তাই যদি হবে যে কোন মানুষের শরীরের ই তো এন্টিবডি তৈরি হয়ে থাকতে পারে তাহলে তো সবাইকে ভ্যাকসিন নেবার আগে এন্টিবডি টেস্ট করে ভ্যাকসিন নিতে হবে। কিন্তু কাকে বোঝাবে ঋতু… অশিক্ষিত বোকা মানুষগুলোকে ভূল বুঝিয়ে কতো সর্বনাশ যে লোকে করে…
এর পিছনে কার যে কি স্বার্থ আছে ঋতু কিছুই বুঝতে পারে না…. শুধু এটাই বোঝে গরীব বোকা মানুষ গুলো আজ একুশ শতকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও সমান ভাবে শোষিত হচ্ছে…এর কারণ শিক্ষার অভাব তাছাড়া আর কি?
নির্জন দুপুরে একা বসে ঋতু উপলব্ধি করে পরিস্থিতি মানুষকে চেনায়, এই কোভিড না এলে কি এভাবে মানুষ চেনা যেতো?