কিংকর্তব্যবিমূঢ় —- দেবাশিস দে
কিংকর্তব্যবিমূঢ়
দেবাশিস দে
রমাপদ ভট্টাচার্য র জীবিকা পৌরহিত্য। জাতপাত, ছোয়া ছুয়ি র বিচারটা তাই মনের মধ্যে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে।
রমাপদ অতটা খেয়াল করেনি, গোলাম হোসেন কখন তার পাশে এসে বসেছে, খেয়াল হতেই মনটা অপ্রসন্ন হয়ে উঠল তার। যথাসম্ভব বিরক্তি গোপন করে বলেন – কি হল ? তুই এখানে এসে বসলি কেন ?
গোলাম হোসেন মুখে একটু হাসিভাব এনে , বলে – শরীরটা খুব খারাপ লাগছে তাই বসে পড়লাম, – আপনার মা কেমন আছেন বাবু ? বিসন্ন গলার স্বর।
রমাপদর মনে পড়ে, গত বছর মায়ের শরীর খুব খারাপ হয়েছিল, হাঁপানির টানে প্রায় যায় যায়। হাসপাতালে ভর্তি করার টাকাও ছিল না কাছে। চেনাশোনা যে কজনের কাছে টাকা চাইতে গিয়েছিল, প্রত্যেকে কিছু না কিছু অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল। অবসন্ন ও চিন্তাগ্রস্ত মনে সে যখন বাড়ি ফিরছিল, পথে এই গোলাম হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তার সাহায্যেই শেষ অবধি সে যাত্রায় মা রক্ষা পেয়েছিলেন। অবশ্য মাস পাঁচেকের মধ্যে রমাপদ টাকাটা শোধ করে দেয়।
কিছুক্ষণ পর সম্বিত ফিরে পেয়ে রমাপদ বলেন – মা এখন একটু ভালো আছেন।
দীঘির পাড়ে ঝিম হয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়ার সারির দল। বৃষ্টি লেগে ঝরে পড়া ফুলের রাশি কাদায় লুটিয়ে থাকে। এক পশলা বৃষ্টি আর ঝড়ো হওয়া থাকায় মর্নিং ওয়াকে তেমন লোক হয়নি। রমাপদ বাবুর মর্নিং ওয়াকে র বন্ধু সোমক বসু দুই জনের কথাই শুনছিলেন । হঠাৎ গোলাম হোসেন মাথাটা এলিয়ে দেয় বা পাশের সিমেন্টের হাতলের উপর। সোমক বসু তাড়াতাড়ি মাথাটা তুলে ভালো করে শুইয়ে দেয় গোলামকে। অন্যান্য সঙ্গীরা ততক্ষণে জড়ো হয়ে গেছে।কেউ বলছেন , মুখে জল দাও, কেউ বলছেন গাড়ি ডাকতে – হসপিটালে নিতে হবে । একজন গেল বাড়িতে খবর দিতে।
দুই চোখে নোনতা জলে ঝাপসা হয়ে আসা রমাপদ বাবু থম হয়ে চেয়ে থাকে গোলাম হোসেনের দিকে।