অবনী ঘরে ফেরেনি ————- গৌতম চট্টোপাধ্যায়
অবনী ঘরে ফেরেনি
————————–
গৌতম চট্টোপাধ্যায়
—————————–
চার্লসম্যান বা রাখালদাস হয়ে হরপ্পা বা মহেঞ্জোদাড়ো বা মৃতের স্তূপ ঘোরার ইচ্ছে আমার নেই, ইচ্ছে নেই আরব বণিকদের মতো সমুদ্র পথে চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় যাতায়াতের সময় কোন দারুচিনি দ্বীপে বা সেন্ট মার্টিন’স আইল্যান্ডে খানিকটা বিশ্রাম নেওয়ারও, ইচ্ছে নেই
নাটোরের কোন বনলতা সেনের চোখে আশ্রয় খোঁজার! শুধু জানতে ইচ্ছে করে অবনী ঘরে ফিরেছে কী না! তোমরা ভাবছো এতকাল তো অবনী বাড়ী আছে কী না জানাই হয় নি! সে হয়তো
দিব্যি খিল এঁটে কোন অপত্য স্নেহের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে ঘুমোচ্ছে বা মহুয়া খেয়ে বুঁদ হয়ে চিৎ পড়ে আছে! মোদ্দা কথা হলো অবনী ঘরে ফেরেনি! তাই বলে এটা ভেবে বসো না যে সিনেমার মায়ের মতো অবনী’র মা শয্যাশায়ী হয়ে ধুঁকছে! বোনটার বিয়ে হয় নি ঠিক, তবুও
মাঠে -ঘাটে খেটে কম্মে খাওয়া শক্তপোক্ত তামাটে চেহারার মায়ের ঘোলাটে চোখে চোখ রেখে
“অবনী আর আদৌ বাড়ী ফিরবে কী না… ” বলার সাহস করে উঠতে পারে নি!
করোনা সংক্রমণের আগে গ্রামের সমীর হাঁসদা
মাসে দু’হাজার টাকার মানিঅর্ডার টা নিয়ে আসতো…, সেই মে মাস থেকে সমীর আর এদিকে আসে না!
জীবন-ভর একটিও প্রশ্ন না করা অবনী’র মা যখন তাড়াতাড়ি নেমে আসা গোধূলি- বেলায় গরু গুলো নিয়ে ঘরে ফেরে মাথাবোঝাই চ্যালাকাঠ নিয়ে, প্রশ্ন করে ” ও চাঁপা, অবনী ঘরে ফিরেছে? ”
চাঁপা ওর মা’কে পরিযায়ীদের বাড়ী ফেরা বা
রেললাইনে কাটা পড়া মানুষের কথা বলে না…,
চাঁপা চেপে যায় অনেক কিছু।। একটা বড় দীর্ঘশ্বাস
সদ্য আগুন লাগা চ্যালাকাঠে ধোঁয়া বাড়িয়ে চোখে জ্বালা ধরায় চাঁপার! আর অবনী’র মা ছোট্ট বাছুর’ টাকে মায়ের কাছ থেকে দূরের খুঁটিতে বাঁধে সেই থেকে যেদিন অজানা এক বিষাক্ত পোকার কামড়ে
ওর মায়ের স্তন রক্তে লাল হয়ে গেছে। অন্য একটি গরুর দুধ খাওয়ায় বাছুর টা’ কে।
অবনী’ র মা রোজ ভাবে আজ দুধ দুইবে কিন্তু খাবেই বা কে! অবনী তো ঘরেই ফেরে নাই!