ঈশ ও অনীশ / অনুপ দেবনাথ
ঈশ ও অনীশ / অনুপ দেবনাথ
দেবদ্বিজে ভক্তি নেই মোটে । নিরীশ্বরবাদী মানুষ । উপনিষদীয় ব্যাখ্যাতায় নাস্তিক নই যদিও। যার কোন কিছুর প্রতি আস্থা আছে সেই নাকি আস্তিক । তা ধর্ম হতে পারে, আদর্শ বা নীতিবোধও হতে পারে। আমার তো অগাধ আস্থা মানবতায়, মানব ধর্মে। আস্তিক কি আমি তবে ;নাকি অজ্ঞেয়বাদী তকমাই আমার অভিধা ?
তবে দেব না হোক দেউলে আমার আকর্ষণ দুর্নিবার । অনিমিখ আস্বাদন বিবিধ স্থাপত্য শিল্পসুষমায় ।
‘ প্রতিটি মহল আমি ঘুরে দেখি-প্রতিটি পাথর
নখ দিয়ে তুলে দেখি – সিঁড়ি বেয়ে উঠি আর নামি.’….শক্তি চট্টোপাধ্যায়
ভারতীয় মন্দির নির্মাণ শৈলী প্রধানত তিন ধরনের । উত্তর ভারতীয় নাগরী শৈলী, যেমন উড়িষ্যার কোনার্ক মন্দির (অযোধ্যার রাম মন্দিরও এ শৈলীতেই নির্মিত হচ্ছে) ,
দক্ষিণ ভারতীয় দ্রাবিড় শৈলী যেমন তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরম মন্দির ,আর ভেসারা শৈলী যা মূলত নাগরী শৈলী ও দ্রাবিড় শৈলীর সংমিশ্রণ ,যেমন কর্নাটকের বিরূপাক্ষ মন্দির । এ ছাড়াও আরো বেশ কিছু অন্য ধরনের মন্দির দেখা যায় ভারতে। বাংলায় যেমন দেখা যায় এক বাংলা বা দোচালা , চারচালা, আটচালা ( তারকেশ্বর মন্দির ), রত্ন শৈলির মন্দির (দক্ষিণেশ্বরের নবরত্ন মন্দির) এবং দালান শৈলীর মন্দির । স্বামী বিবেকানন্দ আবার বেলুড় মঠে হিন্দু, মুসলমান ও খৃষ্টীয় মোটিফের সংমিশ্রণে এক মিশ্র শৈলীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, প্রকৌশলী স্বামী বিজ্ঞানানন্দকে (পূর্বাশ্রমে হরিপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় )দিয়ে ।
কলকাতার অদূরেই সম্প্রতি যে মন্দিরটি দেখে এলাম তা মারু গুরজারা বা সোলাঙ্কি স্হাপত্য শৈলীর শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দির । মূলত গুজরাত ও রাজস্হানে এ ধরনের মন্দির দেখা যায় ।
রাজস্হানী গোলাপি বেলে পাথরের মন্দিরটি ২৬ হাজার পাথরের কারুকার্যে গরীয়ান । নির্মাণে কোনো লোহা ব্যবহৃত হয়নি। বিশাল জায়গা জুড়ে মন্দির । পাথরের সৌক্ষ্ম্য সৌকুমার্য দেখি স্ফারিত চোখে। গুজরাতের বিখ্যাত অক্ষরধাম মন্দিরের কথা মনে পড়ে যায়। ভগবান শ্রী অক্ষর পুরোষত্তম মহারাজ রাজকীয় পোষাকে বিরাজমান এ মন্দিরে । বড় শান্ত স্নিগ্ধশ্রী তাঁর মুখমণ্ডলে।
ভগবান শ্রী স্বামীনারায়ণ উত্তরপ্রদেশের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি আধ্যাত্মিক কল্যাণের সাথে নানাবিধ সামাজিক এবং মানবিক বিষয়েও ছিলেন উদ্যোগী । কন্যা শিশু হত্যা, প্রাণী হত্যা, বিধবা দাহ এবং নেশার বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন সামাজিক আন্দোলন । ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, পরসেবা ও নৈতিকতার সাথে জীবনধারনই তার ভক্তদের জীবন পাথেয়। হিন্দু ধর্মীয় এই সম্প্রদায়ের চারটি মূল নীতি হলো -দয়া, সত্য, অহিংসা এবং ব্রহ্মচর্য ।