আমি যদি কবিতা হই … দুলাল কাটারী
আমি যদি কবিতা হই …
দুলাল কাটারী
তাহলে, আমাতে আবেগ আছে।
শীত সকালের ব্যলকনিতে আসা এক খন্ড রোদের মতো সুখ আছে।
আছে জীভ কাটা এডিটরের কথা।
জ্বলন্ত স্তুপের উপরে বসে থাকা সমাজের কথাও আছে।
আছে দীনহীন মানুষের দিনযাপনের কথা।
প্রতিবাদের শব্দ উচ্চারণে মুখে উপহার গুঁজে দেওয়ার ভয় আছে।
আছে না বলতে পারা অনেক কথা।
একগুঁয়ে ধার্মিক ষাঁড় আছে,অধার্মিক সুপারস্টার আছে।
আমি কারো কাছে পন্য, কেউ আমাতে ধন্য।
আমাতে সুখ আছে, কষ্ট আছে, আছে পাগলের প্রলাপ,
রাজা আছে, শ্রমিক আছে, আছে শ্রমিকের শ্রম চুরির সংলাপ।
আমাতে জীবন আছে, জীবিকা আছে, আছে কচি যুবকের মেরুদণ্ড চুরির কথা।
আমাতে কবি আছে, কবিতা আছে,
আছে কবি এবং কবিতার নির্মম সম্পর্কের কথা।
মানুষ নির্মানের কথা আছে,আছে তার ধ্বংসেরও কথা…
কবিতে কবিতে মূকাভিনয় আছে।
আমাকে নিয়ে সমালোচনা আছে, প্রতি আলোচনা আছে,
বুকে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার মতো ভাষার আক্রমন আছে।
ঠিক যেমন করে সমালোচনা করেন প্রতিবেশীর ছেলেমেয়েদের বাড়বাড়ন্ত দেখে।
আছে একজন নারীর একজন পরিনত পুরুষের চোখে বিশ্বাস খুঁজে বেড়ানোর কথা।
এক বুক বিরহে গ্রীষ্ম দুপুর কাটানো কত যুবতীর দুপুর কাটে কবিতায় কল্পনার ফুল এঁকে।
যে মানুষ গুলো প্রতিদিন হেরে যায় নিজের কাছে, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে সামাজের কাছে হেরে গিয়ে,
যারা দাঁড়িয়ে দেখে নিজের চোখের সামনে তার চাকরি বিক্রি হয়ে যায় ঘুষের টাকায়, তাদের কথাও আছে।
কত অখণ্ড রাত কাটে বেকার অথচ প্রেমিক যুবকের বুক ফাটা নিশ্চুপ চিৎকারের ভাষায়।
আমার স্রষ্টা জানে স্রোতের প্রতিকূলে হাঁটা জীবনযাপনেও উপচে পড়া আনন্দ আছে।
আমার স্রষ্টার বুক ভাঙা কান্না যখন দুকূল ছাপিয়ে বয়ে চলে, আমার হৃদয়েও তার ঢেউ লাগে।
আমার সৃষ্টিকর্তার নিদারুণ জীবনযাপনের দিকে আপনাদের নজর না পড়ার কথাও আছে।
আপনার ভাবনার সাথে যদি যায় আমার ভাবনা মিশে,
শান্তিতে একটা ঘুম দেন মুখ গুঁজে পাশবালিশে।
যারা সমাজকে ঘৃণা করে অথবা ভালোবেসে কলম তুলে নিয়েছে হাতে,
যারা কবিতাকে ভালোবেসে নয় বরং ঘৃণা করে,
শুধুমাত্র প্রতিবাদের একটা মাধ্যম দরকার বলে কবিতার আশ্রয় নিয়েছে,
তাদের জন্যও আজ ‘কবি’ নামক গালাগালি সূচক শব্দটি ব্যবহার করেন,আছে সেই নির্মমতার কথাও…
তবুও লিখে চলে
যদিও কোনো দিন সামান্যতমও ইচ্ছে জাগে নি কবি হওয়ার
তবুও আজ লোকে কবি বলে ডাকেন আমার স্রষ্টাকে।
তারা তো জানেন না কবিত্বের যন্ত্রণা কতখানি।
কবি হৃদয় হলো সারা জগতের ব্যথার খনি।
এই সমাজে কত নির্বিচার,কত অত্যাচারের চাষ।
একমাত্র আমিই জানি কবির হৃদয়ে কত দুঃখের বাস।
জীবনের সাথে যতগুলি বেশি দিন পার করে
তত উচ্চতা বাড়ে ব্যথার পাহাড়টার।
তখন আপনার ভালো লাগা কোথায় থাকে ?
কতো মায়ের সন্তান কেড়ে নেওয়া এই সমাজ।
কতো বোনের বক্ষে আঁচড় কাটে ধর্ষক সমাজ।
কলকাতা… গুয়াহাটি…দিল্লি… আগরতলা…ঢাকা…
কথার বুলি উড়ানো রাজনৈতিক ব্যানারে ঢাকা।
ওদিকে নিলাম হয়ে গেলো মৃত সাম্রাজ্যের অন্ডকোষ।
তবুও সমালোচকদের সমালোচনা চলে, প্রতি আলোচনা চলে,
প্রতিবাদের ভাষার শালীনতা অথবা অশালীনতা নিয়ে।
আতস কাচের তলায় ফেলে বিচার বিশ্লেষণের মাত্রা ছাপিয়ে যায় লোকসভা, বিধান সভা, রাজ্যসভা বা সোনাগাছির কোলাহলকেও।
আমার সৃষ্টি কর্তাই সেই মানুষ যে আমার শরীর গড়ে,
এঁকে ফেলে ভাষায় সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
আমি গোধূলি আঁকি প্রেমিকা বৌঠানের চোখে
একটি ফুলের মূল্যে কেনা ভালোবাসা দিয়ে।
আবার আমার বুকেই লেখা আছে দুশ্চরিত্রা বৌঠানের প্রতি রাতে নতুন পুরুষ খোঁজার কথা।
আমাতে আছে পুলিশের চুরি করার কথা ,
আছে চোরের মায়ের বড়ো গলার কথাও…
লাশের গন্ধ আছে,
আছে তপ্ত মরুর বুকে একবিন্দু বৃষ্টি কণা পরার আগেই বাষ্প হওয়ার কথাও…