গল্প / কলমে ছবি ব্যানার্জী অতিথি
গল্প / কলমে ছবি ব্যানার্জী
অতিথি
রবিবার রীনা আর অরিন্দম সবে ছেলে ঋদ্ধিকে নিয়ে সেজেগুজে অনেক রকম খাবার গুছিয়ে সারাদিনের জন্য চিড়িয়াখানা যাবে বলে তৈরি হচ্ছিল এমন সময় ফ্ল্যাটের কলিং বেলটা বেজে উঠল।রীনা গজগজ করতে করতে বলল–এই অসময়ে আবার কে এল?
দরজাটা খুলতেই অরিন্দম দেখল অতি সাধারণ পোশাক পড়া এক গ্রাম্য বৃদ্ধ ভদ্রলোক সংগে স্ত্রীকে নিয়ে একটা বিবর্ণ বড় ব্যাগ হাতে ক্লান্তমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে দেখে বললেন — এই যে বাবা খোকন ভালো আছিস তো?তোর ঠিকানাটা বাবা বহু কষ্টে জোগাড় করতে হল।হ্যাঁ রে আমাকে চিনতে পারছিস না খোকন?আমি তোর মনা কাকা রে।ছোটোবেলায় তুই তো আমার কোলে পিঠেই মানুষ হয়েছিস রে।তোর ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর তো মেদিনীপুরে যাওয়ার পাট উঠিয়েই দিলি। তোর ঠাকুমা অসুস্থতার খবর আমি অবশ্য জানতাম না।আমি সে সময় বাড়িতে ছিলাম না।তোর কাকিমাকে নিয়ে একমাসের জন্যে তীর্থ করতে গিয়েছিলাম।এসে সব শুনলাম। তুই গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনেছিস সেটাও শুনলাম।
অরিন্দম প্রণাম করে বলল–এইবার চিনেছি কাকা।কতো বুড়ো হয়ে গেছ তুমি?এসো এসো ভিতরে এসো।
ওদের ঢুকতে দেখে রীনা মুখে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বলল–এরা কারা?অরিন্দম বলল–রীনা ইনি আমার কাকা আর কাকিমা।বাবার জ্ঞাতি ভাই।
রীনা ঘরে এসে বলল– কোথাকার কোন জ্ঞাতি কাকা ঠিকানা খুঁজে ভর দুপুরে এখানে এসে হাজির? কোনো আক্কেল বিবেচনা নেই? সংগে ঢাউস ব্যাগ দেখে তো মনে হচ্ছে ঘাঁটি গেড়ে থাকতে এসেছে। আজ বেড়ানোর দফা তাহলে মাটি?ছেলেটা কতো আশা করে তৈরি হয়েছিল।ছিঃছিঃ পোশাক দেখে মনে হচ্ছে গাঁয়ের চাষা।এই নাকি তোমার জ্ঞাতি কাকা? —
অরিন্দম বলল–একটু আস্তে বলো রীনা।ওরা আমার আত্মীয়। আর পোশাক দেখে কখনও মানুষের বিচার কোরোনা। যাও ওদের খাওয়ার ব্যবস্থা করো। –আমাকে আবার নতুন করে কি ওদের জন্যে রাঁধতে হবে?– বয়স্ক মানুষ,এই অবেলায় আর ভাত রাঁধার দরকার নেই। তুমি বরং পরোটা মাংস আর মিষ্টি যা প্যাক করেছিলে ওটাই এ বেলার মতো দিয়ে দাও।রাতে মাছের ঝোল ভাত খাবেন।
মনা কাকা বলল–তোরা মনে হয় কোথাও বেড়াতে যাচ্ছিলি বাবা।আমরা বড় অসময়ে চলে এসেছি।আমরা খুব দরকারেই আসতে বাধ্য হলাম রে খোকন।আমরা আজকের রাতটাই শুধু এখানে থাকব।
অরিন্দম বলল–ছিঃছিঃ এটা কি বলছ কাকা? কষ্ট করে এলেই যখন তখন দিন পনেরো আমাদের কাছে থাকো।রীনা ব্যাজার মুখে বলল–কালই চলে যাবেন যদি তাহলে কষ্ট করে এত বড় ব্যাগ বইতে গেলেন কেন?এসেছেন যখন কদিন থেকেই যান।
মনা কাকা বলল–বৌমা এই ব্যাগে তোমাদের জন্য নারকেল নাড়ু, খোয়া ক্ষীরের চন্দ্রপুলি,ঘরের করা ঘি আর তোমার কাকিমার নিজে হাতে দেওয়া গয়না বড়ি,হিংএর বড়ি আছে আর কিছু আমার খেতের টাটকা সবজি আছে মা।খোকন ছোটোবেলায় তার কাকিমার হাতে এসব খেতে খুব ভালোবাসতো।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর মনা কাকা বলল–বাবা খোকন,বৌমা যে জন্য আমাদের এখানে আসা সেটা বলি। তোর ঠাকুমা আমাদের কাছে বিশ্বাস করে বেশ কিছু ভারি গয়না গচ্ছিত রেখেছিলেন। আমরা তীর্থে যাওয়ার আগে তার শরীর সুস্থ দেখেই গিয়েছিলাম।আসার পর সব শুনলাম। বছর খানেক ধরে তোর ঠিকানা চেষ্টা করেও জোগাড় করতে পারিনি। তোর ফোন নাম্বারটা পেলে তোকে আমাদের কাছে যাওয়ার জন্যে বলতাম বাবা।কয়েকদিন আগে ঠিকানাটা বহু কষ্টে পেয়েছি। এগুলো নিয়ে তোরা আমাকে দায়মুক্ত কর।