অ'(গল্প) _____@শ্রীময়ী

অ'(গল্প)
_____@শ্রীময়ী

#কেন যে বলে ফেলি এতো! এমনিতে তো চাপা স্বভাব আমার, কম কথার মানুষ, তাও মেয়েটাকে সামনে পেলেই – এটা ওটা সেটা…. উফফফফফ!
কবে শুধরোবো আমি বল তো? এতো ভুলে যাই কেন? কেন ভুলে যাই, ও বড় হয়ে গেছে – আর ছোট্টটি নেই । ওর এখন আমায় – শুধু আছি বলেই যেটুকু প্রয়োজন, যদি নাও থাকি ঠিকই ও সামলে নেবে।
এটা কেন বুঝিস না রে তুই!

আয়নায় মধ্য বয়স্ক- ঈষৎ পৃথুলা রমণীর প্রতিবিম্বে- কপালে টিপ না থাকা দাগের কাছে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিল অহনা!
কবে যে বুঝবি তুই! ও বিরক্ত হয়।
ও চায় না তোর পরামর্শ আর।ও স্বাধীন যে এখন। যখন প্রয়োজন ছিল করেছিস – এবার চুপ কর!
চোখটা কেমন ছলছল করছে আবার! উফফফ!! এই এক যন্ত্রণা! কাছের – এতো কাছের কারুর বিরক্তি দেখলেই কেমন অপমানিত লাগে! আত্মসম্মানটা টনটনে কিনা তোর!!
এতই যদি বুঝিস – তো যাস কেন বলতে –
“এটা করলে পারিস, ওটা কেন করলি…..”
বেশ হয়েছে!
নিজের জায়গায় থাক, বুঝলি! শুধু শুধু আঘাত ডেকে আনিস কেন শুনি!!

দেখেছ…. ওপারে ঐ চোখের কোলে অল্প কালি পরা মহিলা, নাকের পাটা লাল করে ফেলেছে….. এবার টুপটাপ ঝরাবি তো!
হ্যাঁ! ওটাই পারিস তুই!!
আরে বাবা! এখন কি সেই মেয়ে তোর আছে- যে…. তুই খাওয়াবি তবে তার পেট ভরবে…. নাকি তোকে জাপটে না ধরে তার ঘুমই আসবে না!
এসব বাজে ভাবনা! সর তো!!
বলে – ঝট করে পেছন ফেরে অহনা॥

#মা ও মা! আমার ব্যাগটা কি সরিয়ে রেখেছ?
উফফফ! কেন যে ঘাঁটো আমার জিনিস পত্র… বুঝিনা বাবা ! কাজের সময় কিচ্ছু পাই না! কোথায় রেখেছ দাও!!

তাড়াতাড়ি খুঁজতে যায় অহনা, কিন্তু মনে পড়লে তো!
এই এক হয়েছে বিচ্ছিরি রোগ এখন! সব ভুলে যায়…. ধুর!
– থাক! অনেক হয়েছে!
আর পাওয়া গেছে ব্যাগটা এখন!
বলে রাগে গরগর করতে করতে অফিস ছোটে রাকা।
মা টা যে কি না! সব ঘাঁটবে আর গোছাবে- তারপর…. আর সেটা খুঁজেই পায় না!
আবার আজকাল কথায় কথায় অভিমান করে- কেমন বাচ্চাদের মতো……..
অবুঝের মতো করে, যেন আমি বাচ্চা মেয়ে….. সবসময়-” সাবধানে যা, এটা খা, ওটা খেলি না… এতো তাড়াহুড়ো কিসের, আর একটু ভাত খা…..” বাপরে বাপ!
আবার এখন নতুন একটা মন্ত্র হয়েছে মায়ের –
-ঐ ছেলেটা কে রে!
কোথায় থাকে! কি করে! বাপ মা কেমন! বংশ কেমন!…….. হাজারো প্রশ্ন…..
যত বলি-
– মা ও অফিস কলিগ, বা – মা ও যাস্ট ফ্রেন্ড!
সেই আবার ঘুরে ফিরে এক কথা –
-হ্যাঁ রে! তোরা কি কিছু ভাবছিস? মানে কবে বিয়ে টিয়ে??
বোঝো কান্ড! যাকে তাকে বিয়ে!
দুদিনের বন্ধু বা চেনা শোনা হলেই কি বিয়ে করা যায় নাকি!
বললেই বলবে-
-তোর বাবার আর আমার তো ঐ কদিনের আলাপই ছিল রে!
আরে তখন আর এখন!
সত্যি ভীষণ ব্যাকডেটেড মা এখনও।
আর বাবার তো কথাই নেই, সেই কোনযুগে পড়ে আছে……..

#জানলায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ছাঁটে ভিজছে অহনা।
ভিতর থেকে – খুক খুক – কাশির শব্দ!
হুম! এটাই তো জানান দেওয়া, এতো বছর ধরে……

-ওহ তুমি এসে গেছো?

রিটায়ার করার পরেও একটা কাজের সাথে যুক্ত তুহিন।
ঐ দিনের কিছুটা সময় তো কাজের অছিলায় কাটে, তারপর আর কি…. সেই তো বাড়ি…. আর বসে থাকা টিভির সামনে….

– চা আনবো?
-জিজ্ঞেস করার কি আছে?

বলতে গেল অহনা-
নাহ্ গো এমনিই কথার কথা, যাতে আরো দুটো কথা বলো!
বললো না কিছু – চলে গেল চা বানাতে….
মানুষটা রয়ে গেল একইরকম, নিজেরটুকু পেলেই ব্যাস ….. আর কিছু খোঁজ করে না!
একটুও তো বদলাতে পারতো – অন্ততপক্ষে আজকের দিনটায়….
আবার আবার অহনা!
এতো বছর ধরে তোর চাওয়ার কি কোনও সীমা নেই রে?
যত্তো সব ফালতু চিন্তা! এত কাজের মধ্যেও ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানোর ব্যস্ততার পরেও কিকরে এসব চাওয়া পাওয়া আসে তোর? কেন ছাড়তে শিখলি না এইটুকু?
কি ভীষণ স্বার্থপর তুই অহনা তুই না শিক্ষিকা!

আবার অকারণে চোখে জল!!
গ্যাসে ফুটছে চায়ের জল……..

#রাত করে ফিরলো রাকা।
চুপচাপ ঢুকে গেছে নিজের ঘরে।
অহনা একা বারান্দায় –
বেশ বৃষ্টির হাওয়া…. ভালো লাগছে….
কান্না পাচ্ছে কেন এতো?
কিসের প্রত্যাশা তোর অহনা?
এতো চাস কেন? কম কি আছে তোর বল?
স্বামী, সংসার , মেয়ে, নিজের পছন্দসই কর্মজগত….সুন্দর ফ্ল্যাট – গাড়ি, সব…. সব তো পেলি জীবনে….. আবার কি চাস?
কি….. কি বললি?
একটু ভালবাসা!!!
হাসালি অহনা!!
এসব কি তবে এমনি এমনি এসেছে?
ভালবাসা ছাড়াই??

#তুই নিজে এতো ভুলে যাস – আর ওরা যদি একটাদিন মনে রাখতে ভুলে যায়- এমন কাঁদিস কেন রে বাচ্চাদের মতো?
বুকটা কেঁপে কেঁপে ওঠে কেমন!
দম আটকে আসে! একটা জমাট ভারী পাথর ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হতে চায়!

কোথায়!…. কোথায় ভালবাসা, বল কোথায়?

চোখ বন্ধ করে অহনা।
গাল ভেজে – চিবুক ভেজে-
একটা চিতা জ্বলছে দাউদাউ –
বন্ধ চোখের মধ্যে কল্পনায় দেখে অহনা,
কি যেন পুড়ছে ওখানে! হ্যাঁ!…. ঐ তো…..
ঐ তো ভালবাসা পুড়ছে…. প্রত্যাশা পুড়ছে….
পুড়ে ছারখার হচ্ছে তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পর্ক…..
শুধু.. অভ্যাস… চিতার একধারে বসে কেমন বিশ্রী ভাবে হাসছে….
অহনার দুচোখে ঝরঝর বৃষ্টি,
বাইরের বৃষ্টি অনেকক্ষণ থেমে গেছে…..

#হঠাৎই কেঁপে ওঠে ফোনটা-
“শুভ জন্মদিন অ’- ভালো থেকো কেমন”

মেসেজের নম্বরটা অচেনা,
কিন্তু মনে হলো – কেউ যেন স্মৃতির পাতা থেকে ভুলে যেতে যেতে, ভুলিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টার… ফল্গুধারা থেকে উঠে এলো….
কেউ একজন, কতো যুগ আগে যেন… দু একটা চিঠি লিখেছিল এই অ’ সম্বোধনে!!
©শ্রীময়ী গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *