তীর্থের পথে পথে – কেরালা কোভালাম সমুদ্র সৈকত কোয়েলী ঘোষ
তীর্থের পথে পথে – কেরালা কোভালাম সমুদ্র সৈকত
কোয়েলী ঘোষ
কেরালা রাজ্যকে বলা হয় ঈশ্বরের আপন দেশ । যারা কেরালা বেড়াতে গেছেন তাঁরা বুঝতে পারবেন ঈশ্বর যেন এক স্বর্গ রাজ্য তৈরি করেছেন । কত পর্বতশ্রেণী , সারি সারি নারকেল গাছ , সবুজ অরণ্য , ব্যাক ওয়াটার , নীল আরব সাগরের সমুদ্র সৈকত , জলপ্রপাত , পাহাড়ের ঢালে সবুজ চা বাগান , মশলা বাগান , প্রাচীন মন্দির … সব মিলিয়ে কেরালা পর্যটকদের কাছে খুব আকর্ষণীয় ।
পুরো কেরালা ঘুরে দেখতে আট দশ দিন সময় লাগে ।
এখন আমরা চলেছি কেরালার সুবিখ্যাত কোভালাম বিচ মাত্র কয়েকঘণ্টার জন্য ।
বাস চলেছে সড়ক পথ ধরে । দুপাশে সাজানো ঘর বাড়ি , কলাগাছ , নারকেল গাছ , হরেক রকমের ফুল ফুটেছে রাস্তার ধারে দেখতে দেখতে চলেছি । তিরুবন্তপুরম থেকে কোভালাম আঠারো কিলোমিটার মাত্র পথ ।
একে একে বাস এসে দাঁড়াল সৈকত ভূমিতে । সামনে উজ্জ্বল রৌদ্র স্নাত সমুদ্র । মাথার ওপর তখন দুপুরের রোদ একটা নারকেল গাছের ছায়ায় এসে দাঁড়ালাম । সামনে অনেক ডাব নিয়ে একজন কেরালিয়ন মানুষ বসে আছেন । অনেকে এসে ঘিরে ধরেছে । আমরাও সুস্বাদু ডাবের জলে গলা ভিজিয়ে নিলাম ।
ততক্ষণে সমুদ্র সৈকতে নেমে ছবি তুলতে ব্যস্ত সঙ্গীরা ।
আমি ফিরে গেছি আরো কয়েক বছর পিছনে । সেবার দাক্ষিনাত্য ভ্রমণে এসে সবশেষে আমরা দুই কন্যাসহ কোভালামে এসে দুদিন থেকেছিলাম ।
এত সুন্দর শান্ত নির্জন , পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সোনালী বেলাভূমি আমি আর দেখিনি । সমুদ্রের তটরেখা ধরে সৈকতে হেঁটে যেতে খুব ভালো লাগে । ভোরবেলায় নৌকো করে জেলেদের মাছ ধরতে যেতে দেখতাম , অনেক বেলায় ফিরে আসা ভর্তি মাছ নিয়ে । নানা সামুদ্রিক মাছ চকচক করত । সমুদ্র যেহেতু শান্ত , কাঁচের মত স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকা যায় চুপচাপ , নিশ্চিন্তে স্নান করা যায় । মাথার ওপর একটা মস্ত বড় রঙিন ছাতা ভাড়া করে এই সুন্দর প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতাম ।
বিদেশি সাহেব মেমরা রোদ্দুরে সানবাথ নিতেন । এখানে আয়ুর্বেদিক ম্যাসাজ পার্লার আছে । সাগরের ধারে কেরালিয়ান মানুষরা ম্যাসেজ করেন ।
পরপর তিনটি ধনুকের মত সৈকত কালো পাথুরে জমি দিয়ে পৃথক করা আছে । মাটিতে মিশে আছে মোনাজাইট ও ইলমেনাইট আকরিক তাই রঙ কালো । তিনটি বিচের নাম লাইট হাউস , হাওয়াবিচ , সমুদ্রবিচ । লাইট হাউস বিচে একটি বাতিঘর আছে ।
সৈকত থেকে একটু দূরে সারি সারি রিসর্ট ,হোটেল আছে ।
সেখানে পাওয়া যায় কেরালিয়ান খাবার । কলাপাতায় সাজিয়ে দেওয়া হয় লাল চালের ভাত , বিট ,গাজর ,কলা নারকেল পোস্তবাটা দিয়ে বানানো সবজি , আনারসের মিষ্টি পদ , কলাভাজা , চাটনি । সামুদ্রিক মাছ ভেজে দেওয়া হয় ,কারিমিন ভাজা , সিয়ার ফিশ খেতে খুব সুস্বাদু ।
দিনের শেষে এখানে সূর্যাস্ত দেখলে মনে হয় এখানেই স্বর্গ । মনের স্মৃতিতে রয়ে গেছে কোভালাম সমুদ্রসৈকত , যেখানে নীল সমুদ্র আর নীল আকাশ শূন্যে মিশে গেছে ।
সেই আঁকা ছবি দেখি আজো অমলিন ।
এবার ফেরার পালা ।বাস হর্ন দিতে শুরু করেছে । ফিরে আসা আবার কন্যাকুমারী ।
পরদিন সেখানে বিশ্রাম । সেদিন আবার সমুদ্রের ধারে ঘোরা আর কেনাকাটি সারা । আমরা তার পরের দিন কন্যাকুমারী থেকে হাওড়া সুপারফাস্ট ট্রেনে ফিরে এলাম হাওড়া।
চেন্নাই থেকে আমরা ভ্রমণ করেছি বাসে , কিন্তু ট্রেনে কন্যাকুমারী থেকেও শুরু করা যায় ।
চেন্নাই থেকে কন্যাকুমারী ট্রেন আছে ।
কন্যাকুমারী থেকে ট্রেনে যাওয়া যায় রামেশ্বরম । বিমানে যাওয়া যায় তিরুবন্তপুরম । সর্বত্র গাড়ি বা বাস ভাড়া পাওয়া যায় ।
সমগ্র এই ভ্রমণটি যিনি পরিচালনা করলেন সেই প্রেম মন্দিরের নিরগুনানন্দ মহারাজকে প্রণাম জানালাম ।যে সমস্ত সেবাব্রতীরা এতদিন ধরে নানা অবস্থায় রান্না করে খাওয়ালেন তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানালাম ।
” ওগো , পথের সাথী , নমি বারম্বার
পথিক জনের লহো , লহো নমস্কার
জীবন রথের হে সারথি ,আমি নিত্য পথের পথী ,
পথে চলার লহো লহো লহো নমস্কার ।।
সমাপ্ত