খোঁজ …. কলমে-তপন ঘোষাল।

||| খোঁজ …. কলমে-তপন ঘোষাল।

ফেসবুকের পাতায়, ম্যাসেঞ্জারে আর হোয়াটস্অ্যাপের নোটিফিকেশনে
যে মুখ গুলো খুঁজে চলি প্রতিদিন !
হঠাৎ কখনো দেখা পেলেও মিলিয়ে যায় নিমেষে —
নক করি বারবার তবু দেখি অফ অফ অফ !
যা চাই তা পাইনা , যা পাই তা চাইনা …
সিগারেটের প্যাকেট গুলো মুচকি হেসে বলে
পোড়াও পোড়াও আরো নিজেকে পোড়াও —
তুমি এখনো শুদ্ধ হওনি ! সম্বিত ফিরে আসে
ঠোঁটে ফিল্টারের ছ্যাঁকা খেয়ে !!!

আমার কলেজ জীবনের প্রিয় বন্ধু ছিল রক্তিম । বিধাতার অদ্ভুত এক সৃষ্টি! না পুরুষ না নারী। ———-
কলেজে ছেলেরা তাকে ডাকত বৌদি। হাত দুটো ছিল নরম তুলতুলে। মেয়েরা তাকে নিয়ে যাচ্ছেতাই মজা করত। ছেলেরা তার গোপন অঙ্গে হাত দিয়ে অতীষ্ঠ করে মারত সব সময় …. নিজের ইচ্ছামত তার চলার স্বাধীনতা ছিল না। জীবনের সমস্ত দুঃখের কথা সে আমার সঙ্গে ভাগ করে নিত। তার উপর অত্যাচারের মাত্রা যখন সীমা অতিক্রম করে গেল একদিন, আমি বলেছিলাম, ওকে ওর মত করে থাকতে দে না তোরা ..
আমার উপর ধেয়ে এল শ্লেষাত্মক উক্তি … এই এলেন রসিক নাগর! আমি দ্বিতীয়বার আর কোনো কথা বলার সাহস পাইনি কারণ আমি ছিলাম বড্ড একা। ওরা ওকে রিগিং করত , লেগপুল করত — যা সমস্ত অশ্লীলতাকে ছাপিয়ে গিয়ে ওদের মধ্যে এক পৈশাচিক আনন্দের সৃষ্টি করত। আমার বাধায় বাঁচতে পারেনি রক্তিম । একদিন কলেজ ছেড়ে কোথায় হারিয়ে গেল —-!
আজও খুঁজি তাকে কিন্তু পাইনি।

আরেকটি ঘটনার কথা খুব মনে পড়ে। সৌম্য —-
যার পারিবারিক প্রথা ছিল, ধুতি পাঞ্জাবী ছাড়া আর কোনো পোশাক পরা যাবে না। সে ওই পোশাকেই ছিল প্রাণবন্ত … সুন্দর! স্বতঃস্ফূর্ত! হটাৎ করেই একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল সে — মঞ্জুশ্রী — ধনী পরিবারের মেয়ে।
1993 — সেই সময় সে বাইক চালিয়ে কলেজ আসত, মনে পড়ে সেসব কথা ….
কত কথা, কত গান, তাদের কতকিছুর স্বাক্ষী ছিলাম আমি। একদিন মঞ্জুশ্রী তাকে বলল, ধুতি পাঞ্জাবী ছেড়ে শার্ট প্যান্ট পরতে হবে। ছেলেটির মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো এ’কথা শুনে। প্রেমকে ছেড়ে দিতে তার বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি। সৌম্যকেও খুঁজে চলি নিয়ত , কারণ তার আদর্শকে আমি শ্রদ্ধা করতাম সেই বয়সেই —
যদিও খোঁজ জারি আছে তবুও আজও তাকে পেলাম না।

এভাবেই কেটে গেল জীবনের সাতচল্লিশটা বছর! ….
কোথায় হারিয়ে গেল রক্তিম ? সৌম্য ? উত্তর আমি জানি না। আমি ওদের খুঁজে চলি নিয়ত কিন্তু কোথায় পাই ?
সত্যিই কি ওদের কোনোদিন পাব ? কি জানি !!!….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *