পান্না হলো সবুজ ©কাজরী বসু —– পর্ব ১
পান্না হলো সবুজ
©কাজরী বসু
পর্ব ১
একটু আগে আমার পেজের মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ এল।
…আমি একটু বিপদে পড়ে আপনার শরণাপন্ন হলাম। আমি কি কথাটা বলব?
মেসেজ যিনি করেছেন তাঁর প্রোফাইলে নাম রয়েছে অচেনা সোম। ডি পি হিসেবে একটি টেডি বিয়ার।
আমি সাধারণত নিজের প্রোফাইলে এই সব অদ্ভুত নামের আর ডিপির লোকজনের বন্ধুত্বের অনুরোধ স্বীকার করি না,কিন্তু আমার পেজে এমন অনেকেই লাইক দিয়ে পেজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন,যাঁরা আমার বন্ধুতালিকায় নেই।
….হ্যাঁ, বলুন প্লিজ।
…… আসলে অনেক কিছুই জানাবার আছে,আমি কি আপনাকে ফোন করতে পারি?
….বেশ তো করুন। দেখুন কনট্যাক্ট নম্বর পেজেই রয়েছে।
মাস সাতেক আগে “অনুসন্ধানে কিংশুক” বলে একটি ফেসবুক পেজ খুলেছি আমার শখের গোয়েন্দাগিরিকে একটু ঝালিয়ে নেবার উদ্দেশ্যে। ইতোমধ্যেই গোটা দুই কেস সলভ করে বেশ কিছু অর্থও উপার্জন হয়েছে, মিথ্যে বলব না।
মোবাইল বাজছে।
…..ইয়েস..
রিনরিনে একটি নারীকন্ঠ।
….নমস্কার কিংশুক। আমার আসল নাম তিস্তা সোম। আমার আপনার সাহায্য প্রয়োজন ।
….আপনি খুলে বলুন তো সবটা। কোনো কিছু হাইড করবেন না।
মেয়েটি যা বলল,তার সারমর্ম এই..
তিস্তার জন্মের পরেই ওর মা মারা যান। তিস্তাকে মানুষ করার জন্য ওর বাবা অনন্ত সোম তখন তিস্তার ছোটমাসিকে বিয়ে করেন,তিস্তার দাদু দিদা সকলেই তাতে সম্মতি দেন।
কলকাতায় একটি জুয়েলারির দোকানের মালিক ছিলেন অনন্ত। সবই ঠিকঠাকই চলছিল, হঠাৎ তাঁর গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেই সময় তিনি তিস্তাকে বলেন যে দোকান আর ফ্ল্যাটের মালিকানা যেহেতু যৌথ ভাবে ওঁর আর ওঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর,তাই মেয়ের নামে আলাদা ভাবে কিছু রেখে যেতে হয়ত পারবেন না উনি। কিন্তু বেশ কিছু দামী মণিমাণিক্য তিনি বাড়িতে গোপনে কোথাও রেখে যাবেন,যাতে তা অন্য কারো হাতে না যায়। তিস্তার প্রয়োজন হলে সেই পাথর একটা একটা করে নিয়ে সে বিক্রি করতে পারবে,যতক্ষণ না সে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়।
কোথায় রাখা আছে সেগুলো,তা জিজ্ঞেস করায় ওর বাবা বলেছিলেন, সময়মতো জানাবেন।
সেই সময় আর আসেনি। ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছিল, মোটামুটি রেসপন্ডও করছিল শরীর,দোকানেও যাতায়াত করছিলেন, ইতোমধ্যে ঘুমের মধ্যে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে তিনি মারা যান। কোথায় সেই মূল্যবান পাথরগুলো তিনি রেখে গেছেন,তা আর জানা হয়নি তিস্তার। অনন্ত সোমের মৃত্যুর পর অনেক খুঁজেছে তিস্তা,কিন্তু কোথাও পায়নি।
মনে মনে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিল সে।
আমার ফেসবুক পেজ দেখে তিস্তার মনে আশার সঞ্চার হয়েছে।
যদি কোনোভাবে তার বাবার রেখে যাওয়া পাথরগুলো তাকে খুঁজতে সাহায্য করি!
কথাগুলো শুনে আমার ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল। আমি কিছু বলার আগেই তিস্তা বলল,
একটা কথা আগেই বলে নিই। আপনার পারিশ্রমিক কিন্তু আমি সেভাবে দিতে পারব না। তবে পাথরের সন্ধান পেলে আমি আপনাকে সেখান থেকেই আপনার পরিশ্রমের মূল্যের হিসেবে কোনো একটি পাথর দিয়ে দেব। আপনি তো জানেন মণিমাণিক্যের দাম কম নয়। এছাড়া আলাদাভাবে আপনাকে কোনো অর্থ দেওয়া কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনি যদি এই শর্তে রাজি থাকেন তাহলে আমি আপনার মেসেঞ্জারে ঠিকানা দেব,আপনি দু একদিনের মধ্যে বারোটা থেকে চারটের মধ্যে একবার আমাদের বাড়ি এলে বাকি কথা বলা যাবে। তবে খুব বেশি দেরি কিন্তু করবেন না। আমার হাতে খুব একটা সময় নেই। আপনি রাজি না হলে আমি অন্য কারো সাহায্য নেব। আপনি চিন্তাভাবনা করে আমায় পিং করে দেবেন।
…আচ্ছা,একটা কথা,আপনার কি আর কোনো ভাইবোন আছে?
….না,আমার মাসির নিজের কোনো সন্তান হয়নি। আমি একাই।
ফোন রাখার পর ভাবলাম,কেসটা নিয়েই নিই। বাবা যখন একমাত্র মেয়ের জন্য মণিমাণিক্য রেখে গেছেন,তখন তা নিশ্চয়ই খুব একটা খেলো কিছু হবে না। আমার পারিশ্রমিক হিসেবে তার একটি যথেষ্টই হবে আশা রাখি।
কিন্তু পাথরগুলো তো আগে খুঁজে বের করতে হবে। কাজটা যে সহজ হবে না, তা তো বলাই বাহুল্য।
সঙ্গে সঙ্গে নয়,দু ঘন্টা বাদে জানালাম,আমি রাজি।
পরদিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ উল্টোডাঙা থেকে বাস ধরে তিস্তার দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে গেলাম। কেয়াতলা রোডে ওদের তিন কামরার ফ্ল্যাট পাঁচ তলায়। লিফটে উঠে দরজায় বেল দিতেই একটি অল্পবয়সী মেয়ে এসে খুলে দিল দরজা। প্রায় পাঁচ ফুট ছ ইঞ্চির ছিপছিপে উজ্জ্বল মুখের অপূর্ব সুন্দরী মেয়েটি। বলল,আসুন,আমিই তিস্তা।
ক্রমশ..