বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় অমিত শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর, ভয় পাই না, পাল্টা অমিতের
১৫ই মে, দিনাজপুর ডেইলি ডেস্কঃ বিদ্যাসাগর কলেজে গতকালের তাণ্ডবের ঘটনায় অমিত শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলো কলকাতা পুলিশ। পাশাপাশি গতকাল রাত থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েক জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানা গিয়েছে কলকাতা পুলিশ সূত্রে। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছেন অমিতও। সাংবাদিক বৈঠক করে অমিত বলেছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। আমরা ভয় পাই না। মমতা চাইলে নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করতে পারেন।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সঙ্ঘর্ষ এবং বিদ্যাসাগর কলেজের তাণ্ডবের ঘটনায় জোড়াসাঁকো থানা এবং আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিদ্যাসাগর কলেজের এক পড়ুয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে অমিত শাহ সহ রোড শোতে উপস্থিত বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব এবং অজ্ঞাতপরিচয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় আর্মহার্স্ট স্ট্রিট থানায়। অন্য দিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ধস্তাধস্তি এবং দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এফআইআর করে জোড়াসাঁকো থানার পুলিশ। পাশাপাশি মঙ্গলবার দুপুরে লেনিন সরণিতে রোড শোয়ের প্রস্তুতি চলাকালীন নির্বাচন কমিশনের একটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে কমিশন।
বিদ্যাসাগর কলেজের তাণ্ডবের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে, গতকাল রাতেই জানিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমার। একই সঙ্গে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছিল গ্রেফতার করা হয়েছে ১৬ জন হাঙ্গামাকারীকে। এখনও পর্যন্ত সেই গ্রেফতারি সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮। আরও বেশ কয়েক জনের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে কলকাতা পুলিশ সূত্রে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ৫৮ জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি বিজেপির মাঝারি মাপের বেশ কয়েক জন নেতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিজেপির দিল্লি শাখার মুখপাত্র তাজিন্দার পাল সিংহ বাগ্গাও। তাঁকে নিউ মার্কেট থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানা যাচ্ছে পুলিশ সূত্রে।
গত কাল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শো ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যেই বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। শুধু বিদ্যাসাগরের মূর্তিই নয়, কলেজের গেট, আসবাব ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি পুরো এলাকা তছনছ করার জন্যও অভিযুক্ত বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।
গতকাল রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছে। আগুন জ্বালানো হয়েছে। এটা ওঁর ২০০ বছর। কোনও রাজনৈতিক দলের এ-রকম হাঙ্গামা কখনও দেখিনি। বিহার-রাজস্থান থেকে গুন্ডা এনে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নিন্দার ভাষা নেই। আমি লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। বাংলার মানুষ হয়ে আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে সম্মান দিতে পারি না বিজেপির গুন্ডাদের জন্য।’’বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, শাহের রোড শোয়ে ইট ছুড়ে আক্রমণ চালিয়ে প্রথমে গোলমাল বাধিয়েছে তৃণমূলই। এমনকি রোড শো শুরুর আগেই পোস্টার-ফেস্টুন খুলে দিয়ে প্ররোচনা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছিল শাসক দল।
বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। ঘটনার নিন্দা করে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষ, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়, এবং নেতাজি পরিবারের সদস্যা এবং প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসু সহ আরও অনেকে।
আজ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামার ডাক দিয়েছে বাম দলগুলি, তৃণমূল কংগ্রেস, বুদ্ধিজীবীদের একাংশসহ আরও অনেকেই।