৩রা মে, দিনাজপুর ডেইলি ডেস্কঃ নতুন মোড় শোভন-রত্না টানাপড়েনে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশকে চিঠি পাঠাল জাতীয় মহিলা কমিশন। চিঠি পাওয়ার পরে শোভনের শ্বশুর তথা তৃণমূল বিধায়ক দুলাল দাসের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করল কলকাতা পুলিশ। বৈশাখীর বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে ইতিমধ্যেই।
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্কের টানাপড়েনের দায় কলেজ শিক্ষিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে চাপিয়েছিলেন মহেশতলার বিধায়ক তথা স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই রত্নার সঙ্গে অশান্তি শোভনের— এমন অভিযোগ তুলে একাধিক বার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন রত্নার বাবা দুলাল। তার প্রেক্ষিতেই জাতীয় মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
চলতি বছরের মার্চে জাতীয় মহিলা কমিশনকে চিঠি দিয়ে বৈশাখী অভিযোগ জানিয়েছিলেন। শোভন-রত্নার সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণ হিসেবে তাঁর নামটাকে সামনে এনে আসলে তাঁর চরিত্রহননের চেষ্টা হচ্ছে বলে তিনি সে চিঠিতে অভিযোগ করেছিলেন। তার আগে অবশ্য রত্না নিজেও বৈশাখীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন, তবে জাতীয় মহিলা কমিশনে নয়, রাজ্য মহিলা কমিশনে। তার প্রেক্ষিতে রাজ্য মহিলা কমিশন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। সে চিঠির কথা জানতে পেরে শোভন নিজে সক্রিয় হন। রাজ্য মহিলা কমিশনকে চিঠি পাঠিয়ে শোভন জানান, তাঁর দাম্পত্য সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে বৈশাখীর কোনও যোগ নেই। এ বিষয়ে বৈশাখীর কাছ থেকে জবাব তলব করা অনুচিত বলে শোভন জানান নিজের চিঠিতে। শোভনের এই চিঠিই দুলাল দাসের বিরুদ্ধে বৈশাখীর অন্যতম হাতিয়ার হয়। শোভন-রত্নার সম্পর্কের টানাপড়েনে তাঁর যে কোনও ভূমিকাই নেই, সে কথা শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজে লিখিত ভাবে স্বীকার করা সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর (বৈশাখীর) চরিত্র হনন করার চেষ্টা হয়েছে বলে বৈশাখী অভিযোগ জানান। দুলাল দাসের এই সব মন্তব্যে কর্মক্ষেত্রে এবং পারিবারিক জীবনে তাঁকে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে বৈশাখী অভিযোগ করেন। শুধু তিনি নন, তাঁর নাবালিকা কন্যা এবং তাঁর প্রবীণা মা-কেও এই পরিস্থিতির আঁচ সহ্য করতে হচ্ছে, এমনও অভিযোগ করেন কলেজ শিক্ষিকা।
জাতীয় মহিলা কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে বৈশাখী আরও জানিয়েছিলেন যে, রত্না তাঁকে খুন করার চক্রান্ত করেছেন। আলিপুর আদালত চত্বরে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতী পাঠিয়ে বৈশাখীকে হুমকি দেওয়ার একটি অভিযোগও সামনে এসেছিল। প্রথমটির প্রেক্ষিতে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বৈশাখী নিজেই। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে শোভন চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই সব অভিযোগপত্রের প্রতিলিপিও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় মহিলা কমিশনকে পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে মহিলা কমিশনকে ঠিক কী কী নথি তিনি পাঠিয়েছেন, তা নিয়ে বৈশাখী সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাবতীয় অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে কলকাতা পুলিশকে নির্দেশ দেয় মহিলা কমিশন। সেই চিঠি পেয়ে গত বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের এসিপি পদমর্যাদার এক আধিকারিক বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন বলে জানা গিয়েছে। কলকাতা পুলিশ ওই কলেজ শিক্ষিকার বয়ান তথা দুলাল দাসের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ বিশদে রেকর্ড করেছে। দুলাল দাস এবং রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বয়ানও রেকর্ড করার কথা পুলিশের। তবে সেই জিজ্ঞাসাবাদ এখনও হয়েছে কি না, তা নিয়ে কলকাতা পুলিশের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি।