শত সহস্র দীপশিখা জ্বলে উঠলো ======================= স্বপ্না চ্যাটার্জী

শত সহস্র দীপশিখা জ্বলে উঠলো
=======================
স্বপ্না চ্যাটার্জী
========================

শ্রীচরণেযু বাবা মা,

মাগো, আমি তোমাদের স্বপ্নের “দীপশিখা”, যে শিখাটি একদিন জ্বলে উঠেছিল ,তোমাদের আকন্ঠ ভালোবাসায়। তোমাদের স্নেহ, ভালবাসা, আদর আমাকে তিল তিল করে “স্বপ্ন “দেখতে শিখিয়েছে ।কত “স্বপ্ন” দেখেছি দুচোখ ভরে, তোমাদের আদর্শকে আঁকড়ে ধরে বড় হয়েছি। কিন্তু আজকাল কেন জানি না মা মনের কোনে ,এক অজানা ভয় ঘুরে বেড়াচ্ছে ।জানো মা, আমি আজকাল আকাশের কালো মেঘ দেখলে খুব ভয় পাই। আগেও তো মেঘ দেখেছি ,মুক্ত আকাশ দেখেছি, পাখির উড়ে যাওয়া দেখেছি, বৃষ্টি দেখেছি, কিন্তু কখনো তো এত ভয় পাইনি !এখন মনে হয় ,প্রতিনিয়ত কোন এক অজানা অন্ধকার যেন আমাকে গ্রাস করতে আসছে ।জানো মা আমার ভয়টাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো ।একদল নরখাদকের পৈশাচিক অত্যাচারে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল আমার দেহটা, সেই অন্তিম মুহূর্তে তোমাদের সাথে শেষ দেখাটুকুও হলো না আমার। তাই ,অনেক বেদনা বুকে নিয়ে, অনেক না বলা কথা বুকে চেপে, চলে যেতে হল আমায়। জানি, যখন এ কথা তোমরা শুনবে, তখন তোমরা আর্তনাদ করে চোখের জল ফেলতে পারবে না ,কারণ আকস্মিক ঘটে যাওয়া এমন নৃশংস ঘটনা শুনলে ,মানুষ পাথর হয়ে যায়, নির্বাক হয়ে যায় হতবাক হয়ে যায়, স্তব্ধ হয়ে যায় ।তার দুচোখ ভরে শুধু বিষ্ময় জেগে থাকে।

তোমরা দুঃখ করো না মা ,কারণ ওই পিশাচরা জানে না, শরীরের মরণ হয়, কিন্তু “আত্মা “নহন্যতে।আত্মার মৃত্যু নেই। তাই আমার বিশ্বাস, একটা দীপশিখা নিভে গেলেও আরো শত সহস্র দীপশিখা প্রজ্জ্বলিত হবে দিকে দিকে ,শহরে,গ্রামে গঞ্জে দেশে-বিদেশে। ঝড়, বৃষ্টি, তুফান অগ্রাহ্য করে তারা দিকে দিকে ঝড় তুলবে সুবিচারের আশায়। লক্ষ্য লক্ষ্য কণ্ঠ একসঙ্গে গর্জে উঠবে। জানি, সেদিনও জানালা ধরে ,তোমরা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে লক্ষ্য লক্ষ্য দীপশিখার মাঝে,তোমার দীপশিখাটিকে খুঁজে নিতে। মাগো, আমি আসবো আবার ফিরে আসবো ।আজ আমি আর কালো মেঘকে ভয় পাই না ,আমার পাশে আছে আসমুদ্র হিমাচল জুড়ে লক্ষ মানুষের মিছিল ।আমিও তাদের হাত ধরে পায়ে পায়ে হেঁটে আসছি । তুমি কোল পেতে থাকো “মা” ।আমি আসছি ,আমি তোমার কোলেই শান্তির আশ্রয় নেবো, আমি তোমার কোলেই একটু শান্তির ঘুম ঘুমাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *