জীবনবিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু কথা- পর্ব ৫

জীবনবিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু কথা- পর্ব ৫

জীবনবিজ্ঞান-এ ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: ব্যবহারিক শিক্ষা সবসময় বাস্তবভিত্তিক হয়। জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের পাঠদানের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজের হাতে পরীক্ষা করলে তারা স্পর্শে, শব্দে, গন্ধে, বর্ণে চাক্ষুষ জ্ঞান লাভ করে। চাক্ষুষজ্ঞান মানেই বাস্তবের ছোঁওয়া- সে তো ভোলার নয়। দলগতভাবে সামিল হয়ে হাতেকলমে অর্জিত বিষয়বস্তুর ধারণা শিক্ষার্থীর মনে অনেক নিখুঁত, স্পষ্ট ও স্থায়ী হয়। দেখা গেছে এই কার্যগত অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা পরবর্তী জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট কার্যকরী হয়।

শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষা নয়, সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা মনোবৈজ্ঞানিক। কারণ: এই কাজ সক্রিয়তার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

শিক্ষার্থীরা ছোটো, শিক্ষকের উপস্থিতিতে হাতে পায়ে না হলেও ওদের মন বড় চঞ্চল। শ্রেনীকক্ষের চারদেওয়ালে আবদ্ধ থেকে সামনে পাঠ্যপুস্তক খোলা রেখে শিক্ষকের বক্তৃতাপদ্ধতিতে বলে যাওয়া বিষয়ে কখনোই বেশিক্ষণ মনোনিবেশ করতে পারে না। তার চেয়ে হাতেকলমে স্পেসিমেন নেড়েচেড়ে সনাক্তকরণ ও পরীক্ষা করে বা সেকশন ডিসেকশন করে দেখতে বেশি উৎসাহী, ভালোও বাসে। এভাবে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আনন্দসহকারে জীবনবিজ্ঞান শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য সাধিত হয়।

আগে ব্যবহারিক জ্ঞান না আগে তাত্ত্বিক জ্ঞান- আমার মনে হয়- এ যথেষ্ট বিতর্কিত বিষয়। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক জ্ঞানই তাত্ত্বিক জ্ঞানের জন্ম দিয়েছে। পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ থেকে আসা হয় সিদ্ধান্তে, প্রতিষ্ঠিত হয় সূত্র, অণুসূত্র, খোঁজ চলে বিকল্প জ্ঞানের।

শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাগারে অথবা সম্ভাব্যক্ষেত্রে শ্রেণীকক্ষেই জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে ব্যবহারিক জ্ঞানলাভ করে। এতে এদের পুঁথিগত নীরস পাঠ সরস হয়ে ওঠে, অধীত বিষয়কে ঘিরে চিন্তাশক্তির বিকাশ হয়, হাতেকলমে কাজ করার ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, আস্থা ও দক্ষতা অর্জন করে- এভাবেই ক্রমে ব্যক্তিত্বের বিকাশ হয়।

ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থী শিক্ষকের সংস্পর্শে আসে ও শিক্ষকও তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। এখানেই শিক্ষক হয়ে ওঠে ফ্রেণ্ড-ফিলোজফার-গাইড। এভাবে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সুন্দর হয়ে ওঠে।

তাহলে জীবনবিজ্ঞান-এ ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরও সুসংহতভাবে দেখে নিই-

১৷ পুস্তকে বর্ণিত পাঠ অনুসরণ করে বা বিষয়ের ওপর শিক্ষকের বক্তব্য অনুযায়ী প্রাপ্ত জ্ঞান পরীক্ষাগারে ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে যাচাই করার অবকাশ থাকে বলে শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়।

২৷ শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে বিষয়বস্তুর সত্যতা যাচাই করে বলে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।

৩৷ ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে, তাদের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা বৃদ্ধি পায়।

৪৷ ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সমস্যা সমাধানের শক্তি অর্জন করে।

৫৷ ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি পায় এবং তা সহিষ্ণু ও ধৈর্য্যশীল হতে সাহায্য করে।

৬৷ ব্যবহারিক কাজগুলি দলবদ্ধভাবে করার ফলে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক মেলামেশার সুযোগ পায় এবং মত বিনিময়ের অবকাশ পায়।

৭৷ ব্যবহারিক কাজে শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীর প্রতি সমানভাবে দৃষ্টি দিতে পারেন বা লক্ষ্য রাখতে পারেন।

৮৷ ব্যবহারিক কাজে সকল শিক্ষার্থী সমান সুযোগ পায়, শিক্ষকের সমান দৃষ্টি পায়- এর ফলে হীনমন্যতাবোধের কবল থেকে রক্ষা পায়।

৯৷ ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তু আয়ত্ব করে বলে সহজে তা ভুলে যায়না।

তাহলে একটি কথা স্পষ্ট হলো যে জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে শুধুমাত্র বক্তৃতামুখী পাঠদান করলে ছাত্রদের কাছে তা অহেতুক ভীতির সঞ্চার করে। সেক্ষেত্রে চাই উপযুক্ত বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরীক্ষামূলক পাঠদান।

জীবনবিজ্ঞান ক্লাসে বারংবার শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দিতে হবে যে জীবনবিজ্ঞান মানে জীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান। জীব মানে উদ্ভিদ ও প্রাণী। আমাদের চারপাশে অতিপরিচিত উদ্ভিদ ও প্রাণীদের অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্য জানতে হলে চাই মনোযোগ, উৎসাহ ও গভীর পর্যবেক্ষণ। বিষয়টা সম্পূর্ণ অভ্যাসের ব্যাপার। শিক্ষার্থীদের জন্য চাই উপযুক্ত পরিচালনা। শুধু শ্রেনীকক্ষ বা পরীক্ষাগার নয়, প্রকৃতির মাঝেও এই বিষয়টিকে হাতেকলমে শেখার সুযোগ রয়েছে। একমাত্র শিক্ষকই দিতে পারেন যথাযথ প্রকৃতিপাঠ।

নিম্নস্তরের উদ্ভিদ থেকে শুরু করে উচ্চস্তরের উদ্ভিদ চারদিকে ছড়িয়ে আছে। শিক্ষক মহাশয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বাড়ির বা বিদ্যালয়ের কাছাকাছি স্থান থেকে সেই সব গাছপালা সংগ্রহ করতে পারে। তার মধ্যে অপরিচিত গাছকে চেনার জন্য শিক্ষকের সাহায্য তাদের প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে বা পুজোর ছুটিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাছাকাছি কোনো স্থানে বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা করতেই পারেন। শিক্ষার্থীরা সেখানকার গাছপালার সাথে পরিচিত হবে এবং ফুল-পাতাসহ বিটপ অংশ সংগ্রহ করে নিতে পারবে। তারা পরিচিত গাছপালার সাথে নতুন সংগ্রহ করা গাছগুলির সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য খুঁজে বের করবে। এ ব্যাপারে শিক্ষক তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।

উদ্ভিদের মত নানা রকম প্রাণীও পারিপার্শ্বিক পরিবেশে ছড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীর কিছু পরিচিত, কিছু অপরিচিত। আবার এমনও হয় শিক্ষার্থীরা কোন প্রাণীর নামের সাথে পরিচিত, কিন্তু চাক্ষুষ পরিচয় নেই। যেমন: তারামাছ, হাঙ্গর, জেলিফিস, সাগরকুসুম, অক্টোপাস, স্কুইড, স্কুইলা— ইত্যাদি বেশিরভাগ সামুদ্রিক প্রাণীর নাম তারা শুনে থাকলেও হয়তো চোখে দেখেনি। সেক্ষেত্রে দীঘা বা পুরীতে শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা যেতেই পারে। পাঠ্যবিষয়সূচির প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ বাড়াতে সামুদ্রিক প্রাণী সংগ্রহ করে সংরক্ষণের নিয়ম মেনে সেসব স্পেসিমেন দিয়ে বিদ্যালয়ে সুন্দর সংগ্রহশালা তৈরি করা যেতে পারে।

সুসজ্জিত পরীক্ষাগারে ছোট প্রাণী (যেমন: অ্যামিবা) বা উদ্ভিদ (যেমন: কারা, ডায়াটম, স্পাইরোগাইরা) দেখতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এগুলো শিক্ষার্থীদের দেখানোর সাথে সাথে শিক্ষক এদের সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য বলে দেবেন, শিক্ষার্থীরা সেসব লিপিবদ্ধ করে নেবে। এভাবে শিক্ষার্থীরা পাঠভিত্তিক জ্ঞানের সাথে মিলিয়ে নিয়ে খুব সহজেই সুন্দরভাবে হাতে কলমে অভিজ্ঞতা লাভ করবে।

বিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় প্রাণী বা উদ্ভিদের যদি উপযুক্ত স্পেসিমেন সংগ্রহে না থাকে তাহলে শিক্ষক চার্ট বা মডেলের সাহায্যে প্রাণী বা উদ্ভিদের সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য ছাত্রদের বোঝাবেন। শ্রেণীকক্ষে কিভাবে পাঠদান করলে ছাত্ররা জানার জন্য বেশি উৎসাহিত হবে সে বিষয়ে শিক্ষককে নব নব পন্থা উদ্ভাবনে নিয়োজিত থাকতে হবে।

আরশোলা, চিংড়ি, বিছা, মাকড়সা ইত্যাদি অতিপরিচিত প্রাণীগুলিকে সংগ্রহ করে ক্লোরোফর্মে অচেতন করে পরে পর্ব, শ্রেনী, গণ, প্রজাতি, সংগ্রহের স্থান, তারিখ, সংগ্রহকারীর নাম লেখা লেবেল আঁটা কাচের শিশিতে বা জারে রাখা ফর্ম্যালিনের দ্রবণে সংরক্ষণ করা হয়। ৩% ফর্ম্যালিনের দ্রবণ তৈরি করা হয় নিম্নোক্ত ভাবে: ফরম্যালিন- ৮৮০ সি.সি, গ্লিসারিণ ১০০ সি.সি, কার্বোলিক অ্যাসিড ২০ সি.সি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাণী স্পেসিমেনের দেহে ফরম্যালিন ইঞ্জেকশন করেও সংরক্ষণ করা হয়।

প্রজাপতিকে জালের সাহায্যে ধরে সায়ানাইড অথবা গন্ধকের ধোঁয়াপূর্ণ বোতলে প্রবেশ করিয়ে মেরে ফেলা হয়। এরপর প্রজাপতিকে একটি কার্ডবোর্ডের ওপর রাখা হয়। ডানাগুলির ওপর পাতলা শক্ত কাগজ দিয়ে আলপিনের সাহায্যে কার্ডবোর্ডে আটকানো হয়। এরপর প্রজাপতিসহ এই কার্ডবোর্ডটিকে একটি পিচবোর্ডের বাক্সে রাখা হয়। এরপর এতে কয়েকটি ন্যাপথল ফেলে বাক্সটিকে পাতলা সেলোফেন পেপার দিয়ে মুড়ে দিতে হয়। এভাবেই তৈরি করা যায় ইনসেক্ট বক্স। উপকারী পতঙ্গ, অপকারী পতঙ্গ সংগ্রহ করে লেবেল দ্বারা নাম শ্রেনী পর্ব উল্লেখ করে পৃথক পৃথক ট্রে তৈরি করা যায় এভাবেই।

সংরক্ষণের আরও এক পদ্ধতি হল ট্যাক্সিডার্মি। পায়রা বা গিনিপিগকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করার পর অন্ত্র, যন্ত্র বের করে ২৪ ঘন্টা ফরম্যালিন দ্রবণে ডুবিয়ে রাখার পর শুকোনো হয়। তারপর দেহগহ্বরে ন্যাপথল ও তুলো ঢুকিয়ে সেলাই করে দিলে পায়রা বা গিনিপিগের সুন্দর মডেল তৈরি হয়ে যাবে। ত্বক অনেকদিন পর্যন্ত অক্ষয় রাখতে এই পদ্ধতিতে সাদা আর্সেনিক পাউডার দিয়ে ত্বকের ভিতরে প্রলেপ দেওয়া হয়। এমন মডেল দিয়ে পাঠদান সর্বাঙ্গসুন্দর!

শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে রেশমমথ, মাছি ও মশার মত কিছু কিছু প্রাণীর জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের উপর সংগ্রহের কাজ চলতে পারে। যেমন মশার জীবনচক্র সংরক্ষণের কথাই বলি: যে কোনো নোংরা জলে মশা প্রচুর ডিম পাড়ে। কয়েকদিন বাদে ডিম থেকে লার্ভা বের হয়। লার্ভা নোংরা জলেই পিউপাতে পরিণত হয়। আলাদা ভাবে ডিম, লার্ভা ও পিউপা সংগ্রহ করা খুব কঠিন নয়। সেগুলি সংগ্রহ করে পৃথক পৃথক ভাবে ফরম্যালিনে ডুবিয়ে রাখা হয়। দ্রবণ থেকে ডিম, লার্ভা, পিউপা তুলে অল্প রোদে শুকোনো হয়, দুটো পরিণত মশা সহজেই সংগ্রহ করা যায়। ডিম থেকে পরিণত অবস্থা পর্যন্ত সকল পর্যায়গুলি শক্ত কাগজে আঠা দিয়ে লাগিয়ে সেলোফেন কাগজ দিয়ে মোড়ানো হয়।

একটা হার্বেরিয়াম কত কথাই না বলে— কত তথ্যসমৃদ্ধ হয় হারবেরিয়াম তা বেশ বোঝা যায়। আজ বইপত্র গুছিয়ে রাখতে গিয়ে পেলাম একটা লাইকোপোডিয়াম… হার্বেরিয়াম করার জন্য সংরক্ষিত কতো কিছুই যে এভাবে এখনো কাগজের ভাঁজে রয়ে গেছে তার হিসেব নেই। এটা হাতে নিতেই মনে পড়লো লাইকোপোডিয়াম নামের অর্থ— এর উৎস খুঁজলে পাই গ্রীক শব্দ Lukos = Wolf বা নেকড়ে, আর Pidion = diminutive of pius অর্থাৎ foot বা পা। হলো গিয়ে নেকড়ের পা। কি সুন্দর না? শিক্ষার্থী যখন শিক্ষকের কাছ থেকে এই তথ্য পাবে, তখন তার মনে প্রশ্ন জাগবে— কেন এমন নামকরণ? সে তখন লাইকোপোডিয়ামের এই অংশটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে চাইবে। শিক্ষক তখন আরও তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন— সে জানতে পারলো এটা একপ্রকার ক্লাবমস ধরণের ফার্ণ। এটি ভূমি পাইন, বা লতানে সিডার নামেও পরিচিত। এটি Lycopidiaceae family – র ফার্ণ, যার প্রায় চল্লিশ প্রকার প্রজাতি আছে। শুধু তাই নয়- প্রতিটি উদ্ভিদ কম বেশি ভেষজগুণসমৃদ্ধ। সেরকম লাইকোপোডিয়ামেরও স্পোর বা রেণু ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ।Traditional Austrian medicine হিসেবে লাইকোপোডিয়াম স্পোর পাউডার চা – এর মতো করে পান করার প্রথা আছে। গমন পদ্ধতির ত্রুটিজনিত কারণ, ত্বক, যকৃত,পিত্ত, বৃক্ক এবং মুত্রনালীর সংক্রমণ, বাত – প্রভৃতিতে এই লাইকোপোডিয়াম ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লাইকোপোডিয়াম পাউডার (স্পোর থেকে তৈরী) ওলেইক অ্যাসিডের আণবিক আকৃতি নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। স্পেসিমেনকে সামনে রেখে এভাবে পাঠদান করলে শিক্ষার্থীর সুন্দরভাবে মনে থাকবে বিষয়টি।

উদ্ভিদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে— ফুল ও পাতা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফল সহ বিটপ অংশ সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহ করা অংশটি ব্লটিং কাগজের মধ্যে রেখে জলীয় অংশ শুকিয়ে নিয়ে হার্বেরিয়াম করা হয়। ব্লটিং পেপার না থাকলে সেক্ষেত্রে খবরের কাগজ ব্যবহার করা যেতে পারে। খবরের কাগজ বেশ কয়েকবার দ্রুত পাল্টাতে হয়।

হার্বেরিয়াম ছাড়াও নিম্নশ্রেনীর উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য অন্য প্রণালীও আছে। যেমন: এফ. এ. এ দ্রবণে শ্যাওলা সংরক্ষণ করা হয়। এফ. এ. এ দ্রবণ তৈরি করা হয় নিম্নোক্ত উপায়ে: ফর্ম্যালিন- ৫ সি.সি, অ্যাসেটিক অ্যাসিড- ৫ সি.সি, কেলাসিত তুঁতে- ০.৫ গ্রাম, অ্যালকোহল (৫০%) ৯০ সি.সি। মস, ফার্ণ ও বিভিন্ন সীড প্ল্যান্ট সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায় এফ.এ.এ দ্রবণে। মস্ ও ফার্ণের জীবন চক্রও। ছত্রাক সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যে দ্রবণ নেওয়া হয় সেটি ১০০ সি.সি অ্যালকোহল, ৪ সি.সি ফরম্যালিন, ৪ সি.সি অ্যাসিটিক অ্যাসিডের দ্রবণ।

জীবনবিজ্ঞানের একটি ভালো সংগ্রহশালা তৈরি করতে শুধু উপরোক্ত বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করলেই হবে না, সর্বাগ্রে চাই কিছু করার ইচ্ছে। পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য কম নয়। প্রথমে স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে এভাবেই শুরু হোক শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পথচলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *