ট্রাম
এবারের আড্ডার বিষয়টি ছিল বেশ অন্যরকম:-
“ট্রাম”-এর সাথে কি আপনার কোন স্মৃতি জড়িয়ে আছে?
卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐
আমার বক্তব্য:-
ছেলেটা লাফিয়ে উঠলো চলন্ত ট্রামে। কেউ চ্যাঁচালো না! ট্রাম চলেছে মন্থর গতিতে একটা বিশাল পাইথনের মতো শহরের ও মাথা থেকে ওমাথা। টুং-টুং-টুং-টুং ঘন্টা বেজে ওঠে! এত ধীরগতির যানে দৌড়ে উঠলেও কেউ পড়বে না! ভয় নেই! অথচ, কবি এক ঝাপসা ভোরে কি বেখেয়ালে এই ট্রাম সংঘাতেই জীবন দিলেন!
***************************
মেয়েটি বসে আছে জানলার ধারে। একটু মিষ্টি হেসে ছেলেটিকে বসতে দেয়! ওর হাতে কলেজ ফেরত ব্যাগ, পরনে ফিকে নীল শাড়ি। ছেলেটার হাতে একটা বড়ো ব্যাগ। ও ওষুধ বেচে। শাদা শার্টটা কেচে পরলেও পকেটটা হলদেটে। দুজনেই উঠেছে সেকেন্ড ক্লাসে। পয়সা নেই!
আশির দশকে এইরকম একটা মিষ্টি ছবি মহানগীর জনজীবনে গাঁথা হয়ে থাকতো…হয়তো অনেকবার! ট্রামের এই প্রেমিকযুগলের ছবি তুলে কাগজে ছাপাতেন রিপোর্টার… শিরোনাম? “কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রামে, কিছুক্ষণ!” সঙ্গে সুন্দর একটি লেখা। ব্রিটিশ আমলের সৃষ্টি…কবে কিভাবে…সেকাল একাল এবং ভবিষ্যত!
পরিচালক সেই ফীচার পড়েই একখানা ছবি বানাতেন। সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবনের ট্রাম-জীবনের ছবি!
কাগজ পড়ে লেখকের মাথায় একটি গল্পের প্লট গিজগিজ করে ওঠে। কাগজ টেনে নিয়ে লেখেন….”একটি ট্রামের গল্প”! গল্পটি দ্রুত সাফল্য পায়।
গল্পের সঙ্গে ছবি আঁকবেন বলে এক শিল্পী ক্যানভাস নিয়ে চলে গেলেন ট্রাম ডিপোতে। জ্যান্ত দুখানা ছবি এক্সিবিশনে সবার আগে প্রকাশিত হলো! ট্রাম চলেছে শহরের বুক চিরে….জলরঙে ভাসানো তুলির আঁচড়ে !
এমনই কত ছবি, কত স্মৃতি, কত পুরনো দিন…সব সামনে আসে ট্রামের কথা ভাবলেই! বড়ো সৌখিন আত্মীয়তা যে! কলেজ থেকে শুরু করে কর্মজীবনের শুরু…. একটি দীর্ঘ সময়ের সখ্যতা।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
ধর্মতলার মোড়ে টুং করে ঘন্টা বাজিয়ে ট্রাম থামে, ছেলেটি এবং মেয়েটি নেমে পায়ে পায়ে মিলিয়ে যায় কল্লোলিনীর ভিড়ে! ওদের মতোই পুরো ট্রাম-জীবনটাই মুছে যায় মহানগরীর ঝাপসা কুয়াশায়!