ধর্ষকের মুক্তি, মৌসুমি

ধর্ষকের মুক্তি,

মৌসুমি

রাখি সোম, সবসময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।। পার্টি, সমাজ কল্যাণের কাজকর্ম।। কখনো সময় নেই তার হাতে।।রাখি দেবীর স্বামী একজন পেশায় ডাক্তার। সরকারি হাসপাতালের সুপার ।। তাদের দুই সন্তান,বড় ছেলে সুমন পোস্ট গ্রাজুয়েট করছে।।আর মেয়ে সুমনা, উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজ্যের বাইরে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।।

বাড়িতে লোক বলতে,চার জন।রাখি দেবী,তাঁর স্বামী, ছেলে সুমন এবং এক কাজের মেয়ে পপি।।পপি পনেরো বছরের এক সদ্য যুবতী মেয়ে।। সুন্দরবনের পাখিরালয়ে পপিদের বাড়ি।। অভাব অনটনের সংসারে চার ভাইবোনেরই ভালো মতো পেট ভরে না তো পপি কে খাওয়াবে কেমন করে।।তাই বাধ্য হয়ে শহরে লোকের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করতে হয়।।

ডাঃ সুজিত সোম ভালো মানুষ।।রুগী ,ক্লাব এবং ছুটির দিনে বন্ধু আর মদ এই নিয়েই তিনি থাকেন।। সংসারের দায়দায়িত্ব প্রায় নেই বললেই চলে।। ওনার স্ত্রী রাখি সব দিক সামলে নেন।।‌ কখনো কখনো বাড়িতে রুগী দেখেন। তাঁর স্ত্রী রাখির সাথে সম্পর্ক টা খুব ভালো নয় আবার খারাপও নয়।।রাখি সমাজ সচেতন নারী কিছুটা ফেমিনিস্ট ও।সব কিছুতেই রাখির ঝাঁপিয়ে পরা সুজিত বাবু পচ্ছন্দ করেন না।।

ওদিকে ছেলে সুমন, পড়াশোনা নিয়ে থাকে এমনটা ঠিক বলা যাবে না।। গীটার বাজায়,ঘরে প্রচুর বন্ধু নিয়ে আড্ডাও জমায় প্রতি সপ্তাহের রবিবারে।।পপি সব দেখে।। কিছুই বলে না কাউকে।।যে যা বলে চুপ করে শোনে।। তবে তার মালকিন রাখির অনুপস্থিতিতে সুজিত বাবু অথবা সুমন কারুর সাথেই থাকতে ভয় পায় ভীষন।। ওদের দুজনের আচরণ ওর সাথে যেন একটু কেমন কেমন।। পপির ভালো লাগে না একদম।।

পনেরোই আগষ্ট নিয়ে ক্লাবে প্রচুর দায়িত্ব রাখির।। নানান কাজ, সকালে প্রভাতফেরি, সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান।। সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও আসবেন।।এই সব কিছুর ভার রাখির উপর।।মাত্র দুদিন বাকি,তাই বাড়ি ফিরতে রাতই হচ্ছে রোজ।। সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে রাখি চমকে ওঠে।।দরজা ভিতর থেকে বন্ধ,।। অনেক বার ডাকার পরেও, কলিং বেল বাজানোর পরও কেউ খুললো না।।

রাখি ভয়ে কেঁপে উঠলো।।কি এমন হলো বাড়ির ভিতরে।। স্বামী কে বারেবারে ফোন করে, ছেলে সুমন কেও বারেবারে ফোন করে অথচ কেউ ফোনটা রিসিভ করলো না।। রাখির মনে পরলো ওর ব্যাগে একটা ডুপ্লিকেট চাবিও আছে।। ডুপ্লিকেট চাবিটা দিয়ে দরজা খুলতেই দেখে বসার ঘর অন্ধকার ঘুঁটঘুঁটে।। শুধু গেস্ট রুমের আলোটা জ্বলছে।।রাখি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেল।।রাত তখন বারোটা।। দরজা টা খুলেই চিৎকার করে উঠল।।পপি একটা কাঁচের টুকরো নিয়ে বসে আছে। সামনে পরে আছে দুটো রক্তাক্ত নিথর দেহ।।

রাখি ফোন করলো “আমার বাড়ি জোড়া খুন হয়েছে।।আর খুনি আমি নিজেই”।। পুলিশ এসে এড়েস্ট করলো রাখি সোম কে।। এ্যাম্বুলেন্স এ করে নিয়ে যাওয়া হলো পপি কে।। কোর্টে নেওয়ার আগে চারিদিক থেকে রিপোর্টাররা প্রশ্ন করতে শুরু করলো।।রাখি শুধু একটা উত্তরই দিলো “কোন ধর্ষক স্বামী এবং পুত্র হতে পারে না।। স্বাধীনতার পূর্ব লগ্নে আমার দেশকে দুই ধর্ষকের হিংস্রতা থেকে মুক্ত করলাম”।।

বন্দেমাতরম

#মৌসুমি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *