কিছুটা পথ হাঁটার পর… . শান্তময় গোস্বামী

কিছুটা পথ হাঁটার পর…
.
শান্তময় গোস্বামী
.
১)
পৃথিবীর সবগুলো স্লোগান জেগে উঠছে তোমাকে লক্ষ্য করে। স্লোগানদের পেছনে কোনো ঠোঁট নেই… স্লোগানদের নিজস্ব সুর থাকলেও ভালোবাসার স্বর নেই তাতে… কেমন যেন এক অনিবার্য যান্ত্রিক অন্তর্ভুক্তি।
ডাক্তারবাড়ির আকাশে একটা তারার মতো বেলুন চড়ে উপশমেরা উড়ে যাচ্ছে, পেল্ভিস আর কলার বোন ভাঙার আওয়াজকে উপেক্ষা করে। দলচ্যুত এক নাইটিঙ্গেল ফুল হয়ে শুয়ে থাকছে অগোছালো বিছানায়। ঘুম নয় মৃত্যুর মত এক রাত ছড়িয়ে আছে কামান্ধ আরাম ঘরে।
.
২)
প্রতিবাদ ওড়ে। ওড়ে স্মারকলিপি। রক্তচিহ্নিত পথ এঁকেবেঁকে চলে যায় শ্মশানের দিকে। মিছিলেরা আসে… রাত জাগে ছেলে-মেয়েরা। মোমের নরম আলো ফালি-ফালি কেটে নেয় রাত। আঁচড়-কামড়, কালো হয়ে যাওয়া অভিশাপ দাগ গানে গানে ফুল হয়ে ফুটে থাকে। রক্তরাঙা মেঘে ভারী হয়ে আসে আকাশ। চলো… তার নিচে যাই। একমাত্র কয়েকজনই জানে, প্রমানগুলো এলোমেলো উড়ে গেছে কার দিকে।
.
৩)
যাকে শবের ভাবে তুলসী, ধুপ আর ফুলের ভারে দেখি… তারও অশ্রু মুছে দেবার সময় মনে হয় আমি গোলাপের পাতা থেকে সরিয়ে নিচ্ছি অপমান, মুছে দিচ্ছি অত্যাচারের একটা একটা করে কৃষ্ণমেঘ আর প্রতিবাদের দাউ দাউয়ে লিখে রাখা কারো কারো গুপ্ত শ্রাবণ।
তলিয়ে যাওয়া স্মৃতির কাছে গিয়ে দাঁড়াই, অনেক এপিটাফের সারি থেকে বের হয়ে আসা নীল ব্যথা, বাড়ি ফেরার পথে মিছিলের ফাঁকে ফাঁকে চোখ রাখি… দেখি, অসংখ্য নিশিগন্ধা… প্রস্ফুটিত।
নির্জনে নিজের দিকেও তাকাই, তখন গভীর নদী থেকে কান্নারা উঠে আসে, আমাকে খুলে দেখায় জোহরের আগুন-সেঁকা রাত… পচে গলে যাওয়া সাম্রাজ্য। অলক্ষে আমার ঘর ভরে কিছু মস্তিষ্কহীন, কামাতুর মহিষদের ভীড়ে।
.
৪)
উত্তরপত্রের পিরামিড থেকে সমূহ অংক তুলে নিলে… তোমায় দেখতে পাই সারিগান অবশিষ্টে পড়ে আছো সমর্পণের হয়রানিতে… নেশার ধুসর কৌতুক আর কিছু প্যালিনড্রোমীয় স্মৃতিতে। তুমি না বললে পৃথিবীর সমস্ত প্রতিবাদ মিথ্যে হয়ে তাক করে আমাকেই। সকাল সন্ধ্যায় তোমার পায়ের কাছে নেমে আসি ফুটো ভবিতব্যের ফানুশের মতো… মনে পড়ে সেই ঝলসানো রাত্রির গোপনের কথা।
কে না জানে ছেনির আঘাত ছাড়া ভাস্কর্যের বেড়ে না ওঠার গল্প। তোমার রক্তেভেজা গাল-চিবুক একটু একটু করে শুষে যাবে লোপাট লিখনে… হারিয়ে যাওয়া সত্য খুঁজতে খুঁজতে আমার হাড়ে ফুটে উঠবে ব্যথায় গাঁথা হরিণের ছাল… মুন্ডু… অবয়ব।
.
৫)
কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার পরেই মনে হল রাস্তাটা আর নেই, সামনে অতল এক খাদ।
কিছুদূর হাঁটার পরেই বিপন্ন সূর্যের ধারাপাতে ভরে গেল নন্দনের যাবতীয় ক্যানভাস, আর মনে হল… ইতিহাস দখল সম্ভব হবে কি আর?
অথচ তোমার দিকে তাকিয়ে দেখি… তুমি তখনও লিপগ্লস, অ্যালোভেরা রোমান্টিকতা আর প্রোটিন পাউডারের নিউট্রিশান শাস্ত্রে দিব্বি ভেসে আছ আকাশে।
কিছুদূর হাঁটার পরে তোমার কি মনে হচ্ছে না আমাদের আবার ফসিলে জমিয়ে রাখতে হবে কাছিমের অপেক্ষা?
এসো… মিছিল শস্ত্রে বিপ্লবের কিছু অসম্ভব কাব্যের কথা লিখি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *