জীবনবিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু কথা— পর্ব- ১ ডরোথী দাশ বিশ্বাস

জীবনবিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু কথা— পর্ব- ১

✍️ডরোথী দাশ বিশ্বাস

মাধ্যমিক পাঠক্রমে প্রত্যেকটি বিষয়ের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে জীবনবিজ্ঞান তো একেবারে জীবনের সাথে জড়িত। উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া থেকে মানুষের পৌস্টিকতন্ত্র, উদ্ভিদের অবাত শ্বসন থেকে প্রাণীর সবাত শ্বসন— হরমোনের খেলা জানতে জানতে উৎসেচকের ভূমিকা, মস্তিষ্ক থেকে সুসুম্নাকাণ্ড, কোশ বিভাজন থেকে জনন, বংশগতি, পপুলেশন থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান— অভিব্যক্তি থেকে অভিযোজন— কি নেই, যা জীবজগতকে জানতে সাহায্য করে? বিভিন্ন জৈবনিক প্রক্রিয়াগুলো এতো সুন্দর করে পাঠক্রমে স্থান দেওয়া হয়েছে বলেই শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ রয়েছে। অথচ তারা এ বিষয়টাকে আপন করে আত্মস্থ করছে না। শুধু লক্ষ্য কি করে কত সহজে পরীক্ষায় নম্বর তোলা যায়। অথচ জীবনবিজ্ঞান হল সেই বিষয় যার জ্ঞান ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনের চাহিদা পূরণ করে। অর্থাৎ ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনে এই বিষয়টির মূল্য যথেষ্ট। যেমন:

১। ব্যবহারিক মূল্য (Utilitarian values)- যেমন: মানব সভ্যতায় সালোক সংশ্লেষের অবদান, কোহল সন্ধান ও ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধানের অর্থনৈতিক গুরুত্ব, উদ্ভিদের রেচন পদার্থের অর্থনৈতিক গুরুত্ব, মানব কল্যাণে সুপ্রজনন বিদ্যার প্রয়োগ, মেণ্ডেলের মতবাদের সাহায্যে বংশগতির ব্যাখ্যা— এ সবই জীবনবিজ্ঞানের ব্যবহারিক মূল্য।

২। শৃঙ্খলাগত মূল্য (Disciplinary values), — জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের মধ্যে সুষ্ঠ সমন্বয়কারী হরমোন ও স্নায়ুর ক্রিয়া, মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডের ক্রিয়াকলাপ, প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিবর্তক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা, ইন্দ্রিয়গুলির সুসংবদ্ধ কার্যকলাপ, সালোক সংশ্লেষ, শ্বসন, পুষ্টি, বৃদ্ধি, সংবহন, রেচন, জনন, বংশগতির মত বিভিন্ন জৈবনিক প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় কিভাবে তা জানতে হলে জীবনবিজ্ঞান আগ্রহ ও মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। তাই শারীরিক ও মানসিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় প্রয়োজন। তবেই তো শরীরের সুষ্ঠু বিকাশের সাথে সাথে মানসিক শৃঙ্খলা রক্ষিত হতে পারে। যুক্তি, বিচার ক্ষমতা, কল্পনা প্রভৃতি মানসিক ক্রিয়ার মধ্যেও সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন সম্ভব।

৩। কৃষ্টিগত মূল্য- (Cultural values).— সৃষ্টি ও সংরক্ষণই হল কৃষ্টি। সৃজনী শক্তির সংরক্ষণ প্রয়োজন। শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর অন্তরাত্মার বিকাশসাধন। অন্তরাত্মার বিকাশ ঘটলে সৃজনাত্মক কাজের প্রতি ঝোঁক আসে। জীবনবিজ্ঞানে চার্ট, মডেল, হাতে কলমে নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মত সৃজনমূলক কাজের সুযোগ আছে। জীবনবিজ্ঞানের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নানা বিজ্ঞানভিত্তিক গল্প ও কবিতা লেখার ক্ষমতা জন্মে, কল্পবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমূলক ম্যাগাজিন প্রকাশে আগ্রহ জন্মে।

(চলবে)

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *