‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি : এক অসম্পূর্ণ জীবন’,৫ম পর্ব : গীতালি ঘোষ
‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি : এক অসম্পূর্ণ জীবন’,৫ম পর্ব : গীতালি ঘোষ
এ্যান্টনি এবং সৌদামিনী ছিলেন যেন twin flame, একই আত্মা-জাত দুই দেহধারণকারী। সৌদামিনীর কল্যাণী হাতের স্পর্শে এ্যান্টনির পেশাগত জীবন ভরে ওঠে জয়ের ঝলকে। কবির লড়াইয়ে পরপর জয়ে এ্যান্টনি বিভূষিত হন। তার প্রেমময় দায়িত্ব ও তত্ত্বাবধানে সৌদামিনীর জীবন আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তারা দুজনেই আপনার মাঝে আপনি হারা হয়ে সুখের সাগরে ভাসেন। কিন্তু মানুষ এত সুন্দর দাম্পত্যকে ঈর্ষার দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। তারা সর্বদাই নানাভাবে এদের নিন্দা কটূক্তিতে জর্জরিত করে তোলে। ব্যঙ্গ বিদ্রূপে এদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। কিন্তু এদের প্রেম ছিল চিরন্তন, তাই কারোর বিষনজরেও এদের সংসার ভাঙে নি।
এ্যান্টনি সৌদামিনীর সান্নিধ্যে থেকে পূর্ণ বাঙালি হয়ে ওঠেন এবং কুণ্ঠাহীন হয়ে নিজেকে বাঙালি ও বাংলাকে নিজের দেশ বলে ঘোষণা করতে দ্বিধা করতেন না, বরং সুখ অনুভব করতেন। বাঙালি রীতি নীতি, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে দুজনে মিলিত ভাবে পালন করতেন। দুজনের একত্রিত সংসার যাপন মধুরতম হয়ে ওঠে, বহির্শত্রুদের নানা বিরোধিতা সত্ত্বেও, রক্ষণশীল বাঙালি সমাজের নানাবিধ প্ররোচনামূলক আচরণ সত্ত্বেও। এরা তাদের বাড়িতে সমস্ত উপাচার মেনে দুর্গা পূজাও করেন।
দুজনের পারস্পরিক আনুগত্য ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে উভয়ে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন কুন্ডলিনী জাগরণে, তন্ত্রের সাধনায়। তারা দুজনেই গভীর ভাবে ঈশ্বরবিশ্বাসী ছিলেন এবং একই সঙ্গে সাধনার অভ্যাস করেছেন। তাদের এই সাধনায় কিছু মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন এবং এদের অনুসারী একটি ছোট সংঘও তৈরি হয়েছিল। একটি ছোট আশ্রম তৈরি করে এরা সকলেই ঈশ্বর সাধনা করতেন। এ্যান্টনি এবং সৌদামিনী একযোগে বৌবাজারে কালীমন্দির তৈরিতে নানারকম ভাবে সাহায্য করেছিলেন। বস্তুত এদের আগ্রহেই গড়ে উঠেছিল বৌবাজারের ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি। আজও সেই কালীবাড়িতে ভক্তরা পুজো দেন নিষ্ঠাভরে। মন্দিরের মা জাগ্রত তাই তিনি ভক্তের মনস্কামনা পূরণ করেন। এই কালীবাড়ির সঙ্গে চিরদিনের জন্য যুক্ত হয়ে রয়েছে এ্যান্টনি ফিরিঙ্গির নাম।
(চলবে)