সম্পাদকীয় কলমে — গীতশ্রী সিনহা

সম্পাদকীয়

বাস্তব ও গঠনমূলক ইতিবাচক কিছু কথা ~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

ইদানীং কালে সবাইকে বলতে শোনা যায়,
পজিটিভ ভাবুন, পজিটিভ বার্তা বিনিময় করুন, পজিটিভ লিখুন —- দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচক করুন ।
প্রশ্ন আসতেই পারে পজিটিভ থিংকিং – এর পথ টা কি ! খুব সহজ সরল সাবলীল পথ।
উপলব্ধিতে ‘সৎ’ ব্যাপারটি কে আয়ত্ত্ব করতে হবে।পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে দু’বার ঘটে, একবার চিন্তায় আর একবার বাস্তবে। সুতরাং পজিটিভ ভাবনা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে অনায়াসে। সফল ও সার্থক জীবনের পথ চলা ইতিবাচক চিন্তায় পরিণত করলেই যেকোনো পরিস্থিতিতে সঠিক আলোকপাত আসবে। বাঁকাভাবে কিছু দেখলে বা ভাবলে বিষয়টি বাঁকা পথেই এগোবে। এতএব, ভাবনা চিন্তা পরিকল্পনা সোজাভাবে দেখার অনুরোধ রাখলাম। বিষয়টি এইভাবে বললে সহজ সরল হবে —– পজিটিভ থিংকিং মানে এই নয় যে, যা কিছু জীবনে ঘটবে সব কিছুই সেরা হবে ! বরং ভাবা যেতেই পারে অনিবার্য ভাবে এই সময়ের জন্য ভুল হলেও গঠনমূলক ইতিবাচক সিদ্ধান্তগুলো পরিবর্তন করুন। যে চিন্তা হিংসা, স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা সৃষ্টি করে তা কখনই পজিটিভ থিংকিং নয়। উপরন্তু, পরোপকারিতা, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং অবশ্যই সেবা… মানে অন্যের কল্যাণ কামনায় সৃষ্টিকারী ভাবনাকে স্যালুট জানিয়ে পজিটিভ থিংকিং মনে করা যেতেই পারে।

নেগেটিভ ভাবনা থেকে দূরে থাকার কিছু উপায় —~~~~~~~~~~~~~`~~~~~~~~~~~~
কিছু পরিস্থিতিতে জীবনের দাঁড়িপাল্লা পজিটিভ বিষয়ের থেকে নেগেটিভ বিষয়গুলোর ভারে নুয়ে পড়ে। তারমধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপায় সামনে আনছি। ——-
১) কিছুটা কৌশলে নিজেকে সরিয়ে রাখুন নেগেটিভ আলোচনা থেকে। আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে সমাধানের পথ দেখান বিস্ময়কর ক্ষমতার উৎস সন্ধানে।
২) চাকরি জীবনে বা কর্মস্থানে সমালোচনা সূচক আলোচনা হলে নিজেকে সরিয়ে রাখুন এবং সম্ভব হলে উপযুক্ত বক্তব্য পেশ করে আপনার কর্তব্য পালন করুন।
৩) সফলতার দুয়ার খুলে রাখুন, সন্তুষ্টির সাথে আপোষ করে সুখে থাকুন। আপনাকে দেখে নেগেটিভ মানসিকতার মানুষরা নিজেদের মানসিকতার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটাবেই।
৪) নিজেকে উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করুন, নেগেটিভ মানসিকতার মানুষরা আপনাকে দেখে হতাশাগ্রস্থ মনকে বলিষ্ঠ ভাবনায় ডুবে থাকার প্রয়াস করবে।
৫) সমস্যা কিছু নেই , আছে শুধুই সমাধানের পথ। নেগেটিভ মানসিকতার মানুষদের সাথে কথা বলার সময় হাসিমুখ এবং মুখের ভাষা সুন্দর সাবলীল গ্রহণযোগ্যতায় কাপর্ন্যহীন মনোভাব পোষণ করতে হবে।
৬) গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার জীবনের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন। নিজের ভুল থেকে নিজেই শিক্ষা নিন। সুরক্ষিত রাখুন পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষাকে। জীবনের ব্যর্থতাকে কাজে লাগান সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে নিজেই নিজেকে উদ্ধার করুন বুদ্ধি অস্ত্রের সাহায্যে।
৭) নিজের প্রতি হীনমন্যতায় ভুগবেন না, আজ যেটি অসফল – কাল সেটিই আপনার কাছে সফলতার সিংহদুয়ার। উচ্চ উপলব্ধিতে বিশ্বাস রাখুন। হয়তো, হতে পারে, আমার মনেহয়, এইরকম হলে বেশ হয় —– এমন মনোভাবের কথা উচ্চারণ করবেন না ! এই সব শব্দ আপনার মনে দীর্ঘস্থায়ী দুর্বল প্রভাব ফেলতে পারে।
৮) চিন্তা -দুশ্চিন্তা শেয়ার করুন আপনার থেকে বলিষ্ঠ মনোভাব মানুষের সাথে। অনেক সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামনে আসলে মোকাবিলা করুন সরে না গিয়ে।

প্রাসঙ্গিক ভাবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা দরকার মনে হয় , পজিটিভ থিংকিং বহনকারী কিছু বই আমাদের সকলের পড়া প্রয়োজন, ভাবতে শেখাবে, বুঝতে শেখাবে, বিনিময় করতে শেখাবে এই বই।
‘ থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ বইটির নাম আমরা সবাই শুনে থাকবো, সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট এর বইয়ের জগতে এটি একটি ক্লাসিক বই। লেখক নেপোলিয়ন হিল। আর একটি বই এর কথা না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে ‘ হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস and ইনফ্লুয়েন্স পিপল ‘ ডেল কার্নেগীর লেখা। আরও অনেক বই আছে যেগুলো আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সহায়ক।

এবার আসি, আপনি যদি কিছু অর্জন করতে চান মনেপ্রাণে, আপনাকে বিশ্বাস আনতে হবে আপনি সেটা অর্জন করতে পারবেন। দক্ষতা বা পরিস্থিতি বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। ভুল বা ব্যর্থতা আপনাকে বিশ্বাস আনতে সাহায্য করে , ভুল থেকেই দৃঢ়তা অর্জন করা যায়। কোনোক্রমে বিশ্বাসের জায়গা দুর্বল করলে চলবে না। সফলতা আপনার দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকবে। মাত্র একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে নিজেকে সফল শক্তিশালী মানুষ তৈরি করবে, পজিটিভি মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। হ্যাঁ অবশ্যই, সাময়িক ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কাজের এবং ভাবনার গতিকে দ্রুত বাড়িয়ে দিতে হবে। ফুটবল খেলার মাঠের মতো গোলপোস্ট টাই হবে কেন্দ্রবিন্দু। সমস্যার ভিতরে গিয়ে কারণ খুঁজে আনতে হবে, প্রয়োজনে নিজের সাথে নিজের একান্তে আলাপচারিতায় থাকতে হবে। নিজের কাউন্সিলিং নিজেই করুন, আপনার ত্রুটির কারণ খুঁজে আনতে পারলেই পরিত্রাণ মিলবে। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার মতো স্তরে স্তরে উঠুন।

সবশেষে বলি, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করুন। নিজেকে গুছিয়ে নিন নিপুণ কৌশলে। এই প্রসঙ্গে আরও অনেক বলার আছে… অবশ্যই আগামীতে বলবো। দলবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন আঙ্গিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবনা সফলতা আনে।

আজ একটু অন্যভাবে উপস্থিত থাকলাম সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে।
শুভকামনা শুভেচ্ছা রইল সকল কলম সাথী এবং পাঠকদের প্রতি।
সম্পাদকীয় কলমে — গীতশ্রী সিনহা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *