#লকডাউন_জীবনযুদ্ধ ( ২য় পর্ব ) #কলমে_ব্রতশ্রী_বোস
#লকডাউন_জীবনযুদ্ধ ( ২য় পর্ব )
#কলমে_ব্রতশ্রী_বোস
সপ্তাহের সাতদিনই কোলকাতায় আসে না সৌগত। দু-তিনদিন , যে দিনগুলোয় কাস্টমার পায় একসঙ্গে বেশী করে বুকিং নিয়ে নেয়। কোনওদিন দুটো তো কোনওদিন তিনটে। ঘন্টা প্রতি এক হাজার টাকা নেয় সৌগত , এটাই ওর রেট। দুটো কাস্টমার হলে দু’হাজার , তিনটে কাস্টমার হলে তিনহাজার। ঘরটা আটবছর আগেকার বন্ধু অখিলেশের। ওকে মাসে পাঁচহাজার টাকা দিতে হয়। ওটাই খুব গায়ে লাগে সৌগতর। বারবার মনে হয় এই পাঁচহাজার টাকা সংসারে দিতে পারলে আরো কি কি অভাব মিটতে পারতো। বেশ ছোট রুমের সঙ্গে অ্যাটাচড্ বাথরুম। প্রতিবার কাস্টমার চলে যাবার পর বিছানার চাদর বদলানো , রুম ফ্রেশনার স্প্রে করা , বাথরুমে এয়ার রিফ্রেশিং স্যাক ঝোলানো , হ্যান্ডওয়াশের বটল রিফিলিং করা , প্রতিবার হ্যান্ড টাওয়েল চেঞ্জ করা , রুমের স্যানিটাইজেশন এসব কাজ সৌগত নিজেই করে। এর জন্য আলাদা লোক রাখলে আরও বেশী টাকা লাগতো। এখন দামী আফটারশেভ , দামী বডিস্প্রে ব্যবহার করছে সৌগত। দামী কিছু স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টও ইউজ করছে। কিছু করার নেই , মহিলা কাস্টমারদের ইমপ্রেস করতে গেলে এসব তো করতেই হবে , নিজেকে প্রেজেন্টেবল রাখতেই হবে। এমনিতে সৌগত ভীষণই হ্যান্ডসাম। অনর্গল ইংলিশে কথা বলতে পারে। গায়ের রঙটাও পাকা আমের মতো। ছফুটের কাছাকাছি হাইট। এহেন সৌগত’র সামনে এসে অনেক তাবড় তাবড় সুন্দরী কাস্টমারও ভেবলে যায় অনেক সময়।
লকডাউনে কোম্পানী শাটডাউন হয়ে যাওয়ার পর এভাবেই রোজগার করতে হচ্ছে সৌগতকে। মাসে মোটামুটি পঁচিশ-তিরিশ মতো আসছে ঠিকই , তবে তার থেকে পাঁচহাজার টাকা হাউসরেন্ট পে করে দিতে হচ্ছে অখিলেশকে। এইতো দুদিন আগে স্টেশন থেকে সস্তায় গলদা পেয়ে কেজি দেড়েক নিয়ে নিলো সৌগত। সঙ্গে একটা নারকোল আর অল্প করে পোস্ত। স্বাতী মালাইকারী রান্না করেছিল। সারা বাড়িময় সুবাস ছড়িয়েছিলো।সেদিন বাবার মুখে বহুদিন পর একচিলতে হাসি দেখেছিলো সৌগত। “জানিস বুড়ো , গলদা বড় ভালো রাঁধতো তোর মা ….” বলতে বলতে থমকে থেমে গিয়েছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধ। চোখের কোণে চকচক করছিল একফোঁটা জল। মিঠিও খুব খুশী হয়েছিলো অনেকদিন পর ওর প্রিয় চিংড়িমাছ পেয়ে। ওদের খাওয়া হয়ে গেলে সৌগত আর স্বাতী খেতে বসে। সৌগত দেখলো সবচেয়ে বড় বড় মাছগুলোই তার পাতে তুলে দিয়েছে স্বাতী। আর তাই সে নিজের বাটি থেকে দুটো বড় মাছ জোর করে স্বাতীর মুখে ঢুকিয়ে দিলো , স্বাতীর চোয়ালটা বাঁহাতে ধরে। স্বাতী লজ্জা পেল , মনে মনে খুশীও হলো বোধহয়। যদিও মুখে বললো, “যাও ভাল্লাগেনা !”
আজ তিনটে বুকিং নিয়েছে সৌগত। মানে তিনহাজার মতো হবে। ফেরার সময় একটু বাজার করে নিয়ে ফিরতে হবে স্টেশন থেকে। একটু মাছ , দুধ আর সবজি। সকালে ডিম , পেঁয়াজ আর আলু ছাড়া আর কিছু ছিলো না দেখে এসেছে সৌগত। মোবাইল বের করে বুকিংয়ের লিস্ট চেক করে সৌগত। এগারোটায় পারমিতা মজুমদার। একটায় কল্পনা সাহা। সাড়ে তিনটেয় অন্তরা মুখার্জী। যদিও এরা কেউই মনে হয় সত্যি নাম বলে না। সে নিজেও কি বলে !!
এই অন্তরা মুখার্জী আগেও কয়েকবার এসেছে। এখন প্রতি সপ্তাহে আসছে। সুন্দরী , তিরিশের কোটায় বয়স , বড়ো বড় চোখ , সিঁথিতে একচিলতে সিঁদুর। হাবভাব দেখে অভিজাত এবং রুচিসম্পন্না বলেই মনে হয়। তবে কথা বলে একটু বেশি। গল্প করতে চায়। ভীষণ নিঃসঙ্গ বলেই মনে হয়।আগের সপ্তাহে আধঘন্টা গল্প করার জন্য একহাজার টাকা বেশি দিয়ে গেছে সৌগতকে। সাধারণত কাস্টমারদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একদমই মাথা ঘামায় না সৌগত। ফেলো কড়ি মাখো তেল। তবে এই অন্তরাকে নিয়ে না চাইতেও কেমন একটা কৌতুহল দানা বাঁধতে থাকে সৌগতর মনের মধ্যে ! ( চলবে )