পিতা ঈশ্বরচন্দ্র ও তার ব্যাক্তিগত জীবন ©অতসী চক্রবর্তী ঠাকুর

পিতা ঈশ্বরচন্দ্র ও তার ব্যাক্তিগত জীবন

©অতসী চক্রবর্তী ঠাকুর

বিদ্যাসাগরের জীবন ছিল সম্পূর্ণ রূপে মানুষ কেন্দ্রীক।সমাজের অত্যাচার থেকে মেয়েদের বাঁচানো ও সবাইকে লেখাপড়া শেখানো… এই দুটিকে মূলমন্ত্র করে তিনি তাঁর জীবনের সমস্ত শ্রম, সময়, অর্থ ব্যয় করেছিলেন।
বিদ্যাসাগর ঈশ্বর বিশ্বাসী হলেও তিনি তাঁর কর্ম দিয়ে ধর্ম ও বিশ্বাস স্থাপন করে ছিলেন।
মানুষের তৈরি অন্যায় অবিচার থেকে মুক্তিলাভ ছিল তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র।
বিদ্যাসাগর তাঁর পুত্র নারায়ণ চন্দ্রকে কলকাতায় এনে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন।
বিদ্যাসাগরের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে তা সম্ভব হয় নি।ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগামহীন আসকাড়ায় স্নেহান্ধ নাতি ক্রমশ উশৃংখল জীবনে ডুবে গিয়েছিল।
পুত্র নারায়ণ চন্দ্র একসময়ে বিদ্যাসাগরের মুখ উজ্জ্বল করে ১৮৭০ সালে কৃষ্ণনগরের বিধবা কণ্যা ভব সুন্দরী কে বিয়ে করে বাবার বিধবা বিবাহকে সমর্থন জানিয়ে তিনিই প্রথম পিতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।কিন্তু এই পুত্রই এক সময়ে উশৃংখল জীবনে ডুবে যান ফলে নারায়ণ চন্দ্রকে ত্যাজ্য পুত্র করতে বাধ্য হন।সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন।পরে নারায়ণ চন্দ্র ক্ষমা চাইলে বিদ্যাসাগর ক্ষমা করে দেন।
পারিবারিক অশান্তির কারণে বিদ্যাসাগরের জীবনে গভীর বিষাদ নেমে আসে।তাঁর অমতে বিবাহ দেবার কারণে তিনি চিরদিনের জন্য তাঁর গ্রাম বীর সিংহ পরিত্যাগ করেছিলেন। তাঁর খুব কাছের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্রাহ্মণ পন্ডিতরা তাঁর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলেন।এমন অপ্রত্যাশিত আঘাত তাঁকে হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
বিদ্যাসাগর ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন তাঁর শেষ জীবনে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কথায় বলেছিলেন যে বিদ্যাসাগর সমকালীন শিক্ষিত সমাজকে অতিক্রম করে এলিট শ্রেণীতে সহজেই প্রবেশ করলেও সেখানে তাঁর স্থান ছিল অনেক দূরে এক কোণে।কিন্তু তিনি এইসব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে কালজয়ী এক কাব্যিক চরিত্রে নিজেকে পরিণত করেছিলেন।
শেষ জীবনে তিনি কলকাতা থেকে দূরে গিয়ে সাঁওতাল পরগণার এক অধিবাসী এলাকা কর্মাডরে জীবন কাটাতে শুরু করলেন।সমস্ত আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের পরিত্যাগ করে সাঁওতালদের সরল জীবন যাপনে তিনি মানসিক শান্তি খুঁজতে শুরু করেন।এরপর শারীরিক কারণে পরবর্তি সময়ে কলকাতায় ফিরে আসেন।
তাঁর মৌলিক চিন্তা ধারার জন্য তিনি চিরদিন আমাদে কাছে অসামান্য বাঙালি হিসেবে পরিচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *