পত্র সাহিত্য / কলমে গীতশ্রী সিনহা — ভাগ্যা

পত্র সাহিত্য / কলমে গীতশ্রী সিনহা
————————————————–
ভাগ্যা

আকাশে বিদ্যুতের চমক… অদৃশ্য শক্তি আলো শব্দ গতি হঠাৎ করে তোর কথা মনে করিয়ে দিলো , গরুর বাছুর নিজের ঘরে ফিরছে… আশ্রয়ে ফিরছে, ঠিক এই সময় আমার শীর্ণ হাত কাগজ – কলম খুঁজছে তোকে কিছু লিখে রেখে যাওয়ার জন্য ! ভাবি নি তোকে কোনোদিনও চিঠি লিখতে হবে… ভাবি নি তোকে ছেড়ে থাকতে হবে ! আমরা দু’জন দুজনের ঠিকানা জানি, এমনটাই জানি চোখ বন্ধ করেও পৌঁছে যাবো ঠিক। সব পথ বন্ধ করে চলে গেলি! বাড়ির কেউ তোকে পছন্দ করতো না, তা-ও আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছিলাম কোনোভাবে শেষ দিন পর্যন্ত। অনেক ছোট্ট ছোট্ট উপহারে আমরা খুশি থাকতে শিখে ছিলাম। কিন্তু আজ, এই চিঠি যদি তোর হাতে তুলে দিতে পারতাম… এটাই সম্পর্কের শ্রেষ্ঠ উপহার হতো !
আজ আমি এক নতুন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমাদের সে-ই সব দিনের ছবি দেখতে পারছি। তোর ফ্রক, খেলনা, ছেঁড়া কাগজের টুকরো, কতো নৌকা জলে ভাসিয়ে দিবি বলে বানিয়ে রেখেছিলি, বইয়ের পাতা আজও খোলা… ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলি গোটা জীবনটাকে ! শব্দ জননী যেন এলোমেলো ভাবে শব্দের জোগান দিয়ে চলেছে কাঁপা কাঁপা হাতে তোকে চিঠি লিখছি তাই।
আজ কেন জানি তোকে নতুন করে আবিষ্কার করতে বসেছি…ভুলগুলো হাল্কা তুলোর মতো আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ… আমি মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছি তোকে নিয়ে… বৈকুন্ঠ চেতনায়।
তোর বাবা গত হওয়ার পর তোর মামাবাড়িতে আমাদের শেষ আশ্রয়, দিন কাটছিল যেমন কাটে ! ভাবতাম, ভাগ্যা নামটা তোর বাবা রেখেছিলেন, বলতেন মেয়ে আমাদের ভাগ্যবতী গো, দেখো গিন্নি আমরা সুখ – সমৃদ্ধে ফুলেফেঁপে উঠবো ! কথা, কথাই থেকে গেল। সময়ের ধুলো জমে গেল স্তরে স্তরে — ভেসে চললাম জীবনের জোয়ার-ভাটায়। ফিরলি না দুদিন ঘরে, ওই ছোকরা ভুলিয়ে-ভালিয়ে… কিছুদিন পর খরর… এলোমেলো কানাঘুষা… সোনাগাছির চৌত্রিশ নম্বর ঘরের নাম করা এসকর্ট মেয়েটি নিজের চিরস্থায়ী আস্তানা করে নিয়েছে !
পোড়া ধুপের গন্ধে বাঁচি আজ ! চলতে গিয়ে বেখেয়ালে হোঁচট খেয়ে জীবনের ঝাঁঝ নিচ্ছি শেষ যাত্রায়।
বালিশের তলায় চিঠিটা থাকলো, জানি না তুই পাবি নাকি !
ইতি….
ভাগ্যা জননী।
সময় তারিখ সব মুছে যাবে কালের বিবর্তনে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *