ফুলির রথ দেখা, #মৌসুমী

ফুলির রথ দেখা,

#মৌসুমী

জানো দিদা,চাঁপারা কইছিল গেরামের উত্তর দিকের মাঠে রথের মেলা বসবে কালকে,চলো না দিদা আমরাও যাই, রাতে দিদার পাশে শুয়ে বায়না করে ফুলি।।দিদা ফুলির চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে,ওরে পাগল মেয়ে,চাঁপা, শিউলির বাবাদের টেকা আছে।।তাই ওরা মেলায় যাবে।। এখন তুই ঘুমিয়ে পর ফুলি।।কাল আমাকে ভোরে উঠতে হবে, কথাটা বলে ফুলির দিদা পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো।।।

ছোট্ট ফুলির চোখে কিন্তু ঘুম নেই।।সে ভাবতে থাকে রথের মেলায় কত আলো আছে।।নাগরদোলনা,জিলিপি,পাঁপাড় ভাজা,ভেঁপু,বাদাম ভাজা আরো অনেক কিছু।। কিন্তু সেখানে চাঁপা শিউলিদের মতো ও যেতে পারবে না কেন?
বেড়ার ঘরের ছোট জানলা টা দিয়ে জোনাকি পোকাদের দেখতে পাচ্ছিল ফুলি।। পাশে তার দিদা অঘোরে ঘুমাচ্ছে।। বিছানা ছেড়ে ভীষন আস্তে ওঠে সে। জানলা দিয়ে তাকিয়ে থাকে কালো আকাশ টার দিকে।। মনে অনেক প্রশ্ন তার,চাঁপা শিউলিরা তো ওরই মতো তাহলে আনন্দ গুলো আলাদা কেন?ফুলির দুটো ডাগর ডাগর দৃষ্টি অপলক খুঁজে যাচ্ছে দুটো তারা কে,।।দিদা বলেছিল ওর বাবা আর মা ওই তারাদের মধ্যে আছে।।

ফুলি তখন খুব ছোট,যখন ওর মা কি যেন একটা অজানা জ্বরে মরে যায়।।তার বছর দুই পরে ওর বাবা ও একদিন ভোরে হাটে ফুল বিক্রি করতে বেরিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে।। সেই তখন থেকে ফুলি দিদার কাছেই থাকে।।।ফুলি সব একা একা করে।।চাঁপাদের মায়েরা চুল বেঁধে দেয়, খাইয়ে দেয় কিন্তু ফুলি এই সব কিছু একাই করে যদিও তাতে ওর একটুও দুঃখ হয়না।।কারণ ফুলির বুড়ি দিদা ফুলি কে খুব ভালবাসে।।দিদা ছাড়া ফুলির তো আর কেউ নেই।। এগুলো ভাবতে ভাবতে খুব ঘুম পায় ওর, দুচোখ যখন প্রায় তন্দ্রাচ্ছন্ন তখন কে যেন ওর নাম ধরে ডাকে,ফুলি,এই ফুলি।।

ফুলি ধরমরিয়ে ওঠে।।কে ডাকে এত রাতে ওর নাম ধরে।। আবার শোনে কে ডাকছে ওকে।।’ফুলি ও ফুলি মা আমার কাছে আয় একটা কথা কইব তোরে’।।ফুলি আবার বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে বাইরে গেল।। অন্ধকারে কে দাঁড়িয়ে ওখানে?ভয় পাস না ফুলি আমি তোর মা।। মা শুনেই ফুলি আনন্দে লাফিয়ে উঠলো।।মা তুমি? হ্যা রে মা তোর কষ্ট আমার আর সহ্য হলো না তাই তো চলে এলুম।। তুই রথের মেলায় যাবি? কথাটা শুনে ফুলি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল, খুব ইচ্ছে করছে মা, কিন্তু দিদা বললে আমাদের টেকা নাই,তাই যাওয়া হবে নি।।ছায়া মূর্তি একটু হেসে বলল,ও এই ব্যপার,শোন মা চৌকির নীচে একটা বাক্স আছে।।ওটা খুলে দেখবি কয়েকটা সুন্দর আসন বানানো আছে।।আসন বানানো আমার শখ ছিল।।বাক্সে এখন ও রাখা আছে।। তুই ওগুলো রথের মেলায় নিয়ে যাস।। লোকে তোর থেকে ওগুলো কিনে নেবে আর সেই টাকায় তুই মেলায় ঘুরতে ও পারবি।। আচ্ছা মা ভোর হয়ে আসছে, এবার আমি যাই।। তুই সাবধানে থাকিস।। কথাটা বলেই ছায়া মূর্তি অদৃশ্য হয়ে গেল।।

ফুলি মা মা বলে চেঁচিয়ে উঠলো।।দিদা এসে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলল,ও ফুলি মায়ের স্বপ্ন দেখলি বুঝি?।।ফুলি কাঁদতে কাঁদতে বলল,দিদা কাল রেতে মা এয়েছিল।।বাক্সে আসন বানানো আছে, মায়ের হাতে বানানো ওগুলো আজকে রথের মেলায় নিয়ে যাবো।। লোকে কিনবে।।দিদা কে কথাটা বলেই, খাটের নিচের থেকে বাক্স বের করে ফুলি দেখে কত সুন্দর সুন্দর আসন বানানো রঙ বেরঙের সুতো দিয়ে।।

সন্ধ্যার সময় দুচারটে আসন রেখে বাকি সবগুলো নিয়ে রথের মেলায় গেল ফুলি আর ওর দিদা।। কিছুক্ষনের মধ্যেই সব আসন বিক্রি হয়ে গেল।।ফুলির খুব আনন্দ।।সে দিদা কে নিয়ে পাঁপড় ভাজা গেল।। একটা সুন্দর পুতুল কিনলো এবং বাড়ি ফেরার সময় কিছু জিলিপি আর বাদাম ভাজা কিনে নিয়ে এলো।
রাতে বাড়ি ফিরে ফুলি আর ওর দিদা জিলিপি বাদাম ভাজা খেয়ে শুতে চলে গেল।। সেই রাতে ফুলির চুলে বিলি কাটতে কাটতে ওর দিদা বলল,বুঝলি ফুলি একেই বলে রথ দেখা আর কলা বেচা।। কিন্তু ফুলির কানে গেল না।।ওর তখন চোখ অন্ধকারচ্ছন্ন আকাশে দুটো জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা তারাদের দিকে।।
ওই দুটো তারা যে ওর বাবা আর মা।।।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *