ধারাবাহিক উপন্যাসিকা। কিছু কথা। পর্ব-৬ কলমে-ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।
![](https://www.dinajpurdaily.com/wp-content/uploads/2024/02/5a3b13a6-30a4-4437-80a4-3b40b57c1742.jpg)
ধারাবাহিক উপন্যাসিকা।
কিছু কথা।
পর্ব-৬
কলমে-ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।
দীপের কথা।
আমি কিছুতেই কাউকে বুঝতে দেবোনা যে, আমি জেনে গেছি আমার শেষের দিন এসে গেছে। সবাই আজকের মতো চলে গেলো। শুধু শ্রীলা আমার হাতটা আঁকড়ে ধরে বসেছিলো। ইলাদি প্রায় জোর করে টেনে নিয়ে গেল রোরুদ্যমানা তার ছোট বোনকে। আমি ফিল্মের নেগেটিভের মতো কিছু ছায়া দেখতে পেলাম যেন। এখন আবার তিমিরঘন অন্ধকার। আমার হাতে লেগে আছে শ্রীর ভিজে হাতের স্পর্শ। আমার জ্বরতপ্ত ঠোঁট দুটো আকুল হয়ে নেমে এলো আমার নিজেরই হাতে। আমার মিষ্টিদি দুহাতের অঞ্জলিতে আমার মুখটা ধরে আমার কপালে চুমু দিল। আমার কপালটা এখন ঘামে ভিজে যাচ্ছে আরো একটা স্নেহ চুম্বনের আকাঙ্ক্ষায়। আমার জীবন বাঁচাতে উদগ্রীব আমার স্ত্রী, আমার জন্য প্রার্থনা করছে আমার দাদা দিদিরা। তবু মনে হচ্ছে আমার মনে এখন কী চলছে সেটা বুঝতে কেউই আগ্রহী নয়। আমার ভেতরটা এক অবুঝ অভিমানে দুমরে যাচ্ছে। শ্রী তো থাকতে পারতো আজ! এখন রাত কতো কে জানে! অন্ধের কিবা দিন কিবা রাত কথাটা যে কী নির্মম সত্য আজ নিজের জীবন দিয়ে বুঝছি। কপালে একটা স্নিগ্ধ হাতের স্পর্শ! আমি বললাম -‘শ্রী’- ! আমার বুকের মধ্যেটায় একটা অদ্ভুত ভাঙচুর হচ্ছে। সিস্টার বললেন -‘বলুন মিস্টার ভাদুড়ি,কী কষ্ট হচ্ছে আপনার?’- আমি বললাম -‘কই, কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো’- কাউকে বলবোনা আমি আমার কষ্টের কথা। শ্রী কেন চলে গেল? মিষ্টিদি থাকলেও বলতে পারতাম। বৌদি বরাবরের মতই মিষ্টিদিকে অপমান করছিল। আমি রাঙাদিকে জিজ্ঞেস করলাম -‘অতনুদা আসেনি?’- রাঙাদি কিছু বলার আগেই বৌদি কথা কেড়ে নিলো, চিবিয়ে চিবিয়ে বললো -‘অতনু তো কোনো প্রাইমারি টিচার নয় তার কনফারেন্স মিটিং আছে বড়ো বড়ো অফিসারদের সঙ্গে। কাকলিকে এখানে পৌঁছে দিয়েই সে দমদম এয়ারপোর্টে চলে গেছে দিল্লীর ফ্লাইট ধরতে।’- আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম সুভাষদার অপমানে নীল হয়ে যাওয়া মুখটা ।আমার হাত থেকে লজেন্সগুলো কী ভাবে কেড়ে নিলো বৌদি!আমি কী সত্যিই মুখে দিতে পারতাম! আমি বুঝতে পারলাম আরো কিছু এনেছিল মিষ্টিদি। বিনের মধ্যে ভারী কিছু ফেলার শব্দ পেলাম। হয়তো তার গাছের কোনো ফল। শুধু যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেল -‘ভাই সেরে উঠে শ্রীলাকে নিয়ে আমার বাড়িতে কিছু দিন থেকে আসবি কিন্তু!’- হ্যাঁ আমাকে বাঁচতেই হবে। হঠাৎ আমার বেডটা ঘিরে ফেললো কারা যেন! যমদূত এসে গেলো তা হলে ! ফিসফিস করে সিস্টার বলছেন -‘রেকলেস লাগছে পেসেন্টকে’- ডাক্তারবাবুর গম্ভীর গলা- -‘আইসিইউ’- আমি প্রাণপণে বলে উঠলাম -‘আমি বাঁচতে চাই’-