// এক কাপ চা // পূর্বা মাইতি প্রথম পর্ব
// এক কাপ চা //
পূর্বা মাইতি
প্রথম পর্ব
ঠিকে কাজের রমাদিকে দরজা খুলে দিয়ে এসে সেঁজুতি সকালের বারান্দায় চেয়ারটা টেনে বসলো। শরতের অমল আলো গ্রিলে জড়ানো পাতাবাহার ছুঁয়ে সেঁজুতির মুখে এসে পড়লো। ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেতে লাগলো রাতের গাউন। সেঁজুতি স্হবির হয়ে রইলো
চেয়ারটায়।
কখন যে রমাদি চা এনে টেবিলে রেখে গেছে সেঁজুতির হুঁশ নেই। কিচেন থেকে বাসনপত্রের টুংটাং আওয়াজ ঘরময় ছড়াতে লাগলো। ধোঁয়া ওঠা চা ধীরে ধীরে জুড়োতে লাগলো…
সেঁজুতি ওভাবে বসতে বসতে রমাদির ডাকে ঘাড় তুললো।
বৌদি,চা টা ঠাণ্ডা হয়ে গেল যে …
বাসি কাপড় ছাড়োনি,দেখে তো মনে হচ্ছে রাতে ঘুমোওনিও …
আমি তখনই বলেছিলাম —বৌদি দাদাকে আর একটা ডাক্তার দেখাও , ওই এ্যাসাইলাম না কি যেন এখনই দেওয়ার দরকার নেই।
এখন দেখছো অর্কদা একদিন বাড়িতে নেই,আর তোমার এই অবস্থা।
অর্ক আর সেঁজুতি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দক্ষিণ কলকাতার এই ফ্ল্যাটের ফোর্থ ফ্লোরে এসে ঘর বেঁধেছিলো। অর্ক একটা এ্যাড এজেন্সিতে কাজ করে। আর সেঁজুতি একটা হাইস্কুলের সাইকোলজির টিচার।
ধীরে ধীরে করোনার আবহে অর্ক ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে থাকে আর সেঁজুতিরও স্কুল ছুটি, তাই ঘরে। ভালোই কাটছিলো। যেদিন থেকে অর্ক নো ওয়ার্ক হয়ে গেলো,সেদিন থেকে সেঁজুতি চেনা অর্ককে হারিয়ে ফেললো।
রাতদিন বিড়বিড় করতে থাকলো অর্ক …দুজনের সংসার বাট সেঁজুতির সাপোর্টেই তো চলছে …ও কি বার্ডেন হয়ে যাচ্ছে…
বাঁধা ঘর বাঁধাই সার হলো কি সেঁজুতির !
অর্ক টোটালি খাওয়া ঘুম ছেড়ে,বর্তমানে সেঁজুতির কলিকের বন্দোবস্তে বসিরহাটের কোনো এ্যসাইলামের জানলার ধারে দাঁড়িয়ে। ও যে রেলিং ধরে আকাশ দেখতে বড়ো ভালোবাসে। ওর যে ধোঁয়া ওঠা গরম চা বড্ড প্রিয়।
ন্যাতানো চা কাপের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সেঁজুতি ভাবলো,শুধু কি চা…অর্ক ঘরের ওম টুকুও কেড়ে নিয়ে চলে গেছে !