লজ্জা / কলমে – হাসি দত্ত
লজ্জা / কলমে – হাসি দত্ত
সমগ্ৰ উপমহাদেশের এক লজ্জা , এখানে বসবাস করা প্রতিটি মানুষের লজ্জা , আমার মারাত্মক লজ্জার !!!
কেনো জানেন !!!
এখানে প্রকৃতির রোষানলে মানুষ পড়ে প্রায় সময়ই ঠিক কথা, তবে এখানে মানুষের কারণেই মারা যায় অনেক অনেক বেশি ….. আমার সেই লজ্জা !! …..
আমার বলতেও লজ্জা করে ,
লজ্জাতেও আজকাল আকাল পড়েছে …..
আকাল !!! আকাল !!!!
মৃণাল সেনের ‘ আকালের সন্ধানে’ ছবিটার কথা মনে পড়ে মাঝেমধ্যেই তবে কাল থেকে মনে পড়ছে বারবার, কারনটা শেষে বলছি……
ছবিটাতে হাতুই গ্ৰামের এক বৃদ্ধের তিরষ্কার যেন বারবার নাড়িয়ে দেয় ,
” বাবুরা এয়েছেন আকালের ছবি তুলতে!!
আকাল তো আমাদিগের সব্বাঙ্গে !! ”
সত্যিইই তো , বৃদ্ধ লোকটি তো কিছু ভুল বলেন নি।
এই 2024 সালে এসেও আমাদের কঙ্কালসার চিন্তাভাবনায় টিকে আছে আকাল এবং তা বহাল তবিয়তে টিকে আছে আমাদের জীবনে এবং মননে…..
পরিচালক মৃণাল সেন ১৯৪৩ সালের আকালকে ১৯৮১ সালের সমাজজীবনের সাথে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন এই ছবির মাধ্যমে …. পুরোপুরি সফলও হয়েছেন….
আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ১৯৪৩, ১৯৬৯, ১৯৭১ এর আকালের মধ্যে নিঃশ্বাস নিই ঠিক কথা, তবে 2024 এর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে , আমার নিঃশ্বাসে আকালের গন্ধ ……
কারন আমি আকালের ভুক্তভোগী, আকাল সৃষ্টির একজন পরোক্ষ অংশীদার ……
এই ‘আকালের সন্ধানে’ ছবিতে দেখতে পাই , আকালের সময় অস্তিত্ব সংকটে পড়ে অনেকেই বেছে নেন তৎকালীন সমাজের চোখে নোংরা হিসেবে প্রতীয়মান হওয়া পথ…… কিন্তু সত্যিই কি তারা তথাকথিত নোংরা
পথ স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলো!!নাকি বাধ্য হয়েছিলো!!
এর উত্তর আমি পেয়েছি এই ছবির মধ্যেই…..
যখন এই ছবির এক চরিত্র ‘দুর্গা’ ঠিক করে, গ্ৰামে সিনেমার কাজ করতে আসা দলে সে অভিনয় করবে দুটো পয়সা পাবে, তখন দুর্গার স্বামী সমাজের দোহাই দিয়ে এই কাজে আসতে তাকে বাধা দেয়, সেই সময় দুর্গার সেই প্রতিবাদের ভাষা আজও আমাদের গালে এসে সপাটে চড় মারে , আমাদের আঁতে ঘা দেয়…… দুর্গা বলে ওঠে…….
” গাঁয়ের পাঁচজন তখনও ভাবেনি এখনও ভাবছে না। তবে আইজ কেন তারা নাক গলাতে আসে ?? ”
.মৃণাল সেন আকালের মাঝেও বলেন আরেক আকালের গল্প। আর আমরা আজ 2024 এও বহমান আকালের মধ্যে দাঁড়িয়ে সেই আকালের গল্প শুনি… বর্তমানেও টিকে আছে আকাল!! আর,আকাল!!….. পরিবারকে চালাতে কষ্ট তাই অসৎ পথে যেতে হচ্ছে। নিজের প্রতি ঘৃনা থেকে মারাত্মক ঘৃনার পথ বেছে নিতে হচ্ছে। কোনও একটা অন্যায়ের আশঙ্কায় আরেকটি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে হচ্ছে……
মাঝেমধ্যে প্রচন্ড কান্না বেরিয়ে আসে, হেরে যাওয়ার কান্না, আকালকে তোষন করার কান্না…..
আমরাই আকাল সৃষ্টি করছি আবার আমরাই আকালকে সামাল দিচ্ছি , তাই মনের ভেতরে টিকে আছে প্রচণ্ড দুঃখবোধ, যা প্রায়ই বেরিয়ে আসতে চায়…….
এবার বলি….এতক্ষন ‘আকালের সন্ধানে’ ছবিটা নিয়ে এতগুলো কথা লেখার অন্যতম কারন , এই ছবির সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটেছিল যে অভিনেত্রীর অভিনয় দেখার আগ্ৰহে , তিনি হলেন ‘ওঁ শ্রীলা মজুমদার’..
গতকাল তিনি পরলোকগমন করেছেন…..
এই মহান অভিনেত্রীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি
লেখা কপিপেষ্ট করবেন না, শেয়ার করতেই পারেন