আবছায়া ****** গীতালি ঘোষ
দ্বিতীয় পর্ব
আমি অন্য ঘর গুলো দেখতে গেলাম। আমাকে শৌণক স্যারকে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট দিতে হবে। এখানে দেখছি আরেকটা বেডরুম আছে। সিঙ্গেল বেডে সুদৃশ্য বেডকভার পাতা। একটা ছোট টেবিল আছে যেখানে একটা অ্যালবাম দেখলাম। সেটা আমি তুলে নিলাম আর একটা জিনিস পেলাম আমি ড্রয়ার খুলে। সেটা একটা অসমাপ্ত চিঠির শুরু–” তোমাকে কিছু বলার ছিল কিন্তু বলার সুযোগ পাচ্ছিনা”— তারপর আর লেখা হয়নি। বেশ গোটা গোটা অক্ষরে লেখা। বুঝলাম লেখক বা লেখিকা এই চিঠিটা শেষ করেননি। সেটাও আমি তুলে নিলাম। পাশেই রান্নাঘর, একটু ছোট কিন্তু মোটামুটি সাজানো গোছানো। আমি কিচেনে ঢুকে দেখি একটা বাটিতে কিছু খাবার রয়েছে, ভালো করে দেখে বুঝলাম আধ খাওয়া নুডলস। কিন্তু পাশেই একটা বড় ধারালো পিন পড়ে রয়েছে। ওটাও আমি তুলে নিলাম। ছোট্ট খাবার ঘরে ফ্রিজ, ছোট কাঠের টেবিল– সেসব মোটামুটি বিন্যস্তই রয়েছে।
পাশে একটা গ্যারেজ। পুলিশ বোধহয় ঢুকেছিল। ক্রন্দনরত স্বামীটিকে নিয়ে গেছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। আমি সমবেত জনতার সঙ্গে কিছু কথা বলার উদ্দেশ্যে এগোলাম। একজন ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন নিজের থেকেই। এসে কথা বলতে শুরু করলেন
— ম্যাডাম আমি কি একটু কথা বলতে পারি?
— নিশ্চয়ই, বলুন।
— আমি সুধা, মানে ভিক্টিমের বন্ধু। এই মৃত্যুটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়। ওকে খুন করা হয়েছে!
— আপনি কি করে জানলেন?
— আমি ওদের ভালো করেই চিনি। আমার নাম শান্তা সেন। আমি ওই দুটো বাড়ি পরেই থাকি। আমরা খুবই বন্ধু। সুধার হাজবেন্ড ঋভুরসঙ্গেও আমার ভালো জানাশোনা আছে। এটা কিছুতেই স্বাভাবিক মৃত্যু নয়।-
— আপনি কিসের ভিত্তিতে এটাকে খুনের ঘটনা বলছেন? শান্তা একটু দম নিয়ে চারপাশে তাকিয়ে একটু নিচু গলায় বলল,
— অনেক কিছু বলার আছে আমার। আপনি আমার বাড়িতে আসতে পারবেন?
আমার তো এখন আমার বসকে রিপোর্ট দিতে হবে তাই ওনাকে বললাম যে আমি পরে আসবো।
বাকি জনতা ধীরে ধীরে সরতে শুরু করেছে। আমি বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে গেলাম। শৌণককে সবকিছুই বললাম, আর দুজনে অনেকক্ষণ ধরে কেসটা সম্পর্কে আলোচনা করলাম। দুজনেই এ ব্যাপারে একমত হলাম যে এটা খুনেরই ব্যাপার! কিন্তু সন্দেহজনকের তালিকায় কে কে থাকতে পারে, সেটাই এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
পুলিশ দপ্তরে কথা বলে শৌণক আর আমি আবার স্পটে গেলাম। প্রথমেই গেলাম বাড়িওয়ালা শ্যামল বাবুর বাড়িতে। প্রাথমিকভাবে সকলেই বললেন ওই দম্পতি খুবই নির্বিরোধী, হাসিখুশি সহজ-সরল দাম্পত্য জীবনই সকলে দেখেছে। দুজনের মধ্যে বেশ ভাব ভালোবাসা ছিল বলেই তিনি মনে করেন। কথাবার্তার মধ্যে হঠাৎ করে শ্যামল বাবুর ১০-১২ বছরের ছেলে হঠাৎ বলে উঠলো, –
— কাল রাতে চিৎকারটা বল।
শ্যামল বাবুর স্ত্রী তাড়াতাড়ি ওকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন ভিতরে। শৌণক এবার জিজ্ঞেস করল,
— চিৎকারের কথা কি বলছিল ও?
শ্যামল বাবু একটু ইতস্তত করে বললেন,
—- না, কাল রাতের দিকে দুজনের মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি হচ্ছিল….তো স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এরকম তো হতেই পারে, মনে হয় তেমন কিছু নয়।
আমরা দেখলাম, শ্যামলবাবু এই ব্যাপারে খুব একটা জড়াতে চাইছেন না। আর বিশেষ প্রশ্ন না করে এবার আমরা শান্তা সেনের বাড়ি গেলাম। তার কাছ থেকে বরং অনেক নতুন খবর পেলাম। শান্তা এবং সুধা চ্যাটার্জি খুবই বন্ধু। দুজনে প্রায়ই এখানে ওখানে ঘোরেন, শপিং করেন, সিনেমা দেখেন। কখনো কখনো কারোর বাড়িতেও আড্ডা হয়। সুধার স্বামী ঋভুও কখনো কখনো আড্ডায় শামিল হয়। সঙ্গে শান্তার স্বামী প্রবালও থাকে। মোটের ওপর ওরা ফ্যামিলিগত ভাবেই খুব বন্ধু। আর একটা কথাও জানা গেল শান্তার কাছ থেকে। সুধার এখন পর্যন্ত বেশ অনেকবার মিসক্যারেজ হয়েছে। তার জন্য ডাক্তার বারবার বলেছিলেন, বাচ্চার জন্য আর চেষ্টা যেন ওরা না করে। তবে সুধার জীবন সংশয় হতে পারে! দরকার হলে দত্তক নিতে। ডাক্তারের এই কথা শুনে ঋভু কাউকে না বলে নিজে ভ্যাসেকটমি করে আসে। সুধা জানার পরে দুজনের মধ্যে ঝগড়াও হয়। এই খবরটা আমাদের কাছে খুবই চমকপ্রদ। এটা এই খুনের কেসে একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।