স্পর্শ / সুদেষ্ণা সিনহা (৪)

Pinky tied.hands images

স্পর্শ / সুদেষ্ণা সিনহা
(৪)

সুধন্যবাবুর বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে রাবেয়ায়। কার আবার কি হল! বুড়াবাপটার কিছু হল নাকি আবার!
কাল সন্ধ্যেতে রুটিদুটো এক ছটাক দুধে ভিজিয়ে চামচে করে খাওয়াতে গেলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল মানুষটা।
রাবেয়া ধমক দিয়েছিল, “মুখ ফিরাইয়া লইতাছো ক্যান বাপ।খাইয়া লও না ! এমনডা করলি হইবো ! কখুন টেরেন ধরুম বলতো! ওইখানেও তো পোলাডা আমার পথ দ্যাইখ্যা ঘরবার করত্যাসে।”
— “টেবিলে ঢাকা দিয়ে রাখ।পরে খেয়ে নেব।তুই চলে যা,” সুধন্যবাবু বলেছিলেন।
রাবেয়া আর অনুরোধ করেনি।বুড়াবাপের কথামত জামাকাপড় বদলে সে বেরিয়ে এসেছিল গতকাল।

তাদের গ্রামে পঞ্চায়েতের অফিসের পিছনে একটা পীরের দরগা আছে।সবাই বলে খুব জাগ্রত! মন শুদ্ধি করে যা চাওয়া যায় তাই দেন নাকি পীরবাবা!
একবার সে পুকুর থেকে স্নান করে পুলুর চোখের জন্য মানত করেছিল সেখানে।তার পোলাডা অবশ্য চোখের আলো পায়নি এখনো!

বড় বড় করে পা ফেলে এগোয় রাবেয়া। বুকের ভিতরটা ধড়ফর করছে। অদৃশ্য পীরবাবার উদ্দেশে জোড়া দুই হাত কপালে ছুঁইয়ে অস্ফুটে সে বলে, পীরবাবা বাপটারে সুস্থ রাইখ্যো।পোলাডা বিদেশ-বিভুঁইয়ে। মানুষটা যেন সুস্থো থাইক্যে। তোমারে জোড়া ঘুড়া দিমু।

অ্যাম্বুলেন্সের কাছাকাছি আসতে সাবিত্রীদিদির সাথে দেখা হল।দরজায় তালা লাগাচ্ছে সাবিত্রিদিদি।
চোখাচোখি হতেই বলল, “একটু আগে দাদাবাবুর ব্রেনষ্ট্রোক হয়েছে।এ সব তো বুঝিনা!
দেখি মানুষটার ঘোলা চোখদুটো কেমন উপর পানে উঠে যাচ্ছে, দাঁতে দাঁত আটকে গেছে,আর শরীর ছেড়ে দিয়েছে। দৌড়ে গিয়ে পাশের বাড়ির দাদাকে ডেকে আনলাম। উনি ডাক্তার ডাকলেন। ডাক্তার বলল তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে।তুই যাবি রাবেয়া? চল না কেমন ভয় ভয় করছে আমার। ”

অ্যাম্বুলেন্সের সামনে ড্রাইভারের পাশে বসেছে পাশের বাড়ির দাদা। অ্যাম্বুলেন্সের পিছনে একটা সিটে শুয়ে আছে বুড়াবাপ।
আরেকটা সিটে সাবিত্রী আর রাবেয়া।

মানুষটার চোখদুটো বন্ধ।মনে হচ্ছে যেন ঘুমোচ্ছে। চোখদুটোতে জল ধরে রাখতে পারে না রাবেয়া।গাল বেয়ে ঝরে পড়ে নোনা জল।

কত বছর হয়ে গেল ! মানব সেবা আয়া সেন্টার থেকে সুধন্যবাবুর নাম-ঠিকানা পেয়ে সে সুধন্যবাবুর বাড়িতে আয়ার কাজ ঠিক করতে এসেছিল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *