আসুন, সম্পর্ককে সম্মান করতে শিখি ———কলমে / প্রভাত
আসুন, সম্পর্ককে সম্মান করতে শিখি
——————————————————-
কলমে / প্রভাত
জীবনের এই পর্যায়ে এসে ভিষণ মিস করি সেই ফেলে আসা দিনগুলো। মিস করি সেই পত্র মিতালী, সেই রাত জেগে চিঠি লেখা, সেই নির্মল বন্ধুত্ব। তখন হয়তো এত আলোর ঝলকানি ছিলনা। ছিলনা এত জৌলুস কোন কিছুতে। এত না থাকার মাঝেও তখন সবকিছুতেই প্রাণ ছিল। ছিল আন্তরিক ঔজ্জ্বল্য, যার বিকিরণ ছুঁয়ে গেছে প্রাণ থেকে প্রাণে, মন থেকে মননে। আজ তার বড্ড অভাব!!
এখন দূরত্ব কমেছে। জীবনে এসেছে সহজবোধ্যতা। মন চাইলেও এক লহমায় পুরো বিশ্বটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা সম্ভব। বিজ্ঞানের আধুনিক দানে আমাদের জীবন হয়তো সহজ হয়েছে, কিন্ত আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের হৃদয়ের গহীনের লালিত আবেগ, অনুভূতি,পারস্পারিক টান, নির্মল বন্ধুত্বকে। রুদ্ধ হয়েছে আমাদের স্বাভাবিক সকল সম্পর্কের গতিপথ! হাইব্রিড উদ্ভাবনী কনটেন্টগুলো আমাদের সব সম্পর্ককে বড্ড বেশী মেকী আর হাস্যকর করে ফেলেছে!!
আসলে সম্পর্ক হল স্বচ্ছ জলের মত। তাকে আপনি যেভাবে যে রূপে দেখতে চাইবেন, সেও তার দর্পণে তার রূপটি সেভাবেই প্রকাশ করবে। প্রতিটি সম্পর্কই যেমন একটা যৌক্তিক মানদন্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকে, তেমনি তার স্থায়িত্বও নির্ভর করে কতগুলি মৌলিক, মানবিক বিষয়ের আদান- প্রদানের উপর। এর ব্যাত্যয় ঘটলেই তা অসুন্দর, অসংলগ্ন হয়ে পড়ে।
কেবল পাওয়ার মানুষিকতা একটি সুন্দর সম্পর্কের অপমৃত্যু ডেকে আনে। সেটা সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রয়োজ্য। হতে পারে সেটা আপনার নিজ ঘর, কর্মস্থল, অথবা আপনার অতি প্রিয় মানুষ, বন্ধু যে কেউ। নিত্য পেয়ে পেয়ে আপনি যদি কেবল ধন্যই হতে থাকেন, তবুও সে অকৃত্রিম দানের প্রতিদান দেবার বিন্দুমাত্র মানুষিকতা আপনার ভেতরে তৈরী’ই না হয়, তবে সে সম্পর্ক নিশ্চিৎ মুছে যাবে। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ,সহনশীলতা সম্পর্কের প্রতি সম্মানবোধ যেমন তার ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে, তেমনি তার বিপরীত অবস্থান সম্পর্ককে করবে অসহনীয় ও হাস্যকর!!
ইনিয়ে বিনিয়ে সহজ কথাকে এত লম্বা করার একটাই কারণ– প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রেই সেই মৌলিক জিনিসগুলোর বড্ড অভাব বোধ করি আজকাল। অথচ একটুখানি আন্তরিকতা, একটুখানি যত্নেই প্রতিটি সম্পর্কই হতে পারে সুন্দর প্রাঞ্জল, মোহনীয়। আমরা কি প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে এইটুকু আন্তরিক হতে পারিনা?
আধুনিক ভার্চুয়াল জগৎ আমাদের বন্ধুত্বের পরিসরকে হয়তো অনেকখানি প্রসারিত করেছে কিন্তু আন্তরিকতার প্রশ্নে সেখানেও একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন আমাদের সারাক্ষণই চোখ রাঙায়!!
সম্পর্কের আধুনিক বিবর্তনে আমরা ঠিক কতটা দায়ী সেটাও একটা বিরাট প্রশ্ন!! যাপিত জীবনের সীমাহীন চাাপ, অনমনীয় মনোভাব,সময় স্বল্পতার যাঁতাকলে আমরা আজ পিষ্ট। সর্বোপরি ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, ইগো প্রবলেম প্রতিটি সম্পর্ককেই কঠিন থেকে কঠিন করে তুলেছে। তাই এই কাঠিন্যে দ্রবীভূত হতে না পেরে, মন ফিরতে চাইছে সেই ফেলে আসা অতীতে—- যেখানে সারল্যে সিঞ্চিত ছিল সম্পর্কের গতিধারা।
ঢাকা, ৪ মে,২৩ ইং।