বিষয়-কবিগুরুকে পত্র প্রেরণ। # শিরোনাম-তোমার পূজার ছলে। # কলমে- ছন্দা চট্টোপাধ্যায়
# বিষয়-কবিগুরুকে পত্র প্রেরণ।
# শিরোনাম-তোমার পূজার ছলে।
# কলমে- ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।
শ্রীচরণকমলেষু
প্রাণের ঠাকুর,
হ্যাঁ, তুমি যে আমার প্রাণের ঠাকুর সে কথা তোমার তো অজানা নয়। আমার ঠাকুরঘরে তোমার ছবিও আছে তো! আছে ছোট্ট ছোট্ট থালা গেলাস। নৈবেদ্য নিবেদন করি রোজ। একটু ফুল দিই। তাই তোমার আনন্দ আমার ‘পর। তাই তো গুছিয়ে লিখতে পারছি যে, সে তোমারই দান। ছোটবেলা থেকেই তোমার গান তোমার কবিতা শুনে বড় হওয়া আমার। তোমার আশীর্বাদে আমার অন্তরে বিচিত্র অনুভূতির তুফান ওঠে। তাই তো আমি কখনো বিসর্জনের হাসি। যে বিস্মিত ব্যথিত স্বরে জিজ্ঞেস করে–” রাজা এতো রক্ত কেন?”- কখনো বা আমি রক্তকরবীর নন্দিনী। আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা ও তার অপরিসীম প্রতাপ থেকে, শোষণ থেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছি আমি।তোমার নির্দেশে ঠাকুর। কখনো যোগাযোগের কুমুদিনী। যে রুচি,শীলে,সম্পূর্ণ ভিন্ন মানসিকতাসম্পন্ন,যার অন্তর বিদ্রোহে পরিপূর্ণ,স্বামীর কাছে যে নতিস্বীকার করে শুধু মাতৃত্বের অধিকার বোধ থেকে, সমাজের বাধ্যবাধকতা থেকে। নারী হৃদয়ের এই ট্র্যাজেডি তোমার মতো করে কয়জনা উপলব্ধি করতে পারে গো ঠাকুর?
হে প্রাণের ঠাকুর- -“তাই তোমার আনন্দ আমার পর, তুমি তাই এসেছো নিচে,আমায় নইলে”-হে রবিঠাকুর -“তোমার প্রেম হতো যে মিছে।”- তুমিই শিখিয়েছ ভালোবাসতে;–মানুষকে, এই মহান বিশ্বপ্রকৃতিকে- তার নদী, পাহাড়,সাগর, বৃক্ষলতা,ফুলফল ঋতুবৈচিত্রকে। তোমার কাছে শিখলাম আষাঢ়ে বৃক্ষরোপন করতে, পৌষের মেলায় হারিয়ে যেতে, বসন্তে লাবণ্যে পূর্ণ করতে প্রাণ।
তুমি মানবতার পাঠ দিয়েছ রাখি বন্ধন উৎসবের মাধ্যমে। তোমার লেখা-“জন গণ মন”- আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। আজ এই দেশের তোমাকে বড্ড প্রয়োজন ছিল, নির্যাতিত মানুষের পাশে তোমার উপস্থিতি বড় দরকার ছিলো গো ঠাকুর!
কিছুদিন আগে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম। তোমার স্মৃতিবিজড়িত জায়গা ঘুরতে গিয়ে দেখি সব বন্ধ। পাঁচিলের এপাশ থেকে খালি উঁকি দেয়ার চেষ্টা করছি। তোমার উপাসনাগৃহের একটা ঝলক দেখলাম। কারও মধ্যে তেমন আকুলতাও দেখলামনা। সবাই ব্যস্ত সোনাঝুরির হাট থেকে সৌখিন জিনিস কিনতে।পঁচিশে বৈশাখে, আর বাইশে শ্রাবণে কোনমতে দিবস পালন করলেই কর্তব্য শেষ। ভীষণ কষ্টে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। আরো কষ্ট হয় যখন শুনি গ্রীষ্মের ভরা দুপুরে কেউ রবীন্দ্রপ্রীতি প্রদর্শনের জন্য মোবাইলে রবীন্দ্রসঙ্গীত চালিয়েছে -“চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে।”- আমার বুকের ভেতরটা ভেঙে যায় ঠাকুর। তোমার পূজার ছলে তাই তোমাকে আর ভুলতে চাইনা। যারা তোমায় —
-“বোঝে কি নাই বোঝে-
থাকেনা তার খোঁজে,
বেদন তাদের ঠেকে গিয়ে
তোমার চরণতলে।”- আমার প্রণাম নিও গো ঠাকুর। চরণ ধরতে দিও সরিয়ে নিও না।
ইতি তোমার পুজারিনী ছন্দা।
*************************************************