স্পর্শ। পর্ব ২ ✒️✒️ সুদেষ্ণা সিনহা
স্পর্শ। (২)
সুদেষ্ণা সিনহা
চিৎকারে ,চেঁচামেচিতে একটা দুইটা করে পাড়ার লোক জড়ো হয়েছিল পুলুদের উঠোনে।মৌলবী সাহেব বিচার বসিয়েছিলেন।সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে তার আব্বা আম্মুকে তালাক দিয়ে আবার সাদি করবে। আর ছেলেকে নিয়ে আম্মুকে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
নানীমা বলে সেদিন আম্মু সকলের হাতে পায়ে ধরে বলেছিল,”আমার বাপের ঘর খুব গরীব।কে হামারে খাওআ,পরা দিব? বেটাকে লইয়্যা বাইর কইরা দিবেন না। আপনাদের পা ধরসি।” কারোর মন গলেনি।এক বস্ত্রে দেন মোহরের সামান্য কিছু ট্যাকা আর ছেলেকে নিয়ে আম্মুকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে আসতে হয়েছিল।
পুলুকে নিয়ে আম্মুর লড়াইয়ের জীবন।খুব ভাল করে পুলু সে কথা বুঝতে পারে । কি করবে সে।আম্মুর কাঁধে ভর করে তার সতের বছরের জীবন।সে শুধু বোঝে আম্মুই তার সব। এই পৃথিবীতে আম্মু ছাড়া তার কেই বা আছে!
খুব ভোর ভোর তার আম্মু বেরিয়ে যায়। ইস্টিশানে ট্রেন ধরে কোলকাতা পৌঁছায়। কোলকাতায় এক বয়স্ক মানুষের আয়ার কাজ করে আম্মু । বারো ঘন্টা ডিউটি,মাস শেষ হলে আট হাজার টাকা পায়। রাত আটটায় ভিউটি শেষ করে লোকাল ট্রেন ধরে আম্মু।বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক রাত্রি হয়ে যায়।
অবশ্য পুলুর কাছে রাত দিনের কিই বা ফারাক।চোখ খুললেই বা কি,না খুললেই বা কি।তার কাছে সবসময়ই তো রাতের অন্ধকারের মতো কালো ।
নানীমা বেশ বয়স্ক। তেমন করে কাজ করতে পারে না। তার মাথার কাছে কৌটোতে কৌটোতে মুড়ি,চিঁড়ে থাকে। খিদে পেলে সে আর নানী মিলে সেই সব খাবার খায়।
আম্মু সকালে উঠে উঠেই চুলায় তাদের জন্য ভাত বসিয়ে দেয়।ভাত হতে হতে উঠোন ঝাঁট দেওয়া, উঠোন নিকানো স্নান,কাপড় কাচা সারা।তারপর কাপড়-চোপড় পরে বেরিয়ে যায় আম্মু। যাবার আগে আম্মু তাকে সাবধান করে,”বাপ কারো সনে কতা কইবা না কিন্তু।”
আম্মুর জন্য দিন ভর অপেক্ষা করে পুলু। একেক বার ঘর বার করতে থাকে। বিকেল পাঁচটায় মসজিদে নামাজ পড়া হয়। পুলু ভাবে এখনো চার-পাঁচ ঘন্টা!তারপর আম্মু আসবে।
নানীমা বলে,”আম্মার লাইগ্যা এত ছটফট করোস ক্যান?আম্মু তো উইড়্যা আইতে পারবো না।”
আম্মু এসে কাপড় চোপড় কেচে,গা ধুয়ে একেবারে উঠে আসে পুলুর বিছানায়।
অন্ধকারে মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে দম বন্ধ করে।