# দিবস কেন যে এলো না # – পর্ব – ৩ কলমে – অরণ্যানী

# দিবস কেন যে এলো না # – পর্ব – ৩
কলমে – অরণ্যানী

শীত অনেকটা কমে এসেছে। তবুও গায়ে হালকা চাদরটা জড়ানো ছিল। এতো স্মৃতির আনা গোনায় দু’চোখের পাতায় একটা ঘোর এসেছিল নীলমের। হঠাৎই দেওয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে দেখল, বেলা সাড়ে বারোটা! খিদে পাচ্ছে। হ্যাঁ, এখনও খিদে পায় তবে এই বয়সে। দেরি না করে চোখে মুখে জলের ছিটে দিয়ে ঘুম ভাবটা কাটিয়ে উঠে চটপট ফ্রিজ থেকে একটা গাজর, কয়েকটা সিম, কুমড়ো আর পেঁপে নিয়ে রান্নাঘরে এসে ছুড়ি দিয়ে কিছু টুকরো করে নিল সবজি গুলোকে। চাল ধুয়ে ছোট্ট হাঁড়িতে ভাত চাপিয়ে তার মধ্যে সবজি গুলো ধুয়ে ছেড়ে দিয়ে একটু অপেক্ষা ফ্যান উথলানোর জন্য।

জাগ্রত অবস্থায় মানুষের মন সাধারণত নিষ্ক্রিয় থাকে না ধ্যানের চেষ্টা না করলে। একা থাকলে নিজের মনেই সে কিছু বলে চলে অবিরত। তেমনই রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ভাতের ফ্যান উথলানোর অপেক্ষা করতে করতে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠল নীলমের। দেশের বাড়ি থেকে খবর এসেছে ঠাকুমা অসুস্থ। বাবা, মা দু’জনেই গেছে জলপাইগুড়ি। বাড়িতে নীলম আর ওর এক ভাই ও এক বোনকে একা রেখে। সঙ্গে আছে বাড়ির একটি আশ্রিত ছেলে। নীলমের বয়স তখন তেরো। ছেলেটি অনেক দূর সম্পর্কের দাদা হয়। নীলমের থেকে বছর তিনেকের বড়। পাড়ার বড়দের বলা আছে কয়েকটা দিন একটু দেখে রাখতে বাড়ির ছেলে মেয়েগুলোকে। নীলমের বেশ মজা তখন। বাবা মা যতদিন না আসে ততদিন সে এক সুন্দর জীবন। নিজেই রান্নাবান্না করছে সংসারের কর্ত্রী হয়ে । সম্পর্কিত দাদা সুমন তাকে সাহায্য করছে। তাই নিয়ে বান্ধবীদের কানাঘুষো, মজা, এসব চলছে। কিন্তু ভাই বোন দুটোকে তো সামলে উঠতে পারছে না।
বিরক্ত হয়ে ভাইকে বকা দিতেই ভাই বোন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পার্কের পেছনে ঝোপঝাড়ে ছুট দিয়েছে। সুমনেরও ওই বাচ্চা সামলানোতে তেমন উৎসাহ নেই, যতটা আছে নীলমের সঙ্গে কাজে সহযোগিতা করতে। আর অন্যদিকে ফাঁকা বাড়ি পেয়ে নীলম তার প্রেমিক দাদা সাগরকে বাড়িতে নিয়ে আসছে আজকাল অঙ্ক করাতে। নীলম আর সুমন এক ক্লাসেই পড়ে। যদিও সুমন তিন বছরের বড় নীলমের থেকে। কিন্তু বাবা মা মারা যাওয়ায়, দারিদ্রের জন্য পড়াশোনা বন্ধ ছিল মধ্যে কিছু দিন। নীলমদের বাড়িতে এসে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়েছিল আবার। যদিও নীলমের বাবা বলেছিলেন, ওকে পরীক্ষা দিয়ে আর একটু উঁচু ক্লাসেই ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করতে, কিন্তু সুমন শুধু নীলমের সঙ্গে এক ক্লাসে পড়ার জন্যই সিক্সে ভর্তি হওয়া। এখন ওরা দু’জনেই ক্লাস এইট। দু’জনেই অঙ্ক করছে এ ক’দিন সাগরের কাছে। সাগর জানেও সুমন নীলমকে পছন্দ করে। কিন্তু মনে মনে হাসে। ভাবে, আমার মতো পড়াশোনায় ভালো, আগে চাকরি পাবে যে ছেলে, তাকে ডিঙিয়ে কি আর সুমন যেতে পারবে? নীলমই কি আর ওকে সেই পাত্তা দেবে? তাহলে তো ওদের প্রেম হয়ে যেতেই পারত। সেছাড়া জ্ঞাতিও তো বটে সম্পর্কে।

সাগর সায়েন্স নিয়ে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। সেদিন অঙ্ক শেষ হতেই ভাই বোনেদের খোঁজ পড়ল। নীলম সাগরকে অনুরোধের সুরে বলল,
—- সাগরদা, ভাই বোন গুলোকে একটু খুঁজে দাও না। নীলম, সাগর, সুমন, সবাই মিলে খুঁজতে খুঁজতে পেল ওদের ক্লাবের পেছনের আম বাগানে। লাবণ্যর দুটো বোনও জড়ো হয়ে শুকনো পাতা আর গাছের ডাল জোগাড় করে লাবণ্য দের বাড়ি থেকে চাল আর আলু এনে সেদ্ধ ভাতের ফিস্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে ওরা! কী সর্বনাশ! বড় কেউই নেই! পুড়ে মরবে নাকি শেষে? নীলমের ভাইয়ের জেদ। কিছুতেই দিদির হাতের রান্না খাব না। দিদি কেন মারতে গেছে। নীলম তো বেশ উত্তেজিত হয়ে দিদি গিরি ফলানোর জন্য শাসনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। অনেক বুঝিয়েও যখন ওদের বাড়ি আনা সম্ভব হলো না, তখন সাগর প্রস্তাব দিল, এখানেই সবাই মিলে আজ সেদ্ধ ভাতের ফিস্ট হয়ে যাক। বেলাও তখন হয়ে গেছে। লবণ্যও এসে জুটল ওদের সঙ্গে। বাড়িতে বলেই এলো। পাড়ার ছেলে মেয়েরা একদিন শখ করে রান্না খাওয়া করবে, এতে কারুর বাড়ি থেকে বাধাও দিল না।

হ্যাঁ, এমনই সেদ্ধ ভাতের ফিস্ট! সঙ্গে প্রেমিক। আবার একজন এক্সট্রা অনুরাগী! সে ফিস্টের আনন্দই আলাদা! ওদিকে ভাতের ফ্যান পড়ে গ্যাস ওভেন কখন অফ হয়ে গিয়ে গ্যাসের গন্ধ নাকে যেতেই নীলম বিরক্তির সঙ্গে গ্যাস অফ করে, রান্নাঘরের জানলা খুলে গ্যাসটা বেরিয়ে যেতে দিয়ে আবারও ওভেন জ্বালিয়ে হাঁড়ির ঢাকা খুলে দিয়ে ঘরে বসে ফোনটা খুলে ফেসবুকের পুরনো বন্ধুরা কেউ অনলাইন আছে কিনা দেখতে থাকল। তবে ঘড়ির দিকে দৃষ্টি রইল সতর্ক। ঠিক পঁচিশ মিনিট পরই ভাত নামাতে হবে।
(চলবে)

1 thought on “# দিবস কেন যে এলো না # – পর্ব – ৩ কলমে – অরণ্যানী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *